৩১ আগস্ট ২০২১—সেই দিন, যেদিন শেষ মার্কিনী সৈন্য আফগানিস্তান ত্যাগ করেছিল। এটি নিছক কোনো সামরিক প্রস্থান ছিল না; বরং ছিল দুই দশকের দখলদারিত্বের সমাপ্তি, দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান এবং আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের এক নবযুগের সূচনা। ওই দিনই ইসলামী ইমারত আবারও পূর্ণতভাবে দেশটির ক্ষমতা গ্রহণ করে।
দখলদারিত্বের অবসান ও স্বাধীনতার প্রত্যাবর্তন
২০০১ সালের অক্টোবরে আক্রমণের পর, আন্তর্জাতিক জোট আফগান ভূমি দখল করে ইসলামী শাসনব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল। তারা এখানে তাদের পশ্চিমা ক্রীড়নক সরকার ও নিজস্ব চিন্তাধারা চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। এই প্রয়াস অব্যাহত ছিল পূর্ণ বিশ বছর, যা লক্ষ লক্ষ আফগানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল; হাজারো তরুণ, প্রবীণ ও শিশু শহীদ, আহত ও বিকলাঙ্গ হয়েছিল; এবং দেশের অবকাঠামো, অর্থনীতি ও নিরাপত্তাকে মূলে নাড়িয়ে দিয়েছিল।
আমেরিকান সেনাদের প্রস্থান আফগানিস্তানের জন্য ছিল প্রকৃত মুক্তি, কারণ আজ আর কোনো বিদেশি সেনা এ ভূমিতে নেই এবং পূর্ণ কর্তৃত্ব ইসলামী ইমারতের হাতে ন্যস্ত হয়েছে। তালিবান, যাদেরকে বছরের পর বছর ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল এবং যাদের বিরুদ্ধে হালকা-ভারী সব ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল, তারা প্রমাণ করেছে যে তারাই এ দেশের প্রকৃত সন্তান, যারা আল্লাহর পথে ও দখলদারিত্বের অবসানে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছে। ইলাহি সহায়তা তাদের সঙ্গে ছিল, এবং আজ তারা ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে পবিত্র শরিয়তী ব্যবস্থা চালু করেছে। দখলদার আমেরিকা আফগানিস্তানে কেবল মানবমর্যাদা পদদলিত করেনি, বরং সর্বতোভাবে দাঈশ প্রকল্পকেও অর্থায়ন ও কার্যকর করার চেষ্টা করেছে। দাঈশি খারেজিরা, যারা মূলত পশ্চিমা ও কুফরি ষড়যন্ত্রের ফসল এবং যারা সর্বদা ইসলামের প্রকৃত সৈনিক ও মুজাহিদদের জিহাদের পথে অন্তরায় হয়ে এসেছে, আফগানিস্তানেও একই ভূমিকা পালন করেছে এবং ইসলামী ইমারতের মুজাহিদদের সামনে অন্তরায় ও চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
মার্কিন ও পশ্চিমা সহযোগিতার পূর্ণ সুবিধাভোগী এই দাঈশ গোষ্ঠী, ইসলামী ইমারতের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও মার্কিন প্রত্যাহারের পর ভয়াবহ আঘাতের সম্মুখীন হয়, এবং তাদের কর্মকাণ্ড প্রায় স্তব্ধ হয়ে যায়। ইসলামী ইমারতের শাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বে দাঈশকে প্রতিনিয়ত সরবরাহ, অর্থায়ন ও বিদেশি সহযোগিতা দেওয়া হতো। এ গোষ্ঠীর যোদ্ধাদের হেলিকপ্টারে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নেওয়া হতো, নানা ধরনের অস্ত্র ও নগদ অর্থ প্রদান করা হতো, তাদের জন্য মাদরাসা, মসজিদ, বিশ্ববিদ্যালয় ও জনপদে প্রচারণা ও কার্যক্রমের অবাধ সুযোগ রাখা হতো, এমনকি গণমাধ্যম তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল—যা কিছু তারা চাইত, বিনা বাধায় সম্পন্ন করত।
দাঈশ পশ্চিমা সহযোগিতার শক্ত ভরকেন্দ্র হয়ে এই দেশে এমন ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছে, যা হয়তো বহু কাফেরও করতে সাহস করত না। শিশুদের দোলনায় ছুরি দিয়ে জবাই করা হয়েছিল; গোত্রের নেতাদের ও সাদা দাড়িওয়ালা প্রবীণদের জনসম্মুখে বিস্ফোরকে বসিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল; তরুণদের মুণ্ডচ্ছেদ করে বাজারে প্রদর্শন করা হয়েছিল; নারীদের যৌনদাসত্বে আবদ্ধ করা হয়েছিল; মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করা হয়েছিল; বিয়ের আনন্দকে শোক ও মাতমে রূপান্তরিত করা হয়েছিল; এমন কোনো ঘৃণ্য ও নোংরা কার্যকলাপ নেই, যা দাঈশ সংগঠিত করেনি।
কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, ইসলামী ইমারতের পুনঃপ্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে বিশ বছরের দখলদারিত্বের অবসান ঘটে এবং দাঈশের মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। বিশেষত ৩১ আগস্ট ২০২১-এ শেষ মার্কিনী সেনার প্রস্থানের পর। দাঈশ একদিকে তাদের প্রকৃত সহযোগী ও সরবরাহকারীকে হারায়; যে সহযোগী সর্বদা ইসলামী ইমারতের চাপের মুহূর্তে কয়েক মিনিটের মধ্যে বিমান ও সেনা পাঠিয়ে সাহায্য করত। অন্যদিকে ইসলামী ইমারত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে তাদের শিকড় উপড়ে ফেলে এবং কার্যক্রম স্তব্ধ করে দেয়। কারণ ইসলামী ইমারত সত্যের পথে অগ্রসরমান, জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি এবং জনগণের পূর্ণ সমর্থন ও ইলাহি সহায়তায় সমৃদ্ধ, তাই দৃঢ় পদক্ষেপে তারা স্বল্প সময়েই দাঈশের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যদের নির্মূল করেছে, তাদের অর্থের উৎস ছিন্ন করেছে, নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করেছে, প্রচারণার পথ অচল করেছে, এবং শেষ পর্যন্ত এমন অবস্থা তৈরি করেছে যে, দাঈশ আজ কেবল নামমাত্র এক অস্তিত্ব হয়ে আছে।
পরিশেষে বলা যায় ইসলামী ইমারতের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, পশ্চিমা দখলদারিত্বের সমাপ্তি, ইসলামী ইমারতের দৃঢ় পদক্ষেপ, ইলাহি সহায়তা ও জনগণের সমর্থন—এসবই সেই কারণ, যা দাঈশের কার্যকলাপ ও প্রভাবের ইতি টেনেছে এবং দীর্ঘদিন পর আফগান ভূমিতে পূর্ণ শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করেছে।