ফুআদ আমিরী
হযরত উসমান রদিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের পর ইসলামের ব্যানারে গোমরাহ দলগুলোর উত্থান শুরু হয় এবং তাদের কর্মকাণ্ডের ফলে সাহাবীদের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধে, যার একটি ছিল সিফ্ফিনের যুদ্ধ।
সিফ্ফিনের যুদ্ধের দু’টি কারণ ছিল:
১. ইজতিহাদী ত্রুটি
২. ফিতনাবাজ দলগুলোর (সাবাঈ ও খাওয়ারিজ) কুকর্ম
হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু এবং হযরত মুয়াবিয়া রদিয়াল্লাহু আনহুর মধ্যে সংঘটিত এই যুদ্ধ বেশ কয়েকদিন ধরে চলে, যাতে উভয় পক্ষের প্রায় ৭০,০০০ জন শহীদ হন। (হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহুর বাহিনী থেকে ২৫ হাজার এবং হযরত মুয়াবিয়া রদিয়াল্লাহু আনহুর বাহিনী থেকে ৪৫ হাজার লোক) যার পরিণতি হত্যা ও দুর্দশা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
হযরত আমর ইবনুল আস রদিয়াল্লাহু আনহু যখন এই যুদ্ধের ধ্বংসলীলা দেখলেন, তখন তিনি বিচক্ষণতার সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পরামর্শ দেন এবং বলেন, “আসুন আমাদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কুরআনের দিকে ফিরে আসি!”
হযরত মুআবিয়া রদিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁর দলের সিরিয়ার সৈন্যরা তাদের বর্শার উপর কুরআনের মুসাহাফ তুলে উচ্চস্বরে বলেছিলেন:”هذا بیننا و بینکم“ অর্থাৎ কুরআন আমাদের এবং আপনাদের মধ্যে ফয়সালা করবে।
হযরত মুয়াবিয়া রদিয়াল্লাহু আনহুর প্রতিনিধি যখন হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে এসে তাঁকে কুরআন থেকে ফায়সালা করার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন, তখন তিনি উদারতা ও আনন্দের সঙ্গে তাঁকে স্বাগত জানিয়ে বললেন: “আমরাও একমত কারণ আমরা পবিত্র কুরআন অনুসরণ করার মুখাপেক্ষী।”
কিন্তু হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু যখন যুদ্ধবিরতি গ্রহণ করেন এবং নিজের ভাইদের হত্যা বন্ধ করার চেষ্টা করেন, তখন তাঁর সেনাবাহিনীর একদল অজ্ঞ লোক তাঁর বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগে এবং আলী রদিয়াল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে আপত্তি জানায় যে, তিনি আল্লাহর দ্বীন নিয়ে খেলা করছেন। অতঃপর তারা কিছু স্লোগান তুলে, তাদের ভাষ্য মানুষের শাসনকে (খিলাফত ও আলী রদিয়াল্লাহু আনহুর সিদ্ধন্ত) আল্লাহর দ্বীনে গুনাহ বানিয়ে ফেলে।
জি হ্যাঁ! মুসলিমদের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি তৈরি করার ধৈর্য ও সাহস মুনাফিকদের ছিল না, তাই তারা হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহুর সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা ও বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। এবং তারা হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহুর বাহিনী থেকে কিছু লোককে বাদ দিয়ে তাঁরই বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল।
হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু ফায়সালায় সম্মত হন এবং তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে কুফায় ফিরে আসেন।
তাঁরা কুফায় পৌঁছানোর আগেই প্রায় বারো হাজার লোক তাঁদের সৈন্যবাহিনী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হারুরা নামক স্থানকে নিজেদের আবাসস্থলে পরিণত করে নেয়।
হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদিয়াল্লাহু আনহুকে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও ঐশী আয়াতের ভিত্তিতে বোঝানোর দায়িত্ব অর্পণ করেন।
হযরত ইবনু আব্বাস রদিয়াল্লাহু আনহু তাদের একটি দলকে বুঝিয়ে হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহুর সেনাবাহিনীতে পুনরায় যোগ দান করাতে সক্ষম হন। কিন্তু কিছু অজ্ঞ বিদ্রোহীও ছিল যারা হযরত ইবনে আব্বাস রদিয়াল্লাহু আনহুর কথা না শুনে আবদুল্লাহ ইবনু ওয়াহহাব রাসবিকে নিজেদের নেতা নিযুক্ত করে আনুষ্ঠানিকভাবে খারিজি সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করে যার বংশধারা আজও চলমান।
এই জাহেলী চিন্তাধারার ভিত্তি ছিল:
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে দুর্ব্যবহার করা থেকে শুরু করে হক ও বৈধ খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা থেকে নিয়ে মুসলিমদের তাকফির করা এবং তাদের হত্যা করা।
ইতিহাস জুড়ে তারা এই আয়াতের বিপরীত কাজ করেছে: ”أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلۡكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيۡنَهُمۡ“
অর্থাৎ খারিজিরা মুমিনদের সাথে কঠোর আচরণ করে এবং কাফেরদের সাথে করুণার আচরণ করে। হারুরিয়ার খাওয়ারিজ থেকে দাঈশ খাওয়ারিজ পর্যন্ত সমস্ত খাওয়ারিজ দল এই ইস্যুতে সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এটি দিনের আলোর মতো সুস্পষ্ট।