খাওয়ারিজদের জন্ম

#image_title

ফুআদ আমিরী

 

খারিজি একটি গোমরাহ সম্প্রদায় যারা তাদের জন্মের পর থেকে মুসলিমদের জন্য অপমান ও মানহানির কারণ হওয়া ছাড়া আর কোনো কাজে আসেনি। এই গোমরাহ সম্প্রদায়টি এই যুগে ইয়াহুদী এবং মুনাফিকদের দ্বারা আবিষ্কৃত, প্রশিক্ষিত ও লালিত-পালিত হচ্ছে।

তাদেরকে খাওয়ারিজ বলা হয় কেন?

তাদের এ নামের সাথে কী সম্পর্ক? 

“খাওয়ারিজ” বা “খারিজি” ফে’লে লাযেম থেকে উদ্ভূত হয়েছে خَرَجَ، یَخْرُجُ، خُرُوجاً—যার সাধারণত অর্থ বের হয়ে যাওয়া। তাই তৎকালীন শাসকের বিরোধী ও বিদ্রোহীদেরকেও “খারিজি” বলা হয়, সামান্য পার্থক্যে ফাসাদ সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়কেও খাওয়ারিজের দলভুক্ত করা যায়।

খাওয়ারিজরা কোত্থেকে এবং কিভাবে এলো? (তাদের দৃষ্টিতে) তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল?

খাওয়ারিজ শব্দটি সম্পৃক্ত একটি ঐতিহাসিক সংজ্ঞার সাথে। হযরত উসমান বিন আফফান রদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফতের শেষের দিকে এবং আলী বিন আবি তালিব রদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফতের সূচনালগ্নে মুসলিমদের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন করার মাধ্যমে তাদের চেহারা প্রকাশ্যে আসে।

সেসময়ে তারা ঐক্যবদ্ধ দল হিসেবে নিজেদের উত্থান ঘোষণা করে, কিন্তু নবীয়ে রহমত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়েও এই তাকফিরি দলের আলামত পাওয়া যায়।

হুনাইনের যুদ্ধের সময় যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুযান গোত্রের মধ্যে গনিমতের মাল বন্টন করছিলেন, তখন বনী তামিম গোত্রের এক ব্যক্তি যার নাম ছিল “যুল-খুওয়াইসরা তামিমি” বা “হারকুস বিন যুহাইর” উঠে দাঁড়ায় এবং অত্যন্ত অভদ্রভাবে আপত্তি করে বলে: হে মুহাম্মদ! ইনসাফ করুন!

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন: আমি যদি ন্যায়পরায়ণ না হই তবে কে আছে যে তোমার প্রতি ইনসাফ করবে?

এমন সময় হযরত উমর রদিয়াল্লাহু আনহু উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে তার মাথা ঘাড় থেকে উড়িয়ে দেয়ার অনুমতি দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাকে ছেড়ে দাও। তাদের একটি দল আছে। তাদের নামায ও রোযা তোমাদের চাইতে বহুগুণ বেশি হবে, তোমরা তোমাদের নামায ও রোযাকে তাদের নামায ও রোযার চেয়ে কম মনে করবে। কিন্তু তারা এসকল ইবাদত করা স্বত্বেও দীন থেকে এমনভাবে খারিজ (বের) হয়ে যাবে যেমন ধনুক থেকে তীর বের হয়ে যায়।

খাওয়ারিজ শব্দটি পরবর্তীতে কিতাব ও সুন্নাহর বিরোধী এমন গোষ্ঠীর জন্য ব্যবহৃত হয় যারা সিফ্ফিনের যুদ্ধে হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল এবং অত্যন্ত উগ্র ও অনমনীয় আকীদা নিয়ে হারওয়া এলাকায় বসতি স্থাপন করেছিল। আর সেসময় তৎকালীন বৈধ ও বাধ্যতামূলক খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও দেশত্যাগের কারণে তারা এ নাম লাভ করে। তারা ছিল একদল কট্টরপন্থী যারা প্রথমে সিফ্ফিনের যুদ্ধে মুসলিমদের শরঈ খলিফা আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহুর ওপর শাসন আরোপিত করে পরবর্তীতে তাঁর বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়ে তাঁর বিরোধিতা করেছিল।

শুরুতে তো তারা হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে ছিল, কিন্তু যখন হযরত মুয়াবিয়া রদিয়াল্লাহ আনহুর সাথে বিরোধ নিষ্পত্তির করার কথা আসে, তখন তারা সিফ্ফিনের যুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে।

তারা বিশ্বাস করত যে “ইনিল হুকমু ইল্লা লিল্লাহ” অর্থাৎ আল্লাহর হুকুমের ওপরে কারও কোনো হুকুমের মর্যাদা নেই। এটি ছিল তাদের স্লোগান। তাদের দাবী ছিল যে, হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে যুদ্ধ হতে হবে এবং তাদেরকে পরাজিত করতে হবে। তারা হযরত মুয়াবিয়া রদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে শান্তি চুক্তিকে হারাম ও অবৈধ বলে মনে করেছিল।

কিন্তু হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু খাওয়ারিজদের তাকফির করা এবং তাদের প্রতি কঠোর হওয়া এবং মানবাধিকারের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করে তিনি বলেছিলেন,

আমাদের কাছে আপনাদের তিনটি হক সংরক্ষিত থাকবে:

১. আমরা আপনাদেরকে শহরের মসজিদে নামায পড়তে এবং আমাদের সভায় যোগদান করা থেকে কখনই বাধা দেব না।

২. যতদিন আপনারা আমাদের সাথে থাকবেন, আমরা বাইতুল মাল থেকে আপনাদের জীবিকা পরিশোধ করব।

৩. আমরা আপনাদের সাথে ততক্ষণ যুদ্ধ করব না, যতক্ষণ না আপনারা আমাদের বিরুদ্ধে তরবারি হাতে তুলে নেন।

কিন্তু খাওয়ারিজরা হযরত আলীর নম্রতার সুযোগ নিয়ে নাহরওয়ান নামক আরেক যুদ্ধ শুরু করে, যার ব্যাপারে আমরা আগামী পর্বে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

Abu Jundab Abdullah
Exit mobile version