মুহাজিরিনদের জোরপূর্বক বহিষ্কার : মানবিক মর্যাদার অবমাননা!

✍🏻 হাসান মুজাহিদ

পবিত্র কুরআন ও ইতিহাসের গ্রন্থসমূহে হিজরতের বহু ঘটনা সংরক্ষিত আছে, যা ঈমানদারগণ ও নবীগণ সম্পাদন করেছিলেন। যখন মক্কায় কাফিররা মুসলিমদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন শুরু করল, তখন নবী করিম ﷺ–এর নির্দেশে একদল সাহাবি মক্কা থেকে হাবশার উদ্দেশে হিজরত করেন। সেখানে এক খ্রিস্টান রাজা তাঁদের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানান এবং আশ্রয় প্রদান করেন।

তদ্রূপ, রাসূলুল্লাহ ﷺ স্বয়ং তাঁর সাথী সাহাবাদের সঙ্গে হিজরতে বাধ্য হন, যাতে শত্রুদের যুলুম থেকে রক্ষা পান। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামও নিজ এলাকা ত্যাগ করেছিলেন; আর হযরত মূসা আলাইহিস সালাম মিসরবাসীদের নির্যাতনের মুখে মাদইয়ানের দিকে চলে গিয়েছিলেন।

পবিত্র কুরআন ঈমানদারদের নির্দেশ দেয়—তারা যেন মুজাহির ও আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকার, চুক্তি ও অঙ্গীকারসমূহের প্রতি বিশ্বস্ত থাকে এবং তাঁদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে। কুরআন মুজাহিরদের সুরক্ষার আদেশ দেয় এবং মুমিনদের তাদের সাহায্য ও সমর্থনের নির্দেশ দেয়।

যখন মানুষ অত্যাচার, নিপীড়ন ও অন্যায়ের কবল থেকে মুক্তি পেতে নিরাপদ ভূমির দিকে পলায়ন করে, ইসলাম তখন তাদের অধিকার সংরক্ষণ করে। তাদের জন্য দারুল হিজরতে ধর্ম, জীবন, সম্পদ ও সম্মানের পূর্ণ সুরক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়। সেখানে তারা জীবিকা অর্জন করতে পারে, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে, শিক্ষা লাভ করতে পারে; এবং কোনো অবস্থাতেই তাদের জোর করে নিজ জন্মভূমিতে ফিরিয়ে নেওয়া যায় না।

মুহাজিরদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, তারা যেন অন্যদের সঙ্গে সৌজন্যপূর্ণ আচরণ করে এবং কাউকে কোনো ক্ষতি না করে। আফগানরা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের চেতনায় এই মহৎ আচরণই করেছে, কাউকে কোনো ক্ষতি করেনি। যখন কোনো অঞ্চলের মুসলিমরা কাফিরদের যুলুমে বাধ্য হয়ে অন্য অঞ্চলে হিজরত করে, তারা নতুন ভূমির সঙ্গে গভীর ভালোবাসা ও দৃঢ় সম্পর্ক অনুভব করে; ফলে তাদের পক্ষে পুরোনো আবাসভূমিতে ফিরে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

রাসূলুল্লাহ ﷺ-ও নিজের জন্মভূমি মক্কা থেকে মদীনার দিকে হিজরত করেছিলেন। পরবর্তীতে মক্কার বিজয়ের পরও তিনি মদীনাতেই অবস্থান অব্যাহত রাখেন, সেখানেই জীবন অতিবাহিত করেন এবং তাঁর রওযা মুবারকও সেখানেই অবস্থিত।

যখন বৈশ্বিক আগ্রাসীরা অন্যায়ভাবে আফগানিস্তানে হামলা চালায়, তখন আফগানরা চরম দুঃসহ পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের দিকে হিজরতে বাধ্য হয়। তারা মুসলিম ভ্রাতৃত্বের সৌহার্দ্যে ভরসা রেখে পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়; আশা করেছিল, সেখানেই জীবনের বাকি সময় অতিবাহিত করতে পারবে।

তারা আতিথ্যদাতা দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখে, অনাবাদী অঞ্চলগুলো জনবসতিপূর্ণ করে, নগর ও গৃহ নির্মাণে অংশ নেয়, ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখে, শুষ্ক ও অনুর্বর ভূমিকে জীবন্ত করে তোলে। কিন্তু যখন সেই আতিথ্যদাতা দেশ (পাকিস্তান) কিছুটা উন্নয়ন ও স্বনির্ভরতা অর্জন করল, তখন নিজের স্বার্থে নির্মম অন্যায় ও অবিচারের মাধ্যমে আফগান মুহাজিরদের বহিষ্কার শুরু করল, তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করল, এমনকি তাদেরকে এই সুযোগও দেওয়া হলো না যে, তারা নিজের শ্রমলব্ধ সঞ্চয় সঙ্গে নিতে পারে।

এই ধরনের কর্মকাণ্ডের ইসলামের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই; বরং এটি স্পষ্টতই এক ইসলামী ও মানবিক অন্যায়, যা সর্বতোভাবে নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য।

Exit mobile version