মুসলিমরা কেন পিছিয়ে পড়ল?

✍🏻 হাসসান মুজাহিদ

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মুসলিমরা সবসময় কাফিরদের উপর বিজয়ী থাকতেন। যখনই তাঁরা যুদ্ধের উদ্দেশ্যে নিজ ভূমি ছেড়ে বের হতেন—হোক না তা এক মাসের পথ, তখনই শত্রুপক্ষ ভয়ে কাঁপতে শুরু করত এবং আত্মসমর্পণের আবেদন জানাতে থাকত।

বদরের যুদ্ধে ৩১৩ জন মুজাহিদ এক হাজার সশস্ত্র কাফিরকে পরাজিত করেছিলেন। খন্দকের যুদ্ধে স্বল্পসংখ্যক মুসলিম দশ হাজার কাফিরের মোকাবেলায় কৌশল হিসেবে খন্দক খনন করেছিলেন এবং সাফল্য অর্জন করেছিলেন। খাইবারের দুর্ভেদ্য দুর্গসমূহ জয় করা হয়েছিল, যা মোটেও সহজ ছিল না। এবং মুতার যুদ্ধে মাত্র তিন হাজার মুসলিম দুই লক্ষ সৈন্য বাহিনীর মুখোমুখি হয়ে তীব্র প্রতিরোধের পর বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন।

এভাবেই খুলাফায়ে রাশেদীন, উমাইয়াহ, আব্বাসি ও উসমানি খেলাফতের স্বর্ণযুগগুলো মুসলিমদের বিজয়ের সাক্ষ্য হয়ে রয়েছে, যেখানে কাফিররা একের পর এক পরাজয়ের অভিজ্ঞতা হাসিল করেছে। কিন্তু যখন উসমানি খেলাফতের পতন ঘটল, মুসলিমরা নিজেদের পথ হারিয়ে ফেলল; আর কাফিররা তিনটি মৌলিক কৌশল গ্রহণ করল:
১. শত্রুতা নয়, বরং ঐক্যের নীতি গ্রহণ
ইয়াহুদিরা খ্রিস্টানদের হাত ধরল, তারা আবার মুশরিকদের সঙ্গী করল এবং সকলে মিলে ইসলামের বিরুদ্ধে একক কাতারে দাঁড়িয়ে গেল।
২. জ্ঞান, শিক্ষা ও আধুনিক প্রযুক্তিকে শক্তিতে রূপান্তরিত করা
তারা জ্ঞান ও প্রযুক্তিকে নিজেদের শক্তির মাধ্যম বানাল।
৩. মুসলিমদের চিন্তা-চেতনায় আঘাত হানা
তারা মুসলিমদের মানসিকভাবে পরাধীন করল, তাদের দীন, সভ্যতা ও মূল্যবোধের উপর থেকে আস্থা তুলে দিল, এমনকি ইসলামের নাম নিয়েই মুসলিমদের ইসলামবিরোধী করে তুলল।

অন্যদিকে মুসলিমরা এই সাফল্যের তিনটি মূল ভিত্তিকে অবহেলা করল:
ঐক্যের পরিবর্তে বিভেদ, পক্ষপাত, বিবাদ ও দ্বন্দ্বে জড়ালো।
আল্লাহর দীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে পার্থিব ভোগবিলাসের জালে আবদ্ধ হয়ে পড়ল।
আধুনিক জ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিন্তার পরিবর্তে অনর্থক বিষয়বস্তুর প্রতি অনুরাগ গড়ে তুলল এবং উদ্দেশ্যহীন জীবনের দিকে ঝুঁকে পড়ল।

ফলে আজ মাত্র ১ কোটি ৩০ লাখ ইয়াহুদি দুইশ কোটি মুসলিমের উপর প্রভাব বিস্তার করে আছে। কাফিররা কম্পিউটার প্রযুক্তির সাহায্যে ড্রোন চালিয়ে মুসলিম ভূমিতে বোমা বর্ষণ করে, অথচ মুসলিমরা তা প্রতিরোধ করতে অক্ষম। কাফিররা মুসলিমদের পাখির মতো একে একে হত্যা করে চলে, আর মুসলিমরা কেবল অশ্রুসিক্ত চোখে তা দেখেই চলে।

আমাদের বুঝতে হবে, যখন যুদ্ধ শক্তির, তখন কান্না ও বিলাপ কোনো ফল দেয় না। যদি মুসলিমদের প্রস্তুতির সামর্থ্য না থাকত, তাহলে আল্লাহ তায়ালা এ নির্দেশ দিতেন না:
“وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ”
অর্থ: “তাদের মোকাবেলায় যতটা সম্ভব শক্তি প্রস্তুত করো।”

আমাদের কাছে সম্মান ও শক্তির সব উৎসই বিদ্যমান: খনিজ সম্পদ, রত্ন, তেল, গ্যাস এবং আধুনিক প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় উপকরণ—সবই আমাদের ভূমিতে রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা অলসতা ও গাফেলতিকে বেছে নিয়েছি, পরিশ্রম, শিক্ষা ও ঐক্যের পথ ছেড়ে দিয়েছি এবং অপমানজনক জীবনে তুষ্ট হয়ে গেছি।

আমরা যদি আবারও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই, তাহলে আমাদের জাগতে হবে, ভাবতে হবে, শিক্ষার দিকে ফিরে যেতে হবে, প্রযুক্তিকে গ্রহণ করতে হবে, ঐক্যের পথে ফিরতে হবে এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হবে। কারণ, আল্লাহ তায়ালা কোনো জাতির অবস্থা ততক্ষণ পর্যন্ত পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরাই নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন সাধন করে।

 

Exit mobile version