ইসলাম মানবজাতির জন্য এক ঐশী অনুদান!

✍🏻 ইউসুফ বদরি

ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে মানবসভ্যতা লাঞ্ছনা, বর্বরতা, অজ্ঞতা ও নৈতিক অধঃপতনের গভীর খাদে পতিত হয়েছিল। পৃথিবী এমন অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল যে, শুধু চিন্তা ও বোধশক্তির ওপরই নয়, বরং নৈতিক, মানবিক ও সামাজিক মূল্যবোধের ওপরও যেন সীলমোহর পড়ে গিয়েছিল।

মানবমর্যাদা পায়ের তলায় দলিত হচ্ছিল; জীবনের মানদণ্ড ছিল কেবল শক্তি, বংশ, লিঙ্গ ও বস্তুগত বৈষম্যের ওপর নির্ভরশীল। নারী ছিল অধম, এতিম ছিল অসহায়, দুর্বল মানুষ ছিল নিরন্তর নির্যাতনের শিকার। কন্যাশিশু হত্যাকাণ্ড ছিল সাধারণ ব্যাপার। সুদ, অশ্লীলতা, মদ্যপান, লুণ্ঠন, মূর্তিপূজা, জাদুবিদ্যা ও বর্বরতা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। মানুষ তার রবের পরিচয় থেকে বঞ্চিত হয়ে খেয়াল-খুশির দাসে পরিণত হয়েছিল।

কিন্তু যখন আল্লাহ তা‘আলা পথহারা মানবতাকে করুণা করতে ইচ্ছা করলেন, তখন তিনি তাঁর রহমত, ন্যায় ও প্রজ্ঞার দাবি অনুযায়ী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে এমন একটি দীন প্রেরণ করলেন, যিনি মানুষের মর্যাদাকে পুনরুজ্জীবিত করলেন, চিন্তাকে জাগ্রত করলেন, নৈতিকতাকে পরিশুদ্ধ করলেন এবং সমাজকে অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে টেনে এনে হিদায়াতের আলোর পথে পরিচালিত করলেন।

ইসলাম মানুষকে তার প্রাকৃতিক মর্যাদার কথা স্মরণ করিয়ে দিল—এ যে মানুষ আল্লাহর খলিফা, আর প্রকৃত সম্মান কেবল তাকওয়া ও সৎকর্মের মাপকাঠিতে নির্ধারিত হয়; বংশ, বর্ণ, জাতি কিংবা ধনসম্পদের ভিত্তিতে নয়। ইসলাম যুলুমের বিপরীতে ন্যায়, ইনসাফ, পরামর্শ, আমানতদারিত্ব, ধৈর্য, বিশ্বস্ততা, ক্ষমাশীলতা, মর্যাদা, দয়া, বিনয়, তাওহীদ ও তাকওয়ার এমন এক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করল, যা ইতিহাসে এক মহান সভ্যতার জন্ম দিল। যে মানুষ মূর্তির সামনে নতজানু হতো, সে-ই একত্ববাদের পতাকাবাহী হয়ে উঠল।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নেতৃত্বে সেই অবমূল্যায়িত মানুষরাই দুনিয়ার কর্ণধার হয়ে গেল; যারা জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল, তারা মানবজীবনের স্থপতি হয়ে উঠল। ইসলাম মানুষকে শুধু পতন থেকে উদ্ধার করেনি, বরং তাকে আল্লাহ-পরিচয়ের স্বাদ, আত্মার পরিশুদ্ধি এবং সমাজসংস্কারের এক সুস্পষ্ট দিশা প্রদান করেছে।

ইসলামের সর্ববৃহৎ অনুগ্রহ এটাই যে, সে মানবতাকে পুনরায় মর্যাদার পোশাক পরিয়েছে, তাকে পৃথিবীর অন্ধকার থেকে আকাশের আলোর দিকে পৌঁছে দিয়েছে, এবং শিরক, যুলুম, অজ্ঞতা ও বর্বরতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে তাওহীদ, ন্যায়, জ্ঞান ও করুণার দিকে পথপ্রদর্শন করেছে।

তবু আশ্চর্যের বিষয় হলো—এত উজ্জ্বল সত্যের পরও কিছু মানুষ, জাতি ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থা ইসলাম, তার অনুসারী ও ঐশী হিদায়াতের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করে। তারা ইসলামকে কলঙ্কিত করে, তার মূল্যবোধ বিকৃত করে, মুসলিমের রক্ত ঝরায় এবং ইসলামের দাওয়াতের পথে চিন্তাগত ও বস্তুগত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

কিন্তু আমরা তাদের বলি—যদি আপনারা সত্যিই নির্মল প্রকৃতির অধিকারী ও বুদ্ধিমান হন, তবে পক্ষপাত ও বিদ্বেষের চশমা খুলে একবার ইসলামকে অধ্যয়ন করুন, তার বাস্তবতা বুঝুন এবং নিজের স্বভাবজাত আলোকে অনুসরণ করুন। যদি ইসলামকে চিনতে না পারেন তবে তা হবে আপনাদের বোধ ও চিন্তার দুর্বলতা; কিন্তু যদি চিনতে পারেন এবং অন্তর দিয়ে গ্রহণ করেন, তবে এর স্বাদময় প্রভাব কখনো ভুলতে পারবেন না।

Exit mobile version