১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের সমসাময়িক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই ঐতিহাসিক দিনেই আফগানিস্তানের ক্লান্ত ও ভারাক্রান্ত হৃদয় নতুন স্পন্দনে প্রাণ ফিরে পেয়েছিল। এ অবিস্মরণীয় দিনে, বছরের পর বছর জিহাদ, প্রতিরোধ ও অটলতার পর আফগানিস্তানের গৌরবান্বিত জনগণ পুনরায় ইসলামি শাসনের সঙ্গে বাইয়াতের অঙ্গীকার নবায়ন করেছিল। এই অঙ্গীকার কলম ও কাগজে লেখা ছিল না; বরং শহীদদের রক্তে এবং আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার বান্দাদের দৃঢ় সংকল্পে চিরস্থায়ীভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছিল।
সে দিনে কাবুল ছিল ঐক্য ও ঈমানের এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপট। সেই একই গলি ও পথ, যা একসময় দাসত্ব, বিদেশি দখল ও বিভেদের প্রতীক ছিল, আজ সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই অটল পদক্ষেপের, যা স্বাধীনতা ও ইসলামের বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। সেদিন যুহরের আযান ছিল আসমানি আহ্বানের ন্যায়, যা নতুন এক যুগের ভোরের বার্তা শুনিয়েছিল।
এই বাইয়াতের পুনর্নবীকরণ আফগানিস্তানকে তার আসল গন্তব্যে ফিরিয়ে এনেছিল; যেমন ছড়িয়ে পড়া জল পুনরায় একত্র হয়, তেমনি এই জাতিও ইসলামের কোলে ফিরে এসেছিল। আজ যখন আমরা এ দিনের স্মৃতি মনে করি, তখন সেই পবিত্র বাইয়াতের গুরুত্বই জোর দিয়ে উচ্চারণ করি—কারণ মর্যাদা ও উচ্চতার প্রকৃত অর্থ কেবল ইসলামি শাসনের ছায়াতলেই পূর্ণতা লাভ করে।
এই ঐতিহাসিক বাইয়াতের বরকতেই আজ আফগানিস্তান সামাজিক জীবনের সব ক্ষেত্রেই গভীর ও বিপ্লবাত্মক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে—মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে, যা আজ এক দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও দায়িত্বশীল প্রজন্ম গড়ে তোলার কারিগর, বাজার ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র পর্যন্ত, যা «লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ»–এর পবিত্র পতাকার তলে তাদের কার্যক্রম সম্পাদন করছে। এগুলো সবই এ জাতির অকুণ্ঠ সংকল্পের নিদর্শন যে, তারা এমন এক সমাজ গড়ে তুলতে চায়, যা ইসলমি নীতির ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে থাকবে। ১৫ আগস্ট থেকে যার শিকড় বিস্তার লাভ করেছে, সেই বরকতময় বিপ্লব আজ ফলপ্রসূতার পর্যায়ে প্রবেশ করেছে এবং দিন দিন নতুন ধাপ অতিক্রম করছে।
এই ঐতিহাসিক দিন শুধু বিদেশি দখলের অবসানের প্রতীকই ছিল না; বরং এটি ছিল জাতীয় আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসের নতুন যুগের সূচনা। আজ যখন আমরা গত চার বছরের দিকে ফিরে তাকাই, তখন স্পষ্ট দেখতে পাই যে, এই জাতি সেই অটুট অঙ্গীকারের ভরসায় সব ষড়যন্ত্র ও বৈশ্বিক চাপ মোকাবিলা করেছে—সে প্রতিরোধের বাস্তব প্রমাণ আমরা পাই ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষায়, স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণে এবং আঞ্চলিক উন্নয়নের প্রয়াসে। এসবই ১৫ আগস্টে প্রকাশিত সেই চেতনার ফল।
আজ উম্মতে মুসলিমার একজন সদস্য হিসেবে আমাদের দায়িত্ব—এই মহৎ বিজয় ও অমানতের হেফাযত করা, পারস্পরিক ঐক্য দৃঢ় করা এবং ইসলামি শাসনের মৌলিক কাঠামো মজবুত করে এ যাত্রাকে অব্যাহত রাখা। যে প্রজন্ম নিজ চোখে এই ঐতিহাসিক বাইয়াত প্রত্যক্ষ করেছে, তাদের কর্তব্য এই মূল্যবোধগুলোকে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
আমাদের কর্মের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে, এই বাইয়াত কেবল একটি স্লোগান ছিল না; বরং এটি ছিল এক অটুট অঙ্গীকার—এমন এক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য, যা মহাগ্রন্থ কুরআন ও নবী ﷺ–এর সুন্নাহর পথনির্দেশে প্রতিষ্ঠিত; সেই পথ, যা আমাদের মহৎ শহীদগণ নিজেদের রক্ত দিয়ে সমতল করেছেন এবং যা আমাদের জ্ঞান ও কর্মের আলোয় অগ্রসর করতে হবে।