আইএসআইএস-খাওয়ারিজদের সৃষ্টির ইতিহাস এবং মূল উদ্দেশ্য ছিল ইসলামী শরীয়াহ, দীনি মূল্যবোধ, মুসলিম নেতা এবং সত্যিকারের ইসলামী ব্যবস্থার সুনামকে কলঙ্কিত করা। তাদের পশ্চিমা প্রভুদের দ্বারা নির্ধারিত প্রতিটি প্রকল্পের জন্য এই লক্ষ্যগুলি স্থির থাকে। কখনো কখনো অঞ্চল, অবস্থা এবং উপলব্ধ সংস্থানের উপর নির্ভর করে দৃষ্টিভঙ্গিতে সামান্য পরিবর্তন আনা হয়।
তাদের কর্ম ধারাবাহিকভাবে একটি বিচ্যুত পথ অনুসরণ করে, যা আল্লাহর রহমতে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়। বিশেষ করে আফগানিস্তানে তাদের সমস্ত অশুভ উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলিকে চূর্ণবিচূর্ণ করা হয়েছে এবং তারা তাদের কর্মের ফল ভোগ করছে।
এর সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো ইসলামী ইমারাতের নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক ঘোর এবং কুনারে তাদের ঘাঁটি ধ্বংস ও উন্মুক্ত করা। আমরা ইতিমধ্যে উল্লেখ করেছি যে দাঈশ তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য যেকোনো কিছু করতে রাজি। নিম্নে তাদের অর্থায়নের উৎস সম্পর্কে আলোকপাত করা হল:
ক. বিদেশী উৎস
আইএসআইএসের প্রাথমিক তহবিল উৎস হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে তাদের স্রষ্টা বা পশ্চিমা সমর্থকদের থেকে অনুদান; বিশেষ করে ক্রুসেডার দেশগুলি। এই তহবিল সরকারী এবং বেসরকারী উভয় চ্যানেল থেকে আসে, পশ্চিমা নীতির অংশ হিসাবে ইসলামী দেশগুলিকে দুর্বল করা এবং ইসলামের অবমাননা করার লক্ষ্যে।
এরজন্য ক্রুসেডেররা সাধারণত ব্ল্যাংক চেক প্রদান করে। যদি নীতিতে পরিবর্তন আসে তাহলে প্রস্তাবিত প্রকল্পের খরচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান এবং যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা এবং এজেন্টদের দ্বারা প্রদান করা হয়। দখলের সময় আইএসআইএস তাদের কাছ থেকে সরাসরি সামরিক ও লজিস্টিক সহায়তাও পেয়েছিল, তবে আফগানিস্তানে নিহত খারিজিদের অর্থায়ন ও স্থানান্তরের উৎস এখনো পর্যন্ত তাজিকিস্তান এবং পাকিস্তানে বলে প্রমাণিত হয়েছে।
খ. স্থানীয় সূত্র
আইএসআইএস-খাওয়ারিজরা তাদের পৃষ্ঠপোষকদের পক্ষ থেকে প্রদত্ত তহবিল দিয়ে প্রতারণা, দুর্নীতি এবং ব্যক্তিগত ব্যবসাও করে। তাদের অন্যান্য স্থানীয় উৎসগুলির মধ্যে রয়েছে:
১. হাইওয়ে ডাকাতি
যদিও আফগানিস্তানে খাওয়ারিজদের পা রাখার মতো জায়গাও নেই। তারা কখনো মাথা তুললে তা ইমারাত নিজ পা দ্বারা পিষ্ট করে ফেলে। কিন্তু ইরাক ও অন্যান্য অঞ্চলে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, দাঈশ সুযোগ পেলেই কোনো না কোনো অজুহাতে মহাসড়ক দখল করে যাত্রীদের অর্থ ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করেছে।
২. ঐতিহাসিক নিদর্শন চুরি
অনেক ইসলামী দেশে উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন ও ঐতিহ্য রয়েছে। আইএসআইএস-খাওয়ারিজরা বারবার গোপনে বা প্রকাশ্যে এই নিদর্শনগুলি চুরি করেছে। অর্থায়নের উদ্দেশ্যে তাদের প্রভুদের কাছে বা কালোবাজারে বিক্রি করেছে।
৩. অপহরণ ও মানব পাচার
আইএসআইএস-খাওয়ারিজদের জন্য অপহরণ একটি স্বাভাবিক কর্ম। তারা শিশু, নারী এবং বৃদ্ধদেরও ছাড় দেয়নি। অপহরণ করে তাদের পরিবারের কাছ থেকে বড় মুক্তিপণ দাবি করেছে এবং প্রায়ই মুক্তিপণ পাওয়ার পরেও জিম্মিদের হত্যা করেছে। তারা জোরপূর্বক শিশুদেরকেও তাদের ঘৃণ্য অপরাধে নিয়োগ করে।
৪. চাঁদাবাজি
বিভিন্ন সময়ে আইএসআইএস-খাওয়ারিজ ধনী ব্যক্তি, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেছে। আর যারা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল তাদেরকে কারারুদ্ধ ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে, তারপর হয় তাদের হত্যা করা হয়েছে বা গুম করা হয়েছে।
৫. সশস্ত্র ডাকাতি
সশস্ত্র ডাকাতি হলো আইএসআইএস-খাওয়ারিজদের একটি নিত্যনৈমিত্তিক রুটিন। বাড়ি, দোকান বা কর্মস্থল যেখানেই তারা টাকা দেখতে পায়, তারা তাদের ভাড়াটে ঘাতকদের ব্যবহার করে সেখান থেকে টাকা চুরি করে আস্তানায় নিয়ে যায়।
৬. খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন
খনিজ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ— যা আইন অনুসারে বাইতুল মালে সংরক্ষিত জনসাধারণের সম্পত্তি অর্থাৎ জাতীয় সম্পদ হিসাবে বিবেচিত হয়। প্রায়শই আইএসআইএস দ্বারা অভিযান চালিয়ে সেগুলো লুটপাট ও কালোবাজারে বিক্রি করা হতো।
৭. “গনিমত” হিসেবে জনসম্পদ লুণ্ঠন
আইএসআইএস তাদের অবৈধভাবে দখলকৃত গ্রাম, অঞ্চল এবং এলাকা লুণ্ঠনকে পবিত্র সংগ্রাম বলে আখ্যায়িত করে। অতীতে তারা লোকেদের বাড়িঘর, কর্মক্ষেত্র এবং পকেট থেকে অর্থ এবং মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে সেগুলোকে “গনিমত” হিসাবে উল্লেখ করেছে। অন্য মুসলিমদের সম্পদ তাদের জন্য হালাল বলে ঘোষণা করেছে।