আহমাদ মানসূর
গত বুধবার ২৪শে আসাদ (১৫ই আগস্ট) ছিল ইসলামি ইমারাতের বিজয় এবং আমেরিকান ঔপনিবেশিকতার পরাজয়ের তৃতীয় বার্ষিকী, যা দেশের সকল অংশের জনগণ ও সরকার পূর্ণ উৎসাহের সাথে উদযাপন করেছে। আফগানিস্তানের ইতিহাসে খুব কমই সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতা উদযাপন করা হয়েছে, যার দ্বারা প্রমাণিত হয় আসলেই আমরা সম্পূর্ণ স্বাধীন।
গত বিশ বছরে ২৮শে আসাদ (১৮ বা ১৯ আগস্ট) ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের দিনটিকে গণতান্ত্রিক সরকার এমনভাবে উদযাপন করেছে যেন তারা নিজেরাই জানে না স্বাধীনতার মানে কী! আমেরিকান বাহিনীর উপস্থিতি (এমনকি আমেরিকান জোটে ব্রিটিশ বাহিনীর উপস্থিতি) এবং তাদের দাসত্ব অবৈধ সরকারের কাছে স্বাধীনতা বলে মনে হয়েছিল, আর তারা পুরো জাতিকে স্বাধীনতা সম্পর্কে তাদের মতো অজ্ঞ বলে মনে করতো। কিন্তু জাতি সত্যিকারের স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীদের চিনতো, স্বাধীনতা অর্জনের প্রয়াসে তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এমনভাবে দাঁড়িয়েছিল যেমন আজ এই স্বাধীনতা উদযাপনে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
আফগানিস্তানের ইসলামি ইমারাত আধ্যাত্মিক, বৈষয়িক, রাজনৈতিক এবং নৈতিক শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে যেভাবে স্বাধীনতা উদযাপন করেছে, তা ছিল খুবই আকর্ষণীয়। ঔপনিবেশিক যুগে ক্ষুদ্র আমেরিকা (Little America) খ্যাত বাগরামে বিভিন্ন দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তাসহ একটি সামরিক কুচকাওয়াজ আয়োজন করা হয়েছিল।
১. আমেরিকার প্রতি বার্তা
আমেরিকায় চলছে নির্বাচনী লড়াই। প্রার্থীরা নিজেদের প্রচারণা ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা স্বরূপ আফগানিস্তানে পরাজয়ের জন্য একে অপরকে দোষারোপ করছে। কিছুদিন আগে ট্রাম্প বলেছিল যে, জো বাইডেন বাগরাম ছেড়েছেন, আমি হলে কখনই ছাড়তাম না। তার মতে তিনি ক্ষমতায় এলে বাগরাম হস্তান্তরের শর্তে তালেবানদের স্বীকৃতি দেবেন। যদিও দোহায় দখলদারিত্বের অবসানের চুক্তিতে ট্রাম্প প্রশাসনই স্বাক্ষর করেছিল, তাহলে তিনি ক্ষমতায় এসে এটা করতে পারলে, তখন কেন করলো না?
আফগানিস্তানের ইসলামি ইমারাত কর্তৃক বাগরামে স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হওয়ায়— আমেরিকা, বিশেষ করে ট্রাম্পের শয়তানি স্বপ্ন বাস্তবায়নের আশার কবর রচিত হয়েছে। তারা জানে যে, এখান থেকেই তাদের ট্যাঙ্ক ও প্লেনগুলি মোটরসাইকেল আরোহী অসহায় তালেবানদের তাড়া করতো। বাগরাম এখন এদেশের প্রকৃত সন্তানদের হাতে, এটা পুনরুদ্ধারের আশা ছেড়ে দাও!
২. পুতুল সরকার ও এর ব্যবস্থাপনার প্রতি বার্তা
এটা সেই বাগরাম, যেখানে তোমাদের বাবা আর্গ (প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস) থেকে ট্রাম্পের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল, কিন্তু ট্রাম্প তাকে তার সৈন্যের মাধ্যমে থামিয়ে দিয়েছিল, দেখাটা পর্যন্ত করেনি। এই সেই বাগরাম, যেখানে আমেরিকানদের স্যালুট জানাতে তোমাদের কর্মকর্তারা যেতো। কিন্তু আজ সেই তালেবানরা, যারা আমেরিকাকে পরাজিত করে তাদের কাছ থেকে এটা ছিনিয়ে নিয়েছিলেন, তাঁরা এখানে স্বাধীনতা উদযাপন করছেন। তোমাদেরও এখন আশা ছেড়ে দেয়া উচিত। আফগানিস্তানের ইসলামি ইমারাত জাতীয় মূল্যবোধ ভালোভাবে বোঝে, এই ভূখণ্ডের গুরুত্ব সম্পর্কে তাঁরা সম্মুখ অবগত। স্বাধীনতার জন্য তাঁরা কতো ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা তোমরা নিজেরাই দেখেছো।
৩. প্রতিবেশী এবং আঞ্চলিক দেশগুলির প্রতি বার্তা
বাগরাম আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আমরা কখনো কাউকে এর দখন নিতে দেব না। আমরা বিদেশিদের ব্যাপারে খুবই সংবেদনশীল। বিশ্বের দূতাবাসগুলোকে আইনগতভাবে এবং নীতিগতভাবে মেনে নেওয়া যেতে পারে, কিন্তু এখানে সামরিক উপস্থিতি কখনই স্বীকৃত হতে পারে না। জেনে রাখো আফগানিস্তান দখলে অন্যদের সাহায্য করা তোমাদেরকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। আশা করি তোমরা এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছো।
সংক্ষেপে তালেবানরা অত্যন্ত সূক্ষ্ম রাজনীতি করছে। আল্লাহর রহমতে মুসলিম এবং আফগানরা রাজনীতি এবং শাসনব্যবস্থা বোঝে না বা করতে পারে না এমন ধারণা মিথ্যা ও অবৈধ প্রমাণিত হয়েছে। একসময় আফগানদের পাতা থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল, আজ সেই আফগানরা এক সামরিক পরাশক্তি। শত্রুরা বুঝতে পেরেছে যে তারা পরাজিত হয়েছে এবং তালেবানরা বিজয়ী হয়েছে। এখন তারা আর তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না। আফগান ও সমগ্র মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ।