এটি শেষ যুগ (আখেরি যামানা), সময়কাল চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনই কিয়ামতের আলামত/শেষ যুগের ইঙ্গিত। এই লেখায় আমরা সেই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করছি যে, শেষ যামানার নিদর্শনসমূহ এবং বর্তমান সময়ে প্রকাশিত ফিতনাগুলো কী কী এবং এর মোকাবেলায় ইসলামী ব্যবস্থার (হুকুমাতের) দায়িত্ব কী হওয়া উচিত?
হাদিস সমূহে শেষ যামানার আলামতগুলো কেবল খবর দেওয়ার জন্য নয়, বরং সেগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তুতি গ্রহণের উদ্দেশ্যেও বর্ণনা করা হয়েছে, আর এটি নবী আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালামের পক্ষ থেকে মুমিনদের প্রতি এক মহান অনুগ্রহ।
ইসলামী সরকার যার উপর ইসলামী শাসন পরিচালনার ভার রয়েছে, তার উচিত সমসাময়িক ফিতনাগুলোর মোকাবেলায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। নিচে কয়েকটি ফিতনা ও সেই ব্যবস্থার (সরকারের) দায়িত্ব তুলে ধরা হলো:
১. হক ও বাতিলের মিশ্রণ (গণ্ডগোল হওয়া)
অনেক হাদিসে এসেছে যে, শেষ যামানায় ফিতনার প্রাচুর্য ঘটবে, এত ফিতনা হবে যে সত্য (হক) ও মিথ্যা (বাতিল) মিশে যাবে এবং মানুষ দীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।
ইসলামী ব্যবস্থার দায়িত্বসমূহ:
• ইসলামী ব্যবস্থার উচিত আকিদার বিশুদ্ধতা বজায় রাখার জন্য উলামা এবং আধ্যাত্মিক নেতাদের ভূমিকা আরও সক্রিয় ও শক্তিশালী করা।
• শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের পাঠ্যক্রমে সঠিক আকিদা এবং ফিতনা শনাক্তকরণের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
• ভ্রান্ত ফেরকা এবং পথভ্রষ্টকারী চিন্তাধারা চিহ্নিতকরণ ও প্রতিরোধের জন্য সুসংগঠিত কর্মসূচি আয়োজন করা উচিত।
২. মনস্তাত্ত্বিক (ফিকরি) ও প্রচারণামূলক ফিতনার ভিড়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খবর দিয়েছেন যে, শেষ যামানার বেশিরভাগ ফিতনা শোনা, দেখা এবং কথা বলার মাধ্যমে ছড়াবে।
ইসলামী ব্যবস্থার দায়িত্বসমূহ:
• মিডিয়া ও ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রণ ও নীতিকে কঠোর করা।
• অশ্লীলতা এবং মনস্তাত্ত্বিক বিকৃতি প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
• ইসলামী দাওয়াত এবং ইসলামী মিডিয়াকে শক্তিশালী করা, যাতে উম্মতের মন-মস্তিষ্ককে রক্ষা করা যায়।
৩. যুলুম ও খেয়ানতের ব্যাপকতা
হাদিসে এসেছে যে, শেষ যামানার অন্যতম নিদর্শন হলো যুলুম (অবিচার) সাধারণ হয়ে যাওয়া এবং আমানতের খেয়ানত (বিশ্বাসঘাতকতা) শুরু হওয়া।
ইসলামী ব্যবস্থার দায়িত্বসমূহ:
• বিচার বিভাগ ও বিচারিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে দুর্নীতিমুক্ত রাখা।
• প্রতিটি পদের জন্য আমানতদারী এবং যোগ্যতার শর্তকে কার্যত প্রয়োগ করা।
• স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এবং সেগুলোর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
৪. কাফেরদের সাথে বড় যুদ্ধ এবং ইয়াহুদিদের সাথে মোকাবিলা
হাদিসে শেষ যামানার কিছু নিদর্শন হিসেবে কাফেরদের সাথে বড় বড় যুদ্ধ, ইয়াহুদিদের সাথে মোকাবিলা এবং বাতিল শক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়া উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসলামী ব্যবস্থার দায়িত্বসমূহ:
• ইসলামী সেনাবাহিনী, নিরাপত্তা বাহিনী এবং জনগণের প্রতিরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ ও সামরিক সরঞ্জামকে শক্তিশালী করা।
• জনগণের মধ্যে ত্যাগ ও কোরবানির চেতনাকে জাগিয়ে রাখা এবং শাহাদাতের (শহীদ হওয়ার) উদ্দীপনা সৃষ্টি করা।
• সাধারণ সামরিক প্রস্তুতি (নফীর আম) এর জন্য মাঠ ও মানসিকতা তৈরি করা।
৫. অর্থনৈতিক অবরোধ ও দুর্ভিক্ষের আলোচনা
হাদিসে শেষ যামানার ফিতনাগুলোর মধ্যে কাফেরদের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ এবং দুর্ভিক্ষের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসলামী ব্যবস্থার দায়িত্বসমূহ:
• স্থানীয় উৎপাদনকে শক্তিশালী করা।
• বাহ্যিক সাহায্যের পরিবর্তে অভ্যন্তরীণ সম্পদের ওপর নির্ভর করা।
• ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এবং এর বাস্তবায়নের জন্য একটি সুসংগঠিত ও আধুনিক প্রক্রিয়া তৈরি করা।
৬. অযোগ্য মুফতিদের সংখ্যাবৃদ্ধি
হাদিসে এসেছে যে, শেষ যামানায় মানুষ আলেমদের (গবেষক ও বিশেষজ্ঞ) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং জাহেলদের (মূর্খদের) কাছ থেকে ফাতাওয়া নেবে।
ইসলামী ব্যবস্থার দায়িত্বসমূহ:
• যোগ্য ও আন্তরিক আলেমদের সমর্থন করা এবং তাদের মতামত শোনার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
• দ্বীনী পরামর্শ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা, সেগুলোর অর্থনৈতিক সমর্থন, ব্যবস্থাপনা এবং সক্রিয়তা বজায় রাখা।
• অযোগ্য মুফতি ও আলেমদের উপর নিয়ন্ত্রণ এবং যোগ্য ও বিশিষ্ট আলেমদের পরিচিতি (শহরত) এর জন্য কার্যকর ও বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা তৈরি করা।
আমরা এই কয়েকটি ফিতনার উল্লেখেই ক্ষান্ত থাকছি, কারণ এগুলো বর্তমানে সাধারণ, ব্যাপক, সম্মিলিত এবং শাসনক্ষমতার স্তর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। রব্বুল ‘ইবাদ (বান্দাদের প্রতিপালক) তাঁর রহমতে সমস্ত মুসলিম উম্মাহকে সব ধরনের ফিতনা থেকে রক্ষা করুন।




















