আমি ইসলামী ইমারাতের পক্ষে কেন দাঁড়াই?!

✍🏻 শুয়াইব আযিয

মুসলিম সমাজসমূহ তাদের সমগ্র ইতিহাসে এমন এক ব্যবস্থার খোঁজে ছিল, যা ধর্মীয় মূল্যবোধ, সামাজিক ন্যায়বিচার ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার উপর প্রতিষ্ঠিত; যেখানে তারা ইসলামী শরীয়তের ছায়াতলে মানব-স্বভাবের চাহিদানুযায়ী মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারে।

আফগানিস্তানের ইসলামী ইমারাত এমন এক ব্যবস্থা, যা এ ভূমির ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক আত্মা থেকে উদ্ভূত হয়ে নিজেদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর বহু পুরোনো স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে।

এই প্রবন্ধের মূল প্রশ্ন হলো, আমি কেন ইসলামী ইমারাতের সমর্থন করি? এবং কেন আফগানিস্তানের ইসলামী ইমারাতকে আমি এক মধ্যপন্থী, চরমপন্থা ও শৈথিল্যমুক্ত ব্যবস্থা বলে বিশ্বাস করি?

সত্য এই যে, সুস্থ প্রকৃতির অধিকারী মানুষ প্রতিটি বিষয়ে ন্যায় ও সত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দেয়। আমি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কোনো পদমর্যাদা কিংবা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য লিখছি না; বরং শুধুমাত্র সত্য ও বাস্তবতাকে সুস্পষ্ট করার উদ্দেশ্যে কলম হাতে নিয়েছি।
যেমনটি সবারই জানা, যখন ন্যাটো ও মার্কিন দখলদার বাহিনী তাদের সকল সামরিক সরঞ্জাম ও স্থানীয় দোসরদের সহায়তায় আফগানিস্তানে আক্রমণ করল, তখনই আমীরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মাদ উমার মুজাহিদ রহিমাহুল্লাহ ঈমান ও দৃঢ়তার সাথে সেই ঐতিহাসিক বাণী উচ্চারণ করেছিলেন, যা স্বর্ণাক্ষরে লিখিত হয়ে আছে। তিনি রেডিও ভাষণে ঘোষণা দিয়েছিলেন—
“আমেরিকা আমাদের পরাজয়ের হুমকি দেয়, অথচ আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সাহায্য ও বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এখন দেখা যাক, কার প্রতিশ্রুতি সত্য হয়।”

নিঃসন্দেহে, এমন নেতৃত্বের অস্তিত্ব—যারা এ পবিত্র কাফেলার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন—এই ব্যবস্থার সত্যতার উজ্জ্বল প্রমাণ। দখলদার বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করার পর এক ধার্মিক, গৌরবময় ও মুজাহিদ জাতি—যারা পবিত্র মায়েদের কোলে লালিত হয়েছিল, তাকওয়াবান শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে বেড়ে উঠেছিল, এবং জিহাদ ও স্বাধীনতার চেতনায় যৌবনে পদার্পণ করেছিল, তারা আত্মোৎসর্গের ময়দানে নেমে পড়েছিল। নিশ্চয়ই, জিহাদের অন্যতম প্রজ্ঞা এও যে, এর মাধ্যমে সংশোধক ও বিপথগামীর মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যায়। আফগানিস্তানের বিশ বছরের জিহাদে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি সবচেয়ে আন্তরিক, ধার্মিক ও গৌরবময় ব্যক্তিরা যেমন উলামা, হাফেয, ক্বারি ও খাঁটি সাধারণ মানুষ এ কাফেলার সহযাত্রী ছিলেন। তারা স্বেচ্ছায় জিহাদের উত্তপ্ত সম্মুখসমরে গিয়েছেন, কেউ শহীদ হয়েছেন, কেউ বন্দি হয়েছেন, হাজারো পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে, এবং হাজারো উলামা ও হাফেয কেবল জিহাদের ফাতাওয়া ও স্বাধীনতার আহ্বানের কারণে নিখোঁজ হয়েছেন। সংক্ষেপে, আফগান জাতি এমন এক নির্মল ও অতুলনীয় জিহাদ করেছে, যার দৃষ্টান্ত সমকালীন ইতিহাসে দুর্লভ।

