গত এক দশক ধরে মুসলিম উম্মাহ বিভিন্ন আধুনিক জটিলতার মুখোমুখি হয়ে আসছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সংকটগুলোর একটি হলো তরুণ প্রজন্মের বিভ্রান্তি ও মানসিক বিপথগামিতা। আর এই বিপর্যয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে তথাকথিত ‘ইসলামী খিলাফত’ নামে পরিচিত দাঈশ, যা বাস্তবিক অর্থে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এক সুচতুর নকশা। উম্মাহর সংকটকে কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের নোংরা রাজনৈতিক চালের মাধ্যমে মুসলিমদের নৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রতীকগুলোকে ধ্বংস করার পায়তারা করে যাচ্ছে।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দাঈশে থাকা তাদের প্রশিক্ষিত এজেন্টদের মাধ্যমে মুসলিম যুবসমাজকে ‘ইসলামী খিলাফত’-এর মিথ্যা মোহে আচ্ছন্ন করছে। এই ধোঁকা এমন এক আদর্শের মোড়কে আসে, যা ইসলাম ও মানবতার সার্বজনীন নীতিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তাদের চরমপন্থী কার্যক্রম— পবিত্র ধর্মীয় স্থানগুলোর ওপর আক্রমণ, নিরপরাধ মানুষের রক্তপাত এবং সাহসী মুজাহিদদের হত্যার নিষ্ঠুর এক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।
দাঈশ নিজেদের ইসলামের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা করে। অথচ তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ ইসলামের মূল দর্শন—মানবাধিকার, সহিষ্ণুতা এবং ন্যায়বিচারের মৌলিক নীতির সম্পূর্ণ বিপরীত। ইসলাম যে মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করে, তা আল্লাহ তাআলা কুরআনে ঘোষণা করেছেন:
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَم
“আমি তো আদম সন্তানকে সম্মানিত করেছি।”
ইসলামের দৃষ্টিতে মানবমর্যাদা একটি আল্লাহপ্রদত্ত অধিকার, যা ধর্ম-বর্ণের বিভাজন উপেক্ষা সর্বজনীন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় যে ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তার ভিত্তিতে মানবিক মর্যাদার সর্বোচ্চ সংরক্ষণও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এমনকি যুদ্ধক্ষেত্রেও ইসলাম মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে। কিন্তু দাঈশের মতো গোষ্ঠী, যারা নিজেদের ইসলামের ধ্বজাধারী বলে দাবি করে, তারা এই নীতিগুলোকে পায়ের তলায় চূর্ণ করেছে। নিরপরাধ মানুষ হত্যা, বন্দিদের নির্যাতন এবং নিজেরাই ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা তাদের চরমপন্থী মানসিকতার প্রমাণ।
যখন আফগান অঞ্চল উপনিবেশবাদী শক্তির আগ্রাসনের শিকার ছিল, যখন প্রিয় ভূমি আমেরিকা ও ন্যাটোর আধিপত্যের ভারে নতজানু ছিল, তখন আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দাঈশ নামে একটি গোষ্ঠীকে আফগানিস্তানে সক্রিয় করে দারিদ্র্যপীড়িত আফগান জনগণের দুর্বলতাকে তাদের ষড়যন্ত্রের অস্ত্র বানাতে চেয়েছিল।
কিন্তু আল্লাহর অনুগ্রহ এবং আফগান জনগণের আত্মত্যাগের ফলে দাঈশ এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকরা একের পর এক ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। আফগানিস্তানের মাটিতে তাদের লক্ষ্য শেকড় গাড়া তো দূরের কথা, নিজেদের অস্তিত্বই টিকিয়ে রাখতে পারেনি।
আজ মুসলিম উম্মাহর বিবেকবান তরুণরা বুঝে ফেলেছে যে, দাঈশ হলো এ যুগের খারিজি এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের একটি মোহজাল। তাদের চরমপন্থী মতবাদ এবং তাকফিরি আদর্শ ইসলামকে অপবিত্র করার এক পরিকল্পিত অপপ্রয়াস।
যখন আমাদের প্রিয় আফগানে শহীদদের রক্তস্নাত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে, শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং শরীয়াহ-ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা কার্যকর হয়েছে; তখন দায়িত্ব এসে পড়ে আলেম, চিন্তাবিদ, এবং সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ওপর। তাদের প্রয়োজন এই ষড়যন্ত্রের মূল উন্মোচন করা এবং মুসলিম তরুণদের এ ধরনের ষড়যন্ত্রের শিকার হওয়া থেকে রক্ষা করা।
তাদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং পশ্চিমা শক্তির ছায়া থেকে উম্মাহকে মুক্ত করার জন্য একটি সুসংহত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। দাঈশের বিরুদ্ধে লড়াই শুধু সামরিক পদক্ষেপের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই চলবে না; বরং তাদের চরমপন্থী আদর্শের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এটাই হবে ইসলাম ও মানবতার প্রকৃত বিজয়।