এই আক্রমণের পরিণতি গভীরভাবে বোঝা প্রয়োজন, কেবল আফগান জনগণের জন্য নয়, বরং পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর জন্যও। ভবিষ্যতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা অপরিহার্য।
১. সংক্ষিপ্ত ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন জনসাধারণের বিরোধ এবং পিপল’স ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অভ্যন্তরীণ সংঘাত নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে আফগানিস্তানে তাদের সেনা প্রেরণ করে। তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার করা এবং আফগানিস্তানকে কৌশলগত কাজে ব্যবহার করা। তবে, এই দখলদারিত্বের পরিণতি আফগানিস্তানকে বিধ্বস্ত স্তুপে পরিণত করে।
২. আফগান জনগণের পবিত্র জিহাদি প্রতিরোধ
নিজস্ব ইসলামী, জাতীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ভিত্তিতে আফগান জনগণ সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পবিত্র যুদ্ধ (জিহাদ) শুরু করে। এই জিহাদ কেবল আফগানিস্তানের স্বাধীনতার প্রতীক নয়, বরং এটি সমগ্র বিশ্বের নিপীড়িত জাতিসমূহের মুক্তিরও প্রতীক হয়ে ওঠে।
৩. জিহাদের লক্ষ্যসমূহ
• সার্বভৌমত্ব রক্ষা
• সোভিয়েত উপনিবেশের অবসান
• ইসলামী শাসনব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা
৪. পরিণতি
আফগান মুজাহিদীন সোভিয়েত সামরিক শক্তিকে পরাজিত করতে সমর্থ হয়, যা শেষ পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫. একটি সর্বজনীন শিক্ষা
সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগানিস্তান আক্রমণের ইতিহাস থেকে পরিষ্কার হয় যে, কোনো পরাশক্তি আফগানিস্তানকে বশ্যতা স্বীকার করাতে সক্ষম নয়। যে জাতি বা শক্তি আফগানিস্তানকে দুর্বল করার চেষ্টা করবে, তার পরিণতি হবে সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো।
৬. পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোর ভূমিকা
আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোর, বিশেষত যারা সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত এবং আফগান বিষয়াবলীতে শত্রুভাবাপন্ন হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকা উচিত।
বিশেষ করে পাকিস্তানের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করা আবশ্যক, কারণ:
পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী এবং কিছু রাজনীতিবিদ বারবার আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপ করেছে।
পাকিস্তান নিজ দেশের দুর্বল নীতির আড়ালে আফগানিস্তানকে দোষারোপ করে।
৭. সাম্প্রতিক ঘটনা – পাকিস্তানি সামরিক বর্বরতা
ডিসেম্বর ২৪ তারিখে (যা সোভিয়েত আক্রমণের শুরুর দিন) পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পাক্তিকা প্রদেশের বারমাল জেলায় সাধারণ নাগরিকদের ওপর নিষ্ঠুর বোমাবর্ষণ চালায়। এই বর্বরতার ফলে ৫০ জন নিরীহ শরণার্থী ও আফগান শহীদ হন, যার মধ্যে ২৭ জন নারী ও শিশু। যা ইসলামী, নৈতিক এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড লঙ্ঘন করে।
৮. আফগানিস্তানের অটল সংকল্প
ইতিহাস জুড়ে আফগান জনগণ এমন শত্রুতা ও বর্বরতার সম্মুখীন হয়েছে, তবে কখনোই তাদের জাতীয় ও ইসলামী মূল্যবোধ পরিত্যাগ করেনি। তারা সোভিয়েত আক্রমণকে পরাজিত করেছে এবং বর্তমান শত্রুদের যেকোনো ষড়যন্ত্রকেও পরাস্ত করবে।
৯. সমাপনী বার্তা
শত্রুভাবাপন্ন জাতিগুলোর, বিশেষত পাকিস্তানের সোভিয়েত ইউনিয়নের পরিণতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। আফগানিস্তান হলো মুসলিম উম্মাহর হৃদস্পন্দন, এবং এর প্রতি শত্রুতা মানে সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি বৈরিতা।
আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার পরিবর্তে এসব জাতির উচিত আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য কাজ করা এবং নিজেদের জনগণের উন্নতির প্রতি মনোযোগ দেওয়া। আফগান জনগণ তাদের স্বাধীনতা, মর্যাদা এবং ইসলামি শাসনব্যবস্থার জন্য অটল রয়েছে, এবং কোনো পরাশক্তিই তাদের সংকল্পকে নষ্ট করতে পারবে না।