আইএস একটি মহামারির নাম | একবিংশ পর্ব

✍🏻 আবু হাজার আল কুর্দি

২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যখন মসুল ছিল দাঈশের দখলে, সে সময় এই শহর এবং এর বাসিন্দাদের ওপর ব্যাপক আকারে বিভীষিকাময় অপরাধ সংঘটিত হয়। নিচে সে সমস্ত অপরাধের কয়েকটির বিবরণ তুলে ধরা হলো:

১. গণহত্যা ও টার্গেট কিলিং

২০১৪ সালের ১০ জুন দাঈশ মসুলের উপকণ্ঠে অবস্থিত বাদুশ কারাগারে হামলা চালায় এবং ৬৭০ জনেরও বেশি বন্দিকে গণহারে হত্যা করে, এবং তাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন সুন্নি মুসলিম। গণমাধ্যমে যে সংখ্যা প্রকাশিত হয়, তা ছিল কেবল দৃশ্যমান একটি চিত্র, কিন্তু যেসব হত্যা ও অপরাধ গণমাধ্যমের চোখের আড়ালে থেকে যায়, তার পরিমাণ ছিল এর বহু গুণ বেশি।

২. ইয়াজিদিদের জাতিগত নিধন

২০১৪ সালের গ্রীষ্মকালে দাঈশ সিঞ্জার ও ইয়াজিদি অধ্যুষিত অন্যান্য অঞ্চলে ব্যাপক হামলা চালায়। হাজার হাজার ইয়াজিদি পুরুষকে হত্যা করা হয় এবং পয়ত্রিশশোরও বেশি নারী ও শিশুকে দাঈশ অপহরণ করে নিয়ে যায়।

৩. ঐতিহাসিক নিদর্শন ধ্বংস

দাঈশ মসুলের বহু ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংস করে দেয়, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:

১: নবী হযরত ইউনুস (আলাইহিস সালাম) জামে মসজিদ, যা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়।

২: মসুল জাদুঘর ও প্রাচীন ভাস্কর্যসমূহ, যেগুলোর কিছু ছিল হাজার হাজার বছরের পুরনো—সবই ভেঙে ফেলা হয়।

৩: ঐতিহাসিক গ্রন্থাগারসমূহ, যেখানে দুর্লভ পাণ্ডুলিপি ও হস্তলিখিত কিতাব ছিল, সেগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়।

ইউনেস্কো এসব ধ্বংসযজ্ঞের নিন্দা জানায় এবং এটিকে মানব সভ্যতার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে এক গুরুতর অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করে।

৪. নারীদের দাস বানানো, নির্যাতন ও যৌন নিপীড়ন

দাঈশ ইয়াজিদি নারী ও কিশোরীদের অপহরণ করে অমানবিক অত্যাচার করে। অসংখ্য রিপোর্টে দেখা যায়, তাদের ওপর ধারাবাহিকভাবে যৌন নিপীড়ন চালানো হয়েছে এবং দাস-বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।

৫. শরিয়াহ প্রয়োগের নামে অন্যান্য বহু অপরাধ

দাঈশ শরিয়াহ প্রতিষ্ঠার নামে সাধারণ নাগরিকদের ওপর অগণিত অত্যাচার চালায় এবং শত শত নির্দোষ মানুষকে বলি দেয়।

মসুল দখলের পর দাঈশের এসব অপরাধ ও নৃশংসতা যে ধ্বংস ও বিভীষিকার জন্ম দেয়, তা কল্পনারও অতীত। এ গোষ্ঠীর জুলুম ও নিপীড়নের কালো ছায়া নিরপরাধ মানুষদের মাথার ওপর দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলে ছিল।

দাঈশ নিজেদেরকে নিপীড়িতদের মুক্তিদাতা হিসেবে উপস্থাপন করেছিল, কিন্তু খুব শীঘ্রই তাদের প্রকৃত রূপ উন্মোচিত হয়ে পড়ে। আসল চেহারা প্রকাশিত হয়ে পড়ার পর তাদের ভিত্তিমূল কেঁপে ওঠে, গোটা কাঠামো ভেঙে পড়ে, এবং একসময় তারা পতনের গহ্বরে নিপতিত হয়।

Exit mobile version