রাসুলুল্লাহ ﷺ–এর রহমত ও অনুকম্পার বরকত এতই অনন্য ও মহিমান্বিত যে এর পরিধিতে সমগ্র সৃষ্টিজগত অন্তর্ভুক্ত; শুধু মানুষ নয়, বরং প্রাণী-জন্তু এমনকি জড়-পদার্থও সেই রহমতের অংশীদার। আর এ রহমত কেবল মুসলিমদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং কাফেরদের ওপরও পৌঁছেছিল। যখন আমরা সেই সময়কার আরব সমাজ এবং বিশ্বের অন্যান্য সাম্রাজ্যের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করি, তখন স্পষ্ট হয়ে যায়—এত কঠোর, নিষ্ঠুর ও নির্দয় পরিবেশে তাঁর রহমত কত অসাধারণ, কত ভিন্নতর ও কত অপ্রতিম ছিল।
আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস ও ঈমান এই যে, আদম আলাইহিসসালাম থেকে আজ পর্যন্ত, বরং কিয়ামত পর্যন্ত ইতিহাসে এমন আর দ্বিতীয় কেউ আসবে না, যাকে এত গভীর ভালোবাসা দেওয়া হয়েছে, যাকে এত মর্যাদা, পবিত্রতা ও সম্মান প্রদান করা হয়েছে, যতটা রাসুলুল্লাহ ﷺ–কে দেয়া হয়েছে। তাঁর জীবন-চরিত অধ্যয়ন পৃথিবীর কল্যাণ ও সংস্কারের জন্য অপরিহার্য। তাঁর সীরাত প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুকরণের আদর্শ; ব্যক্তির জন্য যেমন, তেমনি দলের জন্য, ছোট ও বড় গোষ্ঠীর জন্য, এমনকি গোটা সমাজ নির্মাণের ক্ষেত্রেও এক উজ্জ্বল ও সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত।
তিনি পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন, এবং এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে তাঁর কর্ম ও চরিত্রের অধ্যয়ন কোনো অতিরিক্ত বা কেবল আবেগনির্ভর কাজ নয়; বরং প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অপরিহার্য ও কর্তব্য, যে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা কামনা করে এবং নিজের উম্মতের জন্য মর্যাদা, সম্মান, নেতৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রত্যাশা করে। বরং কাফেরদের জন্যও জরুরি যে তারা রাসুলুল্লাহ ﷺ–এর সীরাত অধ্যয়ন করবে, তারা পৃথিবীর যেখানেই অবস্থান করুক না কেন। কেউ যদি তাঁর সীরাত অধ্যয়ন না করে, তবে কী পরিমাণ বিপুল কল্যাণ ও মঙ্গল থেকে সে বঞ্চিত হয়ে যায়, তা অকল্পনীয়! মানুষ যদি তাঁর জীবনের গভীর চিন্তা-গবেষণায় উদাসীন থাকে, তবে জ্ঞানের কত মহামূল্যবান ভাণ্ডার নষ্ট হয়ে যায়!
তাঁর কথামালা, কর্ম এবং বক্তব্যসমূহ—সকল সত্যসন্ধানী ও কল্যাণাকাঙ্ক্ষী মানুষের জন্য পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সম্পদ। তিনি এমন একটি বিশৃঙ্খল, বিপর্যস্ত এবং ধ্বস্ত জাতির মাঝে প্রেরিত হয়েছিলেন, যেখানে অত্যাচার ছিল সর্বব্যাপী, মিথ্যা ও অবৈধ কর্ম প্রচলিত ছিল প্রবলভাবে, পাপ ও অসৎকর্ম ছিল চরমে, আর উদ্ধত ও যালেমরা ক্ষমতার মালিক ছিল। তখন তিনি অত্যন্ত বিস্ময়কর ধৈর্য ও গভীর প্রজ্ঞা নিয়ে সেই অবস্থা পরিবর্তনের কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি প্রতিটি সৎকর্মের নির্দেশ দিয়েছেন এবং প্রতিটি অসৎকর্ম থেকে নিষেধ করেছেন। হ্যাঁ, তাঁর পথ ফুলে ভরা ছিল না; ছিল কাঁটা ও দুর্ভোগে পূর্ণ। বহু লোক বিরোধিতা করেছে, আপন-পর পরস্পর লড়েছে, নিজের গোত্র যুদ্ধ নিয়ে সামনে এসেছে, পরিবার-পরিজনও বিরোধিতায় অবতীর্ণ হয়েছে, তবুও তাঁর সংকল্প ও দৃঢ়তায় কখনো কোনো শৈথিল্য আসেনি। তিনি তাঁর উম্মতের জন্য দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছেন এবং এমন সরল, সোজা ও আলোকোজ্জ্বল পথ রেখে গেছেন—যেই পথ ধরে যে সত্যনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত মানুষ তার জাতির উৎকর্ষ কামনা করবে, সে অবশ্যই সফলতা অর্জন করতে পারবে।
রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, “আমি তোমাদের একটি একেবারে পরিষ্কার ও দীপ্তিময় পথের উপর রেখে যাচ্ছি, যার রাত্রিও দিনের মতো উজ্জ্বল। যে আমার পরে তা থেকে বিচ্যুত হবে, সে ধ্বংস হবে; কারণ ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ এ পথ থেকে সরে না।”



![আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে ইসলামী ইমারাতের সম্পর্ক [ দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব ]](https://almirsadbd.com/wp-content/uploads/2025/05/SAVE_20250514_234608-350x250.jpg)
















