এইচটিএস এবং আইএসআইএসের মধ্যে পার্থক্য

✍🏻 আহমাদ আবিদ

#image_title

আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বিষয় নজরে এলো, যেখানে হায়’আত তাহরির আশ শাম (এইচটিএস) এবং ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক এন্ড সিরিয়া (আইএসআইএস) তুলনা করা হচ্ছিল। সেই আলোচনায় দাবি করা হচ্ছিল, উভয় দলই ইসলামের জন্য ক্ষতিকর। একজন নিরপেক্ষ লেখক হিসেবে আমি এই দুটি গোষ্ঠীর আদর্শ, লক্ষ্য, এবং কৌশলগত পার্থক্যগুলো বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন অনুভব করেছি।

আইএসআইএস এবং এইচটিএস—এই দুটি নাম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন নিয়ে আলোচনায় বহুল উল্লেখিত। কিন্তু তাদের আদর্শিক ভিত্তি, রাজনৈতিক লক্ষ্য এবং কার্যক্রমের পদ্ধতিতে এমন কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে যা একে অপরের থেকে তাদের সম্পূর্ণ আলাদা করে।

আদর্শিক ভিত্তি এবং দৃষ্টিভঙ্গি
আইএসআইএস চরমপন্থী তাকফিরি আদর্শ ধারণ করে, যা ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার নামে বিশ্বজুড়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।

অন্যদিকে, এইচটিএস বাস্তবভিত্তিক জিহাদি প্রচেষ্টার মাধ্যমে সিরিয়ার শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সক্রিয় লড়াই চালিয়ে এসেছে, যার ফলে দৃশ্যমান কিছু সাফল্যও অর্জিত হয়েছে।

আইএসআইএসের তাকফির নীতি চরমপন্থী ও আগ্রাসী। তারা তাদের আনুগত্য অস্বীকারকারীদের অবলীলায় কাফির ঘোষণা করে।

অপরদিকে, এইচটিএস এই বিষয়ে অনেক বেশি সংযত এবং ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান গ্রহণ করে। তারা তাকফির শুধুমাত্র সেই ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মনে করে, যারা প্রকাশ্যে এবং সুস্পষ্টভাবে কুফর করে (কুফরে বুয়াহ)।

আইএসআইএস তাদের তাকফির নীতির প্রয়োগে সীমা ছাড়িয়ে যায়। তারা শুধু মৌখিক তাকফিরেই সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং হত্যাকাণ্ড, বন্দিত্ব, এবং নির্যাতনের মতো চরম শাস্তি আরোপ করে। উপরন্তু, আইএসআইএসে যোগ্যতা-অযোগ্যতার তোয়াক্কা ছাড়াই যে কেউ ফাতওয়া জারি করতে পারে এবং ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

এর বিপরীতে, এইচটিএস তাকফির ঘোষণার দায়িত্ব শুধুমাত্র যোগ্য আলেম ও ইসলামি বিচারিক সংস্থাগুলোর ওপর অর্পণ করেছে। তাদের সাধারণ সদস্যদের এ বিষয়ে কোনো এখতিয়ার নেই।

আলেমদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি
আইএসআইএস তাদের চরমপন্থী কার্যক্রমের বিরোধিতাকারী আলেমদের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে। তারা এ আলেমদের কাফির বলে আখ্যায়িত করে এবং তাদের ওপর সহিংসতা চালায়। তারা নিজেদের শরিয়াহর একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি বলে দাবি করে।

বিপরীতে, এইচটিএস আলেমদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন ও তাদের সমর্থন লাভে সচেষ্ট থাকে। তারা নিজেদের বৈধতা প্রতিষ্ঠায় আলেমদের পরামর্শ ও সহায়তা গ্রহণ করে।

শাসনব্যবস্থা ও কৌশল
আইএসআইএস তাৎক্ষণিক খিলাফত প্রতিষ্ঠার ধারণা গ্রহণ করে। ২০১৪ সালে তারা একটি বৈশ্বিক ইসলামি খিলাফতের ঘোষণা দেয়, কিন্তু তারা এই ঘোষণার জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত ও ধাপগুলো উপেক্ষা করে। এর ফলে তাদের প্রচেষ্টা একাধিক জটিলতা ও ব্যর্থতার মুখে পড়ে।

অপরদিকে, এইচটিএস ধীরগতির এবং পর্যায়ক্রমিক খিলাফত প্রতিষ্ঠার ধারণা গ্রহণ করে। তারা বিশ্বাস করে যে, একটি ইসলামি কাঠামো প্রতিষ্ঠার আগে প্রাসঙ্গিক শর্তগুলো পূরণ এবং স্থানীয় জনগণের সমর্থন অর্জন জরুরি।

উপসংহার
সংক্ষেপে আদর্শ, লক্ষ্য এবং কৌশলের ক্ষেত্রে হায়’আত তাহরির আশ শাম (এইচটিএস) এবং ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক এন্ড সিরিয়া (আইএসআইএস)–এর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। এইচটিএস স্থানীয় জনগণের আস্থা অর্জন, ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, এবং একটি মধ্যপন্থী ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করতে চায়। অন্যদিকে, আইএসআইএসের চরমপন্থী নীতি বিভাজন, অভ্যন্তরীণ সংঘাত, এবং বৈশ্বিকভাবে একঘরে অবস্থার জন্ম দিয়েছে।

Exit mobile version