যখন বিশ্বের ক্ষমতাকেন্দ্রগুলিতে যালিমদের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হয়, যখন মাযলুমদের আর্তচিৎকার বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টির আড়ালে ঠেলে দেওয়া হয়, যখন চারপাশে নীরবতা ও নিষ্ঠুর উদাসীনতা পাহারায় দাঁড়িয়ে থাকে— তখনো গাযযার ভূমিতে এক জাতি বুক চিতিয়ে ঘোষণা করে,
”حسبنا الله ونعم الوکیل!“
(আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনিই শ্রেষ্ঠ কর্মনির্বাহকারী।)
গাযযা— এক রক্তস্নাত জনপদ;
যেখানে এই মুহূর্তে হাজার হাজার নিষ্পাপ শিশু মা-বাবার কোল থেকে ছিটকে পড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, যেখানে প্রতিদিন ধসে পড়া ভবনের নিচে নিষ্পাপ প্রাণসমূহ স্তব্ধ হয়ে যায় চিরতরে, সেখানে মায়েরা তাঁদের কলিজার টুকরো সন্তানকে মৃত্তিকায় সমর্পণ করে, ধৈর্য ও অবিচলতার চাদর মুড়িয়ে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকেন।
গাযযার গলিপথে নেই জল, নেই বিদ্যুৎ, নেই ওষুধ। রোগাক্রান্ত শিশুরা কষ্টে ছটফট করছে।
বিশ্বজাতির বিবেক নিস্তেজ হয়ে গেছে। আত্মমর্যাদা দাবি করা তথাকথিত সভ্য বিশ্বমানচিত্রের রাজধানীগুলোতে মানবাধিকারের উচ্চকণ্ঠ শ্লোগান তো উচ্চারিত হয়, কিন্তু ফিলিস্তিন ও গাযযার শিশু, বৃদ্ধ আর নারীদের পক্ষে একটি কণ্ঠও জেগে ওঠে না। না কোনো কূটনৈতিক প্রয়াস, না কোনো মানবিক সহায়তা; আছে কেবল ধ্বংসযজ্ঞ, রক্তপাত আর বিপর্যয়।
আমরা গাযযার সঙ্গে আছি! কারণ, সেখানকার মানুষ শত নিপীড়নের মধ্যেও আজো যালিমের সামনে মাথা নত করেনি। গাযযার মসজিদসমূহ থেকে ভেসে আসা আজানের ধ্বনি সাক্ষ্য দেয়— ঈমানদাররা নিপীড়নের ঝড়েও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে।
সেখানকার শিশুরা পাথর হাতে ট্যাংকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, সেখানকার মায়েরা তাঁদের সন্তানকে শাহাদাতের শুভবার্তা দেন, সেখানকার তরুণেরা ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে উচ্চারণ করে— “লাব্বাইকা ইয়া আকসা!”
نحن مع غزة!
আমরা গাযযার পাশে আছি,
কারণ গাযযার বর্তমান বাস্তবতা আমাদের শিখায়— যুলুম চিরস্থায়ী হয় না। যত অস্ত্র, যত শক্তি ও ঔদ্ধত্যই থাকুক না কেন, একদিন সত্যই বিজয়ী হয়।
আমরা গাযযার পাশে আছি,
কারণ আমরা দেখছি, কীভাবে একটি পুরো শহরকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে, কীভাবে পানি ও খাদ্য বন্ধ করে লাখো মানুষের ওপর একসঙ্গে শাস্তি চাপানো হয়েছে, কীভাবে প্রতিদিন নৃশংস বোমাবর্ষণের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বসতিগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হচ্ছে।
আমরা গাযযার পাশে আছি…
কারণ উম্মাহ একটি দেহ, আর তার একটি অঙ্গ আজ কাঁদছে। নীরবতা এক অপরাধ,
আর নিপীড়িতের পক্ষে দাঁড়ানোই ঈমানের নিদর্শন।
আমরা গাযযার পাশে আছি…
কারণ নির্যাতিতের পাশে দাঁড়ানো আমাদের ধর্মীয় ও নৈতিক কর্তব্য। কারণ বাইতুল মুকাদ্দাসের পবিত্রতা আমাদের আহ্বান জানাচ্ছে। কারণ অন্ধকারতম নিপীড়নের মধ্যেও গাযযার মানুষের ধৈর্য ও আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল আমাদের অন্তর কাঁপিয়ে দিচ্ছে।
আমাদের প্রতিপালক বলেন:
”وَلَا تَحْسَبَنَّ اللّٰهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ“
(আর তুমি কখনো ভেবো না যে, আল্লাহ যালিমদের কাজকর্ম সম্পর্কে অজ্ঞাত আছেন।)
আমরা গাযযার সঙ্গে আছি!
আমাদের দুয়ায়, আমাদের লেখনীতে, আমাদের সামর্থ্যে, আর আমাদের কণ্ঠে। আমরা নীরব থাকব না— কারণ গাজার প্রতিটি নিষ্পাপ শহীদ আমাদের জাগিয়ে দিচ্ছেন।
এ যুদ্ধ মানবতার অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ, আর এই যুদ্ধে আমরা নিপীড়িতদের পাশে।
نحن مع غزة، نحن مع الحق، نحن مع المظلومین!
আমরা গাযযার পাশে, আমরা সত্যের পক্ষে, আমরা নিপীড়িতদের সঙ্গে!