আর্থিক দুর্দশার ঘনঘটা; খাওয়ারিজদের জন্য বিপদসংকেত

✍🏻 আদনান কুরাইশী

দাঈশী খাওয়ারিজরা তাদের অস্তিত্বের সূচনালগ্ন থেকেই নানাবিধ পন্থা অবলম্বন করে নিজেদের আর্থিক সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে আসছে। তাদের তথাকথিত খিলাফতের উত্থানপর্বে মুসলিম ভূখণ্ডের তেল ও গ্যাস বিক্রির মাধ্যমে তারা নিজেদের জ্বালানি যুগিয়েছিল, যা ব্যবহৃত হয়েছিল ইসলামের বিরুদ্ধে এক ঘৃণ্য যুদ্ধযন্ত্র সচল রাখার কাজে।

একের পর এক পাপাচার ছিল তাদের অর্থসংগ্রহের মূল অবলম্বন। প্রাচীন প্রত্নসম্পদ লুণ্ঠন ও বিক্রি, নিরীহ মানুষকে বন্দি করে মুক্তিপণ আদায়, মানবঅঙ্গের নির্মম ব্যবসা, চাঁদাবাজি এবং যাকাতের নামে সাধারণ মুসলিমদের থেকে সংগৃহীত বিপুল অর্থ আত্মসাৎ।

কিন্তু যখন তাদের ভুয়া খিলাফত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছাল, তখন নিজেদের পথভ্রষ্ট অনুসারীদের ব্যয়ভার বহনের জন্য তারা আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে করুণার ভিক্ষা চাইল এবং সেইসঙ্গে তাদের পদানত দাসত্বও স্বীকার করে নিল।

ফলস্বরূপ, খারিজিরা এখন তাদের মদদদাতাদের স্বার্থ রক্ষার নিমিত্তে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা করছে, এবং একই সঙ্গে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখার প্রয়াসে সমগ্র মুসলিম উম্মাহকেও অবর্ণনীয় ক্ষতির সম্মুখীন করছে।

সাম্প্রতিককালে “আল-বাসায়ের” নামক এক কুখ্যাত খারিজি সংগঠনের পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান সংগ্রহের আবেদনসংবলিত পোস্টার প্রকাশিত হয়েছে, যা তাদের অস্তিত্বের ভিত কতটা নড়বড়ে হয়ে গেছে— তার একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। এমন প্রচার-প্রচারণা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এই উগ্রপন্থী গোষ্ঠী মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটের কবলে পড়েছে এবং এমনকি তাদের গোপন পৃষ্ঠপোষকদের পক্ষেও এই বিপর্যয় নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না।

যে বিষয়টি পাঠকদের বিশেষভাবে ভাবিয়ে তোলে, তা হলো— খারিজিরা একে অপরের প্রতিও আস্থাশীল নয়। রজব মাসের অষ্টম দিবসে প্রকাশিত পোস্টারগুলোয় স্পষ্টত উল্লেখ ছিল যে, দাঈশ সদস্যরা তাদের অনুসারীদের সতর্ক করে দিয়েছে যেন অর্থ সাহায্য শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু অনুমোদিত ব্যক্তির মাধ্যমেই বিতরণ করা হয়।

পোস্টারগুলোতে আরও বলা হয়েছে:
“খারিজিদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা মুসলিমদের কর্তব্য, কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, মুজাহিদ, বন্দি, এতিম ও বিধবাদের সহায়তার নামে সংগৃহীত অধিকাংশ অর্থ প্রকৃত প্রাপকদের হাতে পৌঁছায় না।”

জিহাদের নাম ভাঙিয়ে অর্থ সংগ্রহ করা এবং তা ব্যক্তিগত লোভ-লালসার অনুগামীদের হাতে তুলে দেওয়া দাঈশের আর্থিক ব্যবস্থাপকদের নিত্যদিনের দুর্নীতি। তবে সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্তের পর্যালোচনা বলছে, তাদের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এই উগ্রগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক কাঠামোকে চরম সংকটে নিপতিত করেছে।

ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে পরাজয়ের পর দাঈশী খারিজিরা এখন ভয়াবহ আর্থিক দুর্দশার শিকার। তাদের একদা পরিচালিত যুদ্ধযন্ত্র আজ প্রায় অকেজো। ইনশাআল্লাহ, খুব শিগগিরই এই ভয়ংকর ফিতনার চিরসমাপ্তি ঘটবে।

Exit mobile version