তালিবুল ইলম সিফাতুল্লাহ (সিয়াহ)
শতবছর পূর্বে উসমানী খিলাফতের রূপে মুসলিম উম্মাহর মহানুভবতার সূর্য অস্তমিত হয় পশ্চিমাকাশে, অতঃপর যুগ যুগ ধরে মুসলিমরা হানাদারদের কবলে পড়ে নিপীড়ন-বর্বরতা ও অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হতে থাকে।
শুরুতে খিলাফত পুনরুদ্ধারের জন্যে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রচেষ্টা চালানো হলেও উপনিবেশবাদী কিংবা তাদের দোসরদের শক্তি-সামর্থের আধিক্যের কারণে মুসলিমদের এ ইচ্ছা পূরণ হতে পারেনি তখন; উল্টো ধীরে ধীরে তা নিঃশেষ হয়ে যায়।
দিনদিন পশ্চিমা সন্ত্রাসীরা মুসলিমদের মন ও মনন এমনভাবে দখল করে নেয় যে—যতই অপমান ও দাসত্বের গ্লানি বয়ে বেড়াক না কেন তাদের অন্তরে কখনো আর স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত হয় না।
সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে সামরিক আগ্রাসন শুরু করেছিল এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল। এই সংগ্রাম ও যুদ্ধের ফলস্বরূপ, আল্লাহ তাআলা মুসলিমদেরকে দিয়েছিলেন পাঁচ বছরের স্বাধীন ও স্বতন্ত্র শরীয়ত ব্যবস্থা এবং ইমারাত (খিলাফাহ)। সমগ্র মুসলিমবিশ্বে মানুষ শরীয়াহ ব্যবস্থার জন্য জেগে উঠেছিল।
যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের সহায়তায় এবং অভ্যন্তরীণ চাটুকারদের সাহায্যে আফগানিস্তানের ইসলামি ইমারাতকে উৎখাত করেছিল, কিন্তু এটিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য যখন সারা বিশ্বে প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল ঠিক সেই সময়ে ‘দাওলাতুল ইসলামিয়া ফিল ইরাকি ওয়াশ শাম—দাঈশ’ ইরাকে খিলাফতের ঘোষণা করে।
সারা বিশ্বের নিপীড়িত মুসলিমদের ভরসার অশ্রুসিক্ত চাহনি স্থির জমে ছিল দাওলার দিকে। তবে আহলে ইলমগণ জানতেন যে এই খিলাফত ‘খিলাফাতু আলা মিনহাজিন নাবুওয়াহ’–এর আদলে নয়, কারণ নবুওয়াতের ভিত্তিতে এখানে খলিফা নিযুক্ত হয়নি বা খিলাফত প্রতিষ্ঠার শর্তসমূহ ইসলামী রাজনীতির আলোকে উলামাগণ দ্বারা যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, সেভাবেও কিছু হয়নি।
প্রকৃতপক্ষে, পশ্চিমাপন্থী মিডিয়াগুলো দিনরাত দাঈশের প্রচারে ব্যস্ত ছিল যাতে তারা অজ্ঞ মুসলিমদের হৃদয়ে দাঈশের ভালবাসার বীজ বপন করতে সক্ষম হয়। ইসলামি ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য অনেকেই তাদের ঘর-বাড়ি, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি ছেড়ে আইএসআইএসের দলে যোগ দেয়, কিন্তু তারা কি জানত যে তারা দাজ্জালি প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছে! তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জিহাদের উদ্দেশ্যে তাদের সাথে যোগ দিয়েছিল, কিন্তু তাদের যুদ্ধ করতে হয়েছে মুসলিম মুজাহিদদের বিরুদ্ধে! এমনকি সেসময় ইরাকে আনসার আস সুন্নাহর মতো জিহাদি দল বিভক্ত হয়ে যায় এবং কিছু দল ভেঙেও যায়।
যারা তাদের বাস্তবতা সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল এবং তাদের মিডিয়া প্রোপাগাণ্ডা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল, তারা আত্মতুষ্ট ছিল যে মুসলিমরা ফের আরেকবার অতীতের মতো (খিলাফতে রাশিদা, উমাইয়া, আব্বাসী, উসমানী) সম্মান ও মর্যাদা লাভ করেছে।
কিন্তু যখন সময়ের প্রবর্তনে দাঈশের খারিজিয়াত ও হিংস্র মানহাজ প্রকাশ পেতে শুরু করল, তখন অনেকেই মোহভঙ্গ ও নিরাশ হয়ে পড়েন। কিছু লোক তো ‘খিলাফত’ শব্দটির প্রতি এতটাই বিরক্ত হয়ে পড়ে যে, তারা এই নাম শুনতেও আর স্বস্তিবোধ করত না। যদিও খলিফার কথা কুরআনের আয়াতে উল্লেখ আছে আর খিলাফতের কথা বলা হয়েছে হাদিসে। কিন্তু এই দাঈশ মানুষের মনের ভেতর এতটাই বিদ্বেষে ভরিয়ে দিয়েছিল যে, খিলাফত ও খলিফার নাম শুনলেই তাদের মনে নৃশংসতা ও হত্যাকাণ্ডের চিত্র ভেসে উঠতো।
আল্লাহ তাআলা আফগানিস্তানের ইসলামী ব্যবস্থাকে মুসলিমদের আশা-আকাঙ্খার রক্ষক হিসেবে কবুল করুন। আমীন।