এক সাবেক দাঈশ সদস্যের মুখে দাঈশের গল্প!

[দ্বিতীয় পর্ব]

✍🏻 উসামা হুম্মাম

প্রবন্ধের প্রথম পর্বে আমরা সালিম নামক ব্যক্তির জবানবন্দি উপস্থাপন করেছিলাম— যিনি সিরিয়ায় দাঈশের সদস্যপদে ছিলেন। তিনি প্রখ্যাত লেখক ও সাংবাদিক জার্গেন টুডেনহোফারের সাথে এক সাক্ষাৎকারে দাঈশের অন্তর্লীন সত্য উন্মোচন করেছিলেন।

সালিম তার সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “দাঈশ এমন এক অন্ধ গোষ্ঠী, যারা সত্য-অসত্যের পার্থক্য নিরূপণে অপারগ। তারা নিজেদের নির্ভুল মনে করে এবং যারা তাদের নীতি বা বাগদাদির আদর্শের বিরোধিতা করে, তাদের ‘বাতিল’ বলে নিন্দিত করে।”

তিনি দাঈশকে প্রকৃত জিহাদি সংগঠনগুলোর মধ্যে বিভাজন ও মতবিরোধ সৃষ্টির মূল কারণ হিসেবে দায়ী করেন। তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, দাঈশ প্রকৃত জিহাদি আন্দোলনের ভিত্তিমূলকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তার মতে, ২০১৩ সালে দাঈশ যখন ইরাকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়, তখন তাদের সেখান থেকে বিতাড়িত করা হয়। পরবর্তীতে তারা সিরিয়ায় আশ্রয় গ্রহণ করে এবং সেখানকার জিহাদি আন্দোলনকে দুর্বল করে দেয়। যেখানে সকলের মধ্যে ঐক্যের সেতু রচনা করা প্রয়োজন ছিল, সেখানে দাঈশ মতভেদ ও বিভেদ সৃষ্টি করে।

তিনি আরও বলেন, “যখন সিরিয়ায় জাবহাতুন নুসরাহ সাফল্যের শীর্ষে অধিষ্ঠিত হয়েছিল, তখন তাদের সুপরিকল্পিত কৌশল ও নিরলস প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে বহু অঞ্চল শাসকগোষ্ঠীর কবল থেকে মুক্তি পায়। এই বিজয় জাবহাতুন নুসরাহ, আহরারুশ শাম এবং অন্যান্য জিহাদি সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের সুফল।”

যখন সালিমকে প্রশ্ন করা হয়, দাঈশের প্রকৃত লক্ষ্য কী? তিনি উত্তর দেন, “দাঈশের লক্ষ্য ক্ষমতা দখল। বাগদাদি কেবল নিজের স্বার্থসিদ্ধির পেছনে ছুটছে। জাবহাতুন নুসরাহ যখন ধারাবাহিক সাফল্যের সোপানে আরোহন করছিল, তখন দাঈশি খাওয়ারিজরা তাদের সাথে ঐক্য স্থাপনের পরিবর্তে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এ সংঘাতে দাঈশের অসংখ্য সদস্য নিহত হয়।”

দাঈশের ঐতিহাসিক পটভূমি এবং তাদের সদস্যদের সাক্ষাৎকারসমূহ বিশ্লেষণ করলে এটি সুস্পষ্ট হয় যে, তারা একটি তকফিরি, চরমপন্থী এবং ইসলামের ভাবমূর্তি কলঙ্কিতকারী গোষ্ঠী। তারা ব্যক্তিগত স্বার্থে ইসলামের বিকৃত ব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে মুসলিমদের রক্ত ঝরায়। সামান্যতম অজুহাতেই তারা মুসলিমদের হত্যার ন্যায়সঙ্গতা খুঁজে পায়, অথচ কাফিরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজেদের অক্ষম বলে প্রকাশ করে।

তিনি বলেন, “হ্যাঁ! দাঈশি খারিজিরা তাদের জন্মলগ্ন থেকেই প্রকৃত জিহাদি গোষ্ঠীগুলোকে বিভক্ত, দুর্বল এবং ধ্বংস করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত। বিশেষত, আল-কায়েদা, আহরারুশ শাম এবং অন্যান্য সংগঠনগুলোকে ভাঙনের মুখে ঠেলে দেওয়ার ক্ষেত্রে দাঈশের ভূমিকা অনস্বীকার্য।”

পরিশেষে তিনি বলেন, “ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান এবং অন্যান্য দেশে দাঈশের বহু সদস্য সত্য উপলব্ধির পর অস্ত্র সমর্পণ করেছে এবং তাদের অনেকেই এই গোষ্ঠীর অন্তর্নিহিত স্বরূপ উন্মোচন করেছে। দাঈশ হলো এমন এক ব্যর্থ গোষ্ঠী, যারা নিজেরা তো খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে পারেই নি, বরং তারা প্রকৃত জিহাদী গোষ্ঠীগুলোকে দুর্বল করে দিয়েছে। তারা সর্বদা ক্ষতি করেছে তাদের— যারা ইসলামি বিশ্বকে তার গৌরবোজ্জ্বল অতীতে ফিরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছিল।”

Exit mobile version