বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা রিপোর্ট, আঞ্চলিক সূত্র ও প্রামাণ্য তথ্যের আলোকে স্পষ্ট প্রতীয়মান যে, দাঈশ—যে সংগঠন নিজেকে ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ হিসেবে প্রচার করে, ইসলামী ইমারাতের সর্বাত্মক ও লক্ষ্যভিত্তিক অভিযানের পর আফগানিস্তান থেকে পলায়ন করেছে এবং বর্তমানে পাকিস্তানের ভূমিকে নিরাপদ আশ্রয়, সাংগঠনিক কেন্দ্র ও ষড়যন্ত্রের ঘাঁটি রূপে ব্যবহার করছে।
পাকিস্তানে শুধু দাঈশ সদস্যদের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতাই করা হচ্ছে না; তাদের প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম ও সম্পদ সরবরাহ করা হয়; পাশাপাশি তাদের জন্য সামরিক মিশনও প্রস্তুত করা হয় এবং পরবর্তীতে প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক দেশসমূহে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড, অস্থিতিশীলতা ও ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। এই কার্যপদ্ধতি শুধু প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর জাতীয় নিরাপত্তার জন্যই হুমকি নয়; বরং সমগ্র অঞ্চল—বিশেষত মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার জন্য এক গভীর ও ভয়াবহ সতর্কবার্তা।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানসমূহের এই ঘোষ্য বা আড়ালিক সমর্থন, দাঈশের সঙ্গে দ্বিমুখী নীতির উন্মুক্ত প্রমাণ। যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ সংকটকে গুরুত্বসহকারে মূল্যায়ন না করে এবং পাকিস্তানকে তার দায়িত্ব পালনে বাধ্য না করে, তবে এই অগ্নিকুণ্ড সমগ্র অঞ্চলকে গ্রাস করতে সক্ষম। বুরহান যায়েদের হত্যাকাণ্ড পাকিস্তানের ভূমিতে দাঈশের উপস্থিতির সুস্পষ্ট ও অখণ্ড প্রমাণ। ‘আল মিরসাদ’-এর নির্ভরযোগ্য ও গোপন সূত্রভিত্তিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পাঞ্জাবের কাসুর জেলায় অজ্ঞাত সশস্ত্র ব্যক্তিরা দাঈশের উচ্চপর্যায়ের নেতা যে ‘বুরহান যায়েদ’ নামে পরিচিত ছিল, তাকে হত্যা করে। বুরহান দাঈশের সাংগঠনিক কাঠামোর এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন, যে পাকিস্তান থেকে খারিজীদের নেটওয়ার্কের পৃষ্ঠপোষকতা, যোগাযোগ ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। তার উপস্থিতি প্রমাণ করে যে, পাকিস্তানের ভূমি দাঈশের গোপন কর্মকাণ্ডে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বুরহান যায়েদের মৃত্যুর পর পাকিস্তানি সংস্থাগুলো তাদের দাঈশ-সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানায়; কিন্তু ‘আল মিরসাদ’ তার একটি ছবি প্রকাশ করে, যেখানে তাকে পাকিস্তানের সুপরিচিত দাঈশি কমান্ডার উমর বাজৌড়ির সঙ্গে এক স্থানে দেখা যায়। এ সেই উমর বাজৌড়ি, যাকে ২০ অক্টোবর ২০২৪ সালে প্রদেশ কুনরের মানোগাই তহসিলে ইসলামী ইমারাতের নিরাপত্তা বাহিনী এক দায়েশ সদস্যসহ হত্যা করেছিল।
বিশ্বস্ত গোপন উৎস থেকে প্রাপ্ত এ ছবি পাকিস্তানে অবস্থানরত দাঈশি নেটওয়ার্কগুলোর পারস্পরিক যোগাযোগ, সমন্বয় ও অভিন্ন উদ্দেশ্যের দৃশ্যমান প্রমাণ। এ প্রত্যক্ষ দলিল পাকিস্তানের সেই দাবিকে উন্মোচিত করে, যেখানে তারা নিজেদের ভূখণ্ডে দায়েশের কোনো কার্যক্রম নেই বলে দাবি করে থাকে।
এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী ইমারাত আফগানিস্তানের সংবেদনশীল গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বহু পাকিস্তানি দাঈশ সদস্যকে জীবিত গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত খারিজীরা শুধু দাঈশের কাঠামো, দায়িত্ব ও কেন্দ্রসমূহের তথ্যই দেয়নি; বরং স্বীকারোক্তিতে স্পষ্ট করেছে যে, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ তাদের আর্থিক সহায়তা, সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ প্রদান করত। তাদের এসব স্বীকারোক্তি সেই ধারাবাহিক প্রমাণশ্রেণির অংশ, যা দেখায়—পাকিস্তান দাঈশকে ব্যবহার করে আফগানিস্তান ও সমগ্র অঞ্চলের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে পৃষ্ঠপোষকতা করছে।
এমন পরিস্থিতিতে, যখন আফগানিস্তানে দাঈশ ইসলামী ইমারাতের কঠোর ও ধারাবাহিক অভিযানের মুখোমুখি, পাকিস্তান এই গোষ্ঠীকে পুনর্গঠিত ও পুনরুজ্জীবিত হওয়ার পরিবেশ প্রদান করছে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ, জাতিসংঘ, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও আঞ্চলিক বিশ্লেষকদের নিকট এই বাস্তবতা প্রতিষ্ঠিত যে, পাকিস্তানের ভূখণ্ড দায়েশের কার্যকলাপ, আশ্রয় ও ষড়যন্ত্র প্রণয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
এখন সময় এসেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পাকিস্তানকে জবাবদিহিতার আওতায় আনবে এবং এই গোষ্ঠীর সম্পূর্ণ উচ্ছেদ নিশ্চিত করবে। অন্যথায়, বিশ্ব আবার এমন রক্তাক্ত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে, যার প্রতিকার অসম্ভব হয়ে পড়বে।