একুশ বছরের সংগ্রামের পর আল্লাহ তা‘আলা সেই প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করলেন, যা তিনি সর্বদা তাঁর মুমিন বান্দাদের সাথে করেন। শহীদদের রক্ত, নিপীড়িতদের দুয়া, মাতৃত্বের মমতা ও ইয়াতীমদের অশ্রুর ফলস্বরূপ সুস্পষ্ট বিজয় আফগান মুজাহিদ জাতির কপালে লিখিত হলো। আমরা ইসলাম-বিরোধীদের লাঞ্ছনাকর পরাজয় ও অপমানকর পলায়ন প্রত্যক্ষ করেছি। এ দিন ইতিহাসে আমেরিকা ও তার মিত্রদের সর্বনিকৃষ্ট পরাজয় হিসেবে চিহ্নিত হলো, এবং আগত স্বাধীন প্রজন্ম চিরকাল এ নিয়ে গর্ব করবে।

ইসলামী ইমারাতের বিজয় ও ইসলামী ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার পর, যখন পূর্ণ শান্তি ও এমন এক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলো, যেখানে মুসলিমদের ধর্ম, মর্যাদা ও সম্মান সুরক্ষিত, তখন কিছু লোক ইসলাম-বিরোধীদের সহচর হয়ে নানারূপ অভিযোগ ও ভিত্তিহীন প্রচারণা শুরু করল। তারা চায়, তাদের ফাঁপা প্রচারণার মাধ্যমে ইসলামী ইমারাত সম্পর্কে জনগণের মনে বিষ ঢেলে দিতে।

আজ, যখন আফগানিস্তানের মুজাহিদ জাতির বিজয়ের প্রায় চার বছর অতিক্রান্ত, তখনও কাফের ও মুনাফিকরা, যারা সর্বপ্রকার কৌশল প্রয়োগ করেও ইসলামী ব্যবস্থা ধ্বংসে ব্যর্থ হয়েছে, তারা এখন মিথ্যা অভিযোগ ও সন্দেহ ছড়িয়ে মানুষের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। যারা ইসলামী ব্যবস্থার মূল আত্মা ও দর্শন অর্থাৎ পারস্পরিক সম্পর্ক, অঙ্গীকার ও শরীয়তনির্ভর সামাজিক সম্পর্কের ব্যাপারে অজ্ঞ, এবং রহমতের নবী ﷺ-এর পবিত্র জীবন থেকে দূরে, তারাই সন্দেহ-সংশয় ছড়িয়ে কিছু মানুষকে ইসলামী ইমারাত সম্পর্কে বিভ্রান্ত করতে সচেষ্ট।

বাস্তবে, প্রত্যেক ধার্মিক ও স্বাধীন মানুষকে এমন ব্যবস্থার কামনা করা উচিত এবং তার সমর্থনকে নিজের উপর অপরিহার্য মনে করা উচিত।

ইসলামী ইমারাতের সমর্থনের মৌলিক কারণসমূহ:
১. ইসলামী শরীয়তের প্রয়োগ। এটাই সবচেয়ে বড় ও সুস্পষ্ট দলিল।
২. হিজাব, নামায এবং অন্যান্য ধর্মীয় বিধানের প্রতি গুরুত্ব, বিদেশি সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিপরীতে ধর্মীয় মূল্যবোধের সুরক্ষা।
৩. বিদেশি দখলের অবসান। ইমারাত প্রতিরোধের মাধ্যমে স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করেছে।
৪. শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতিষ্ঠা, যা জ্ঞান, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির বিকাশের পথ উন্মুক্ত করে এবং সমাজকে বিশৃঙ্খলা থেকে রক্ষা করে।
৫. সামাজিক ন্যায়বিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম।
৬. ইনসাফভিত্তিক শাসন প্রতিষ্ঠা।
৭. সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঢাল হয়ে দাঁড়ানো। উম্মাহকে পাশ্চাত্য গণমাধ্যম ও সংস্কৃতির স্রোত থেকে রক্ষা করা।

সারকথা হলো, ইসলামী ইমারাতের সমর্থন কেবল একটি রাজনৈতিক বিষয় নয়; বরং এটি গভীর ধর্মীয় ও ঈমানী বিশ্বাস। এ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত ইসলামী মূল্যবোধ, স্বাধীনতা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও ইসলামী সভ্যতার পরিচয় সংরক্ষণের উপর। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ইসলামী ইমারাতের সমর্থন আসলে দীন, মাতৃভূমি, মর্যাদা এবং আগামীর স্বাধীন ও ইসলামী প্রজন্মের সমর্থন।

Exit mobile version