দিয়ালা প্রদেশে দাঈশের অপরাধসমূহ
পূর্ববর্তী পর্বগুলোতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা হয়েছিল, যেখানে যেখানে ইবনে মুলজিমের অনুসারীদের পদচিহ্ন পড়েছে, সেখানে অপরাধ ও আহলুস সুন্নাহকে হত্যা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকেনি। এই কলঙ্কই এই ভ্রান্ত ও অপবিত্র ফিরকার কপালে আঁকা রয়েছে।
সেসব অঞ্চলের একটি ছিল ইরাকের দিয়ালা প্রদেশ, যেখানে দাঈশ প্রবেশ করে অগণিত অপরাধ সংঘটিত করে। যদিও দাঈশ এ প্রদেশের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়নি, তথাপি অপরাধ সংঘটন থেকে তারা বিরত থাকেনি। এ অধ্যায়ে আমরা প্রথমে দিয়ালার ভৌগোলিক অবস্থান বর্ণনা করব, এরপর সেখানে দাঈশের সংঘটিত ঘটনাবলি আলোচনা করব।
দিয়ালার ভৌগোলিক অবস্থান
স্থানিক অবস্থান: দিয়ালা ইরাকের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তবর্তী প্রদেশ। এর পশ্চিমে বাগদাদ, উত্তরে সালাহউদ্দীন, উত্তর-পশ্চিমে কারকুক, উত্তর-পূর্বে নিনওয়া, দক্ষিণে ওয়াসিত এবং পূর্বে ইরানের সীমান্ত রয়েছে।
প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য: এ প্রদেশের উত্তর ও পূর্বে হামরীন পর্বতশ্রেণি বিস্তৃত। রয়েছে উর্বর সমভূমি, বিস্তৃত বাগান, খাল-বিল ও কৃষিজমি। উত্তর ও পূর্বের পার্বত্য সীমান্তাঞ্চল এবং উচ্চভূমি গোপন চলাফেরা ও আকস্মিক আক্রমণের জন্য স্বাভাবিক সুরক্ষা প্রদান করে।
জাতিগত ও ধর্মীয় বৈচিত্র্য: দিয়ালার জনসংখ্যা মিশ্রিত—শিয়া, সুন্নি, কুর্দ ও তুর্কমান। খানাকিন ও জালাওলার মতো অঞ্চলে কুর্দরা বসবাস করে, কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণাঞ্চলে সুন্নিরা, আর অন্যান্য এলাকায় শিয়ারা। এই জাতিগত ও ধর্মীয় বিন্যাস দিয়ালাকে সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে, আর দাঈশ এর সুযোগ নিয়েছে।
কৌশলগত গুরুত্ব: দিয়ালা বাগদাদের নিকটে অবস্থিত এবং বাগদাদ থেকে উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশসমূহ ও ইরানের দিকে যাওয়া প্রধান সড়কগুলো এখান দিয়ে অতিক্রম করেছে। এ বৈশিষ্ট্য প্রদেশটিকে কৌশলগত ও নিরাপত্তার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
দাঈশ কীভাবে দিয়ালার কিছু এলাকায় নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করেছিল?
দাঈশ একাধিক ধাপে দিয়ালায় প্রবেশ করে কিছু অঞ্চলে দখল নেয়; তবে পরবর্তীতে ইরাকি সেনাবাহিনী ও অন্যান্য দল তাদের লড়াইয়ের মাধ্যমে প্রতিহত করে।
প্রধান ধাপসমূহ নিম্নরূপ:
• ২০১৪ সালের শুরুর মাসগুলোতে দাঈশ উত্তর ও মধ্য দিয়ালায় আক্রমণ চালায়। তারা নদীর তীরবর্তী ও বাগানবেষ্টিত অঞ্চল দখল করে এবং বুহরিয (বাকুবার নিকটবর্তী) আক্রমণ করে। কয়েকদিন ধরে তারা কিছু অংশে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। জবাবে, ইরাকি সরকারি বাহিনী ও ইরানের সমর্থিত রাফেযি দলগুলো অভিযান শুরু করে, যাতে দাঈশকে বাগদাদ ও কারকুকের দিকে অগ্রসর হতে বাধা দেওয়া যায়।
• ২০১৪ সালের মাঝামাঝি ও শেষ প্রান্তিকে দাঈশ জালাওলা ও আস-সাআদিয়্যাহর মতো শহরে পূর্ণ বা আংশিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। মুকদাদিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় বাগানগুলোও তারা কৌশলগত ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে। কিন্তু ২০১৪ সালের নভেম্বরে কুর্দ পেশমারগা বাহিনী, ইরাকি সেনা ও শিয়া দলগুলোর যৌথ অভিযানের মাধ্যমে এসব এলাকা পুনরুদ্ধার করা হয়। জালাওলা ও আস-সাআদিয়্যাহর মতো শহর দাঈশের কবল থেকে মুক্ত হয়।