ন্যায়-অন্যায়ের দ্বন্দ্বের ধারা পৃথিবী সৃষ্টির শুরুর লগ্ন হতে আজও অব্যাহত। যারা সত্য ও বাস্তবতার সন্ধান করেছেন, তারা ন্যায়-ইনসাফ ও দীনে হকের পথে অবিচল থেকেছেন, আর যারা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে তারা ভ্রান্ত পথের পথিক হয়েছে।
দাঈশও সেই শয়তানী অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত যারা সত্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। এ কারণেই দাঈশ এখন তাদের রাজনৈতিক জীবনে টিকে থাকার জন্য জিহাদি আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে আশ্রয় খুঁজে বেড়াচ্ছে।
এই দলটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির নির্দেশে আধুনিক মিডিয়া ব্যবহার করে তাদের তথাকথিত অর্জন দেখিয়ে তরুণদের প্ররোচিত করে।
অধিকাংশ তরুণ যারা ধর্মীয় জ্ঞানে অজ্ঞ এবং অনভিজ্ঞ তারা আইএসআইএসের প্রচার প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
আইএসআইএস তাদের জনশক্তি বাড়াতে বেশ কিছু কৌশল ব্যবহার করছে।
নতুন কর্মী নিয়োগের পদ্ধতি:
১. ভিডিও ও অডিও সিরিজ:
নতুন লোক নিয়োগের জন্য আইএসআইএস দ্বারা গৃহীত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো ভিডিও ও ফটোর মাধ্যমে নতুন লোকদের প্রভাবিত করা। এই উদ্দেশ্যে তারা ফেইক সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টও ব্যবহার করছে।
এই লোকেরা খুব চতুরতার সাথে সহিংস বিষয়বস্তু এবং ন্যায়বিচারের সংমিশ্রণ দিয়ে শর্ট ফিল্ম তৈরি করে যা একই সাথে চরমপন্থী এবং স্বার্থবাদী উভয় শ্রেণীকেই আকৃষ্ট করে।
এ বিষয়ে তথ্য জানার জন্য ইন্টারনেটে আরবি ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত ‘দাবিক’ (دابق/Dabiq) ম্যাগাজিনটি দেখতে পারেন।
২. ফেইক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে যুবকদের প্রলুব্ধ করা:
আইএসআইএস হলো কয়েকটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে একটি যারা ফেইক ওয়েবসাইট এবং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের তরুণদের প্রলুব্ধ করে। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব বিবেচনা করে তারা ‘আল ইতিসাম’ (الاعتصام) নামে একটি মিডিয়া এজেন্সি তৈরি করেছে যাতে আইএসআইএসের জন্য একটি প্রচারের প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করা যায়।
আসলে এই দলটি তরুণদের মন জয় করতে মিডিয়ায় কাল্পনিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে।
এই দলগুলো এবং তাদের অনুসারীরা মিডিয়াতে নিজেদের এমনভাবে উপস্থাপন করে যেন তারা বিশ্বের চলমান অন্যায়, বঞ্চনা ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। মূলত অনলাইনে সারাবিশ্বে কমবেশী সবাই তাদের এই ধোঁকার স্বীকার হচ্ছে এবং এর ভিত্তিতে আইএসআইএস ক্রমাগত নিজেদের পদে নতুন লোক নিয়োগ করে চলছে।
তারা ইন্টারনেট এবং ফেইক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেছে যে, নতুন কর্মী বা যারা তাদের পদে যোগ দিতে চায় তারা সহজেই তাদের দায়িত্বশীল এবং পাতি নেতাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। যেখান থেকে তাদের পরবর্তী প্রকল্পের কাজ দেয়া হয়।
৩. বিভ্রান্তিকর প্রচারণা:
এই দলটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও ধর্মীয় সন্দেহ ও সংশয় সৃষ্টি করে যুব সমাজকে তাদের ঘৃণ্য উদ্দেশ্যের দিকে আমন্ত্রণ জানায়।
তথ্যের ছদ্মবেশে সুনির্দিষ্ট ও জটিল মিডিয়া কৌশল ব্যবহার করে মুজাহিদীন ও উলামাদের মুরতাদ বলা এই গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য।
তাদের মিডিয়া কেন্দ্রিক সমস্ত ব্যবস্থা যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তির অ্যাক্সেস সম্ভব— এগুলোকে তারা প্রপাগাণ্ডার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে।
প্রকৃতপক্ষে এই দলগুলি নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করার জন্য মিডিয়াতে ভালবাসা, শান্তি এবং সম্প্রীতির ভূমি হিসাবে তাদের নিয়ন্ত্রিত ছোট এলাকাটিকে উপস্থাপন করে। ভিডিও সম্প্রচারে তারা তাদের কর্মীদের এমনভাবে প্রকাশ করে যেন কাল্পনিক জান্নাত আর অজ্ঞ লোকেরা এই ঘটনা দেখে প্রতারিত হয়।
চলবে ইনশাআল্লাহ….