আইএস একটি মহামারির নাম | দ্বাবিংশ পর্ব

✍🏻 আবু হাজার আল কুর্দি

সাদ্দাম হুসাইনের জন্মভূমি তিকরিত দখল:

দাঈশের (داعش) আবির্ভাব আহলে সুন্নতের শত্রুদের জন্য এক বিশাল সুফল বয়ে এনেছিল; কেননা তাদের আবির্ভাব এমন অঞ্চলগুলোতে হয়েছিল, যেখানে সুন্নি তরুণরা বছরের পর বছর প্রতিরোধ গড়ে তুলে রাফেযিদের প্রকাশ্য আধিপত্য কায়েম রুখে দিয়েছিল। অতঃপর দাঈশ যুলুমের ছায়া বিস্তার করে এবং তরুণদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পরিণত করে হতাশায়। তিকরিতও ছিল এমন গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত শহরগুলোর একটি।

তিকরিতের কৌশলগত গুরুত্ব:

তিকরিত হলো সাদ্দাম হুসাইনের জন্মস্থান এবং সালাহউদ্দিন প্রদেশের কেন্দ্র, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাসিন্দা আহলে সুন্নত। এই শহরটি দাঈশের জন্য সামরিক, রাজনৈতিক ও মানসিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ শহরের দখল ছিল ইরাকের উত্তরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কর্তৃত্ব কায়েম করার সমান এবং পুরো অঞ্চলজুড়ে অশুভ শক্তির এক ঘূর্ণিবাতাস ছড়িয়ে দেওয়ার বার্তা।

দাঈশ কীভাবে তিকরিত দখল করল?

২০১৪ সালের জুন মাসে, মসুল দখলের পর দাঈশ দ্রুত তিকরিত অভিমুখে অগ্রসর হয়। সে সময় ইরাকি বাহিনী মানসিক ও সাংগঠনিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। বহু কমান্ডার ও সেনা পালিয়ে যায় অথবা অস্ত্র ত্যাগ করে, যার ফলে দাঈশ তেমন কোনো বড় সংঘর্ষ ছাড়াই তিকরিতের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।

দাঈশ কীভাবে ইরাকি জনগণের মধ্যে ঘৃণা ছড়িয়ে দিয়ে আহলে সুন্নত ও অন্যান্য ধর্মমতের মধ্যে প্রকাশ্য বিদ্বেষ ও বিদ্রূপ সৃষ্টি করল?

আহলে সুন্নতের প্রতি রাফেযিদের ঘৃণা ইতিহাসজুড়েই স্পষ্ট ও সুপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু এই ঘৃণা কীভাবে এবং কার মাধ্যমে উসকে দেওয়া হলো, তার একটি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত তুলে ধরা যায়:

স্পাইকার হত্যাকাণ্ড: একবিংশ শতাব্দীর এক ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক অপরাধ

অবস্থান:
তিকরিতের নিকটে অবস্থিত স্পাইকার বিমানঘাঁটি—যা মূলত হাজার হাজার শিয়া সেনা-প্রশিক্ষণার্থীদের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
ঘটনার বিবরণ:
বিমানঘাঁটি পতনের পর, দাঈশ প্রায় ১৭০০ থেকে ২০০০ প্রশিক্ষণার্থীকে আটক করে। তাদের কাফেলার আকারে দজলা নদীর তীর ঘেঁষে সাদ্দাম হুসাইনের প্রাসাদ ও অন্যান্য এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। বেশিরভাগকে বড় বড় গর্তে বা দজলা নদীর পাড়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। তাদেরকে দলবদ্ধভাবে হত্যা করা হয় এবং গণকবরে সমাহিত করা হয়। এই অপরাধের ভিডিও ও ছবি দাঈশ নিজেই প্রকাশ করে, যাতে বিরোধীদের ও ইরাকি সেনাদের হৃদয়ে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

উদ্দেশ্য:
শিয়াদের সাম্প্রদায়িক নিধন, ভীতি ছড়িয়ে দেওয়া এবং সুন্নিদের বিরুদ্ধে হত্যা ও গণহত্যার অজুহাত তৈরি করা।

Exit mobile version