মুহাম্মাদ ইবন তুমারত এবং খাওয়ারিজদের দাবী

✍🏻 জাওয়াদ আহমাদ

#image_title

মুহাম্মাদ ইবন তুমারত, যিনি আমাজিগ জাতির অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, সোস অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন এবং চতুর্থ হিজরি শতকে উত্তর আফ্রিকার পশ্চিম প্রান্তে (বর্তমান মরক্কো) মুওয়াহহিদীন আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করেন। তার দাওয়াত ও আদর্শ খারিজি মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত ছিল। তিনি ছোটখাটো গুনাহের কারণে মানুষকে মুরতাদ আখ্যা দিতেন।

উত্তর আফ্রিকায় ফিরে আসার পর মুহাম্মাদ ইবন তুমারত তৎকালীন আল মুরাবিতুন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং জনগণকে শাসকদের বিরুদ্ধে উস্কে দেন। তিনি নিজেকে ইমাম মাহদি হিসেবে দাবি করেন এবং ন্যায়বিচার, তাওহিদ ও সংস্কারের স্লোগান তুলে ধরে মুওয়াহহিদীন আন্দোলনের সূচনা করেন।

তার রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কার্যক্রম ছিল কঠোর, যা তাকে চরমপন্থী হিসেবে পরিচিত করে তোলে। ইসলামী আকিদা ও সংস্কার বাস্তবায়নে তার নীতিতে ছিল কঠোরতা ও আপসহীনতা। তিনি মনে করতেন, ধর্মীয় বিদআত, রাজনৈতিক অবিচার এবং ইসলামের মৌলিক নীতির যেকোনো বিচ্যুতি রোধ করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োজন।

মুহাম্মাদ ইবন তুমারত প্রকাশ্যে তার বিরোধীদের, বিশেষত আল মুরাবিতুন সাম্রাজ্য এবং তাদের শাসক আলী ইবন ইউসুফ ইবন তাশফিনকে কাফের ঘোষণা করেন। তার কঠোর মতাদর্শের কারণে সমাজে বিভাজন সৃষ্টি হয় এবং বহু সংঘাত ও রক্তপাত ঘটে।

তার চরমপন্থী ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সে সময়ের প্রায় সকল উলামা এবং সাধারণ মানুষ তার বিরোধিতা করেন। তার অনুসারীদের দ্বারা বহু নিরীহ মানুষ নিহত হন, বিশেষত আল মুরাবিতুন সাম্রাজ্যের পতনের সময় ব্যাপক
মুহাম্মাদ ইবন তুমারত নিজেকে মাহদী হিসেবে দাবি করলেও উলামারা সর্বসম্মতিক্রমে তার দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং একে চরম বিভ্রান্তি হিসেবে চিহ্নিত করেন।

তিনি নিজেকে নবীদের জন্য নির্ধারিত মাসুমিয়াতের (পাপমুক্তির) বৈশিষ্ট্যের অধিকারী বলে দাবি করেন এবং নিজের অনুসারীদের কাছে নিজেকে ঐশী পথপ্রদর্শনের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। এই দাবির মূল উদ্দেশ্য ছিল তার অনুসারীদের মধ্যে নিজের অবস্থান আরও শক্তিশালী করা, যেন তারা তাকে নিঃশর্তভাবে মেনে নেয়।

মুহাম্মাদ ইবন তুমারতের অনুসারীদের দাবীগুলো:

১. মুহাম্মাদ ইবন তুমারতের সব কাজ ও সিদ্ধান্ত আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী।
২. তার কথাগুলো ত্রুটিমুক্ত ও পাপমুক্ত।
৩. তিনি আল্লাহর বিশেষ ঐশী নির্দেশনার অধিকারী।

শেষ পর্যন্ত মুহাম্মাদ ইবন তুমারতের আন্দোলনের ফলে আল মুরাবিতুন সাম্রাজ্যের পতন ঘটে এবং মুওয়াহহিদীন সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

আল মুরাবিতুন সাম্রাজ্য, যা একাদশ ও দ্বাদশ শতকে উত্তর আফ্রিকা এবং আন্দালুসে শাসন করেছিল, একটি শক্তিশালী ইসলামী শাসন ছিল। এটি সানহাজি উপজাতি (বারবার জাতিগোষ্ঠীর একটি শাখা) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়।

সাম্রাজ্যের সূচনা হয় আবদুল্লাহ ইবন ইয়াসিনের নেতৃত্বে এবং পরে ইউসুফ ইবন তাশফিনের অধীনে ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। ইউসুফ ইবন তাশফিন আন্দালুসের অধিকাংশ অঞ্চল ও উত্তর আফ্রিকাকে নিজের শাসনের অধীনে আনেন।

আল মুরাবিতুন সাম্রাজ্য ইসলামী ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে পরিচিত, যা ইসলামী সভ্যতা, শিক্ষা এবং রাজনীতির উন্নয়নে অসাধারণ অবদান রাখে। তবে অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা এবং মুহাম্মদ বিন তুমারাতের নেতৃত্বাধীন মুওয়াহহিদীন আন্দোলনের সামরিক বিদ্রোহ ও চাপের কারণে এই সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে।

Exit mobile version