আইএস একটি মহামারির নাম

[ত্রয়োদশ পর্ব]

#image_title

✍🏻 আবু হাজার আল কুর্দি

“হাজর আল আসওয়াদ” অঞ্চলে আইএসআইএসের আক্রমণ এবং আধিপত্য:

যখনই আইএসআইএসের নাম নেয়া হয়, এই গোষ্ঠীর অপরাধ ও বিশ্বাসঘাতকতা প্রতিটি মুসলিমের অন্তরে ঘা সৃষ্টি করে। তারা বিশ্বাস করে যে, আইএসআইএসের বিষাক্ত ছোরা অধিকাংশই সুন্নি জনগণের দেহ-মনকে ক্ষতবিক্ষত করেছে।

সিরিয়ায় মুজাহিদীনদের থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশাল এলাকাগুলো নাসিরি বাহিনীকে পুনরায় দখল করতে আইএসআইএস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

এভাবেই আইএসআইএস ভিত্তিহীন অজুহাত দিয়ে মুজাহিদীনদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সুন্নি এলাকাগুলোয় আক্রমণ করে দখল করে কিছুদিন পর তা তারা বাশার আল আসাদের বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে দেয়।

শত শত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান যা পূর্বে মুজাহিদীনদের নিয়ন্ত্রণে ছিল, আইএসআইএস সেগুলো দখলে নিয়ে কিছুদিন পর তারা সেখান থেকে চলে যায়; ফলে সেই এলাকাগুলো ইরান ও নাসিরি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তন্মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হলো— দামেস্কের দক্ষিণ প্রান্তে এবং ইয়ারমুক ক্যাম্পের পাশে অবস্থিত “হাজর আল আসওয়াদ”, যেটি ২০১৫ সালে আইএসআইএসের দখলে আসে। বাগদাদি বিদ্রোহীদের দ্বারা হাজর আল আসওয়াদ দখলের বিষয়ে লেখার আগে আমি এই এলাকাটির কৌশলগত গুরুত্ব সম্পর্কে নিম্নে কয়েকটি পয়েন্ট উল্লেখ করছি:

১. দামেস্কের নিকটবর্তী হওয়া:
হাজর আল আসওয়াদ দামেস্কের দক্ষিণে এবং সিরিয়ার রাজধানীর নিকটবর্তী অবস্থিত হওয়ার কারণে এই এলাকাটি সরকারের বিরুদ্ধে মুজাহিদীনদের অপারেশনের একটি প্রধান ক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল। এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ দামেস্ক এবং এর আশেপাশের মুজাহিদীনদের আক্রমণ এবং সামরিক অভিযানকে সহজতর করেছিল। যা সিরিয়া সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

২. ইয়ারমুক ক্যাম্পের সাথে সীমান্ত:
হাজর আল আসওয়াদ ইয়ারমুক ক্যাম্পের কাছে অবস্থিত, যেটিকে সিরিয়ার সবচেয়ে বড় ফিলিস্তিনি শিবির হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ইয়ারমুক ক্যাম্প রাজনৈতিক, মানবসম্পদ এবং সামাজিক দিক থেকে সমৃদ্ধ হওয়ায় বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

মুজাহিদীনদের ইয়ারমুক ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার করতে এবং জায়গাটিকে বাহিনী সরবরাহের উৎস হিসেবে ব্যবহার করতে সক্ষম করে হাজর আল আসওয়াদ এলাকার নিয়ন্ত্রণ।

৩. রিসোর্স ডেলিভারি এবং সাপোর্ট চ্যানেল:
এলাকাটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ সরবরাহ রুট বরাবর অবস্থিত হওয়ায় মুজাহিদীনরা অস্ত্র ও সম্পদ সরবরাহ করতে এটি ব্যবহার করতেন। হাজর আল আসওয়াদ দক্ষিণ থেকে কেন্দ্রীয় অঞ্চলে বাহিনী ও সম্পদ স্থানান্তরের জন্য একটি আদর্শ এলাকা ছিল।

৪. মুজাহিদীনদের আশ্রয়স্থল:
বিভিন্ন জিহাদি এলাকা থেকে আগত আহত সিরিয়ান মুজাহিদীনদের জন্য হাজর আল আসওয়াদ একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল। অন্যান্য এলাকায় অসুবিধা ও সমস্যার সম্মুখীন হওয়া জিহাদি গোষ্ঠীগুলিও এই এলাকাতে ফিরে আসতো। যাতে তারা এখানে তাদের বাহিনীকে রসদ সরবরাহ করে পুনরায় ময়দানে পাঠাতে পারে।

৫. পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রভাব:
হাজর আল আসওয়াদের নিয়ন্ত্রণ লাভের ফলে সুন্নি গোষ্ঠীগুলোর দামেস্কের দক্ষিণের আশেপাশের এলাকা এবং গ্রামীণ ও শহুরে অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করার সু্যোগ হয়েছিল। দামেস্ক এবং অন্যান্য অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলিকে প্রভাবিত করার জন্য এই অঞ্চলটি একটি সামরিক ও সরবরাহ কেন্দ্র হিসাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

চলবে ইনশাআল্লাহ…

Abu Jundab Abdullah
Exit mobile version