আফগানিস্তান—সমৃদ্ধ ইতিহাস ও গভীর ইসলামী এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের ধারক এক ভূমি। এই ভূমির শাসনব্যবস্থার জন্য সর্বদা এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন হয়েছে, যা একদিকে তার ধর্মীয় আকাঙ্ক্ষাকে সুরক্ষা দেয়, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করে।
বর্তমানে ইসলামী ইমারাত একটি মধ্যপন্থী নীতির উপর নির্ভর করছে, যা শরিয়াহর নীতিমালার প্রতি দৃঢ় আনুগত্য এবং জাতির ইসলামী পরিচয়কে সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি আফগানিস্তানের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোকে বাস্তববাদী উপায়ে সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছে। এই নীতি নিম্নোক্ত মূল ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত:
১. ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি আনুগত্য
ইসলামী ইমারাত নিশ্চিত করেছে, দেশের প্রতিটি আইন ও বিধান ইসলামী শরিয়াহর ভিত্তিতে প্রণীত হবে। ইসলামী মূল্যবোধ সংরক্ষণ এই নীতির মৌলিক স্তম্ভ, যা সরকার ও সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিফলিত। ইসলামী ফিকহের দিকনির্দেশনায় আইন প্রণয়ন করা হয়, যাতে কুরআনের শিক্ষা ও নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর সঙ্গে কোনো বৈপরীত্য না থাকে।
২. ধর্মীয় পরিচয়ের সুরক্ষা
ইসলামী ইমারাত জনগণের ধর্মীয় চেতনাকে জাগ্রত করতে কুরআনি শিক্ষা, ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা এবং ধর্মীয় গবেষণার প্রসারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মাদরাসা এবং ইসলামী জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রগুলো ইমারাতের শিক্ষানীতির শীর্ষ অগ্রাধিকার।
৩. সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা
ন্যায়বিচার ইসলামের একটি মৌলিক নীতি এবং ইসলামী ইমারাতের নীতির প্রধান ভিত্তি। সমাজের প্রতিটি স্তরের অধিকার রক্ষা এবং যেকোনো ধরনের নির্যাতন বা বৈষম্য দূর করার জন্য কাজ করা হচ্ছে। এই প্রচেষ্টা ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে একটি ন্যায়পরায়ণ ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য বহন করে।
৪. নিরাপত্তা এবং অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণ
ইসলামী ইমারাত দেশজুড়ে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এবং বিশৃঙ্খলা দূরীকরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই প্রচেষ্টা জনগণ ও সরকারের মধ্যে আস্থা পুনর্গঠনে সহায়ক।
৫. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ততা
ইসলামী ইমারাত প্রতিবেশী দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে মধ্যপন্থী নীতির উপর জোর দিচ্ছে। মানবাধিকার, নারীদের অধিকার এবং শিক্ষার মতো বিষয়গুলোতে বৈশ্বিক উদ্বেগ মোকাবিলার প্রচেষ্টা চলছে শরিয়াহর গণ্ডীর মধ্যে থেকেই।
আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা ইসলামী ইমারাতের নীতির একটি প্রধান উপাদান। পারস্পরিক সম্মান, সম্পর্ক উন্নয়ন এবং অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আফগানিস্তানের ভূমিকা পুনঃসংজ্ঞায়িত করার প্রচেষ্টা চলছে। জাতীয় সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে এবং ইসলামী মূল্যবোধ অক্ষুণ্ণ রেখে ইমারাত এক দায়িত্বশীল ও সক্রিয় বৈশ্বিক অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হতে চায়।
বিশেষত ইসলামী ইমারাত তাদের ইসলামী পরিচয় রক্ষা এবং আফগানিস্তানের উপর পশ্চিমা সংস্কৃতির চাপ প্রয়োগ প্রতিহত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
৬. আঞ্চলিক সম্পর্ক শক্তিশালীকরণ
পাকিস্তান, ইরান, চীন এবং রাশিয়ার মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ইসলামী ইমারাতের পররাষ্ট্রনীতির মূল অংশ। এই সম্পর্কগুলো নিরাপত্তা, বাণিজ্য এবং পানি সম্পদের ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
৭. জাতীয় ঐক্যের উন্নয়ন
আফগানিস্তানের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী এবং উপজাতির মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা ইসলামী ইমারাতের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। অভ্যন্তরীণ সংঘাত নিরসন এবং জাতীয় সংহতি শক্তিশালী করার মাধ্যমে একটি সংহত জাতি গঠনের চেষ্টা চলছে।
এই নীতি ইসলামী নীতিমালার সঙ্গে আধুনিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার একটি ভারসাম্যপূর্ণ মডেল উপস্থাপন করে। এটি আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক স্তরে সহযোগিতার একটি পথ তৈরি করে, যা আফগানিস্তানের ঐতিহ্যগত ইসলামী পরিচয়কে রক্ষা করে এবং একই সঙ্গে একটি দায়িত্বশীল বিশ্বসম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে তার ভূমিকা সুসংহত করে।