ইসমাঈল হানিয়্যাহর প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী : শহীদদের সঙ্গে এক নতুন অঙ্গীকারের দিন

✍🏻 আহমাদ আযীয

উম্মতে মুসলিমার নির্ভীক, সাহসী ও প্রতিরোধপ্রবণ এক নেতার নাম—ইসমাঈল হানিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ। তাঁর শাহাদাতের প্রথম বার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতি আজো হৃদয়ের গভীরে এক দীপ্ত দীপশিখার মতো জ্বলজ্বল করে, প্রতি মুহূর্তে উজ্জ্বল ও আলোকিত হয়ে থাকে।

এক বছর আগে, এই দিনে, ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলনের এই অগ্রসৈনিক, বহুমাত্রিক বঞ্চনা ও প্রবাসজীবনের মধ্যে থেকেও অটল ঈমান ও উচ্চ প্রত্যয়ের সঙ্গে শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হন এবং ইসলামী ইতিহাসের মহান শহীদদের সারিতে যুক্ত হন।

ইসমাঈল হানিয়্যাহ শুধুই একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন জীবন্ত এক মুজাহিদ, সত্যিকারের প্রতিরোধযোদ্ধার জীবন্ত প্রতিমূর্তি। যৌবনকাল থেকেই তিনি হামাস আন্দোলনের অগ্রভাগে থেকেছেন, সহ্য করেছেন দখলদার জায়নবাদীদের কারাগারের নির্মমতা, দীর্ঘ নির্বাসন, এমনকি নিজ পরিবারের একাধিক সদস্যের শাহাদাত। কিন্তু তিনি কখনোই মসজিদে আকসার মুক্তির পথ থেকে একচুলও পিছু হটেননি।

তাঁর জীবন প্রমাণ করে দিয়েছে, স্বাধীনতার একটি মূল্য আছে। আর সেই মূল্য প্রদান করে থাকেন তারা, যারা আল্লাহর পথে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। হানিয়্যাহর শাহাদাত উম্মাহর হৃদয়কে আহত করলেও, তাঁর রক্ত ফিলিস্তিনি প্রতিরোধে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে, নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। ইসলামী ইতিহাসের অন্যান্য শহীদদের রক্তের মতোই, তাঁর রক্তও ফিলিস্তিনি আন্দোলনে নতুন শক্তি ও দৃঢ়তা সঞ্চার করেছে।

আজ, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের এক বছর পর, ফিলিস্তিনের জনগণ ও বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষরা নতুন উদ্দীপনা ও দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে জিহাদ ও মুক্তির পতাকা বহন করছেন। যদিও দখলদার জায়নবাদী শক্তি ভেবেছিল হানিয়্যাহর শাহাদাত প্রতিরোধকে দুর্বল করবে, কিন্তু হাকিকতের পরিপ্রেক্ষিতে তা উল্টোটাই হয়েছে—তাঁর রক্ত উম্মাহর হৃদয়কে আরও একতাবদ্ধ করেছে, ঈমানের শিখাকে আরও প্রজ্বলিত করেছে।

ইসমাঈল হানিয়্যাহ তাঁর শেষ ভাষণগুলোতে স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন—যে আন্দোলনের নেতারা উম্মাহর সম্মানের পথে শাহাদত বরণ করেন, সেই আন্দোলন কখনো পরাজিত হয় না।

হ্যাঁ! ইতিহাস এ কথার সাক্ষী—যেমন প্রথম যুগের শহীদদের রক্ত ইসলামের ভিত্তি মজবুত করেছিল, যেমন আফগানিস্তানের মুজাহিদ নেতাদের শাহাদাত ইসলামী শাসনব্যবস্থার পথ সুগম করেছিল, তেমনিভাবে হানিয়্যাহর পবিত্র রক্তও বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয়ের ও ফিলিস্তিন মুক্তির বার্তা বহন করে।

এই বার্ষিকী শুধু একটি হৃদয়বিদারক ঘটনার স্মরণ নয়, বরং শহীদদের সঙ্গে প্রতিজ্ঞা নবায়নের দিন। উম্মতে মুসলিমাকে বুঝতে হবে, সম্মান ও স্বাধীনতা কখনোই বিনা ত্যাগে অর্জিত হয় না। যেভাবে সাহসী হানিয়্যাহ দারিদ্র্য, কষ্ট ও বঞ্চনার মাঝেও অবিচল ছিলেন, মাথা নত করেননি। আমাদেরও তেমনিভাবে নির্যাতিত ফিলিস্তিনের, বিশেষ করে গাজাবাসীর পাশে দাঁড়াতে হবে এবং সেই পতাকা কখনোই পতন হতে দেওয়া যাবে না, যা শহীদরা তাঁদের রক্ত দিয়ে উঁচু করেছেন।

হে প্রভু! শহীদ ইসমাঈল হানিয়্যাহ এবং এই পথের সকল শহীদের রক্তকে উম্মাহর ঐক্য, জাগরণ ও স্থায়িত্বের দীপ্ত মশাল বানিয়ে দাও, আর সেই দিনকে সন্নিকট করো—যেন মসজিদে আকসা ও সমগ্র ফিলিস্তিন জায়নবাদী দখল থেকে মুক্ত হয়ে যাবে।

নিশ্চয়ই, ইসমাঈল হানিয়্যাহর শাহাদাত আমাদের এ কথাই মনে করিয়ে দেয়—শহীদদের রক্তেই বিজয়ের গোপন রহস্য লুকিয়ে থাকে, আর উম্মতে মুসলিমার জন্য এক দীপ্তিময় ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে; সে ভবিষ্যৎ, যেদিন তাওহীদের পতাকা বাইতুল মুকাদ্দাসের মিনারে উড়বে, ইন শা আল্লাহ।

Exit mobile version