মানবজাতি নানা শ্রেণিতে বিভক্ত, কিন্তু এক বিশেষ শ্রেণি এমনও আছে, যারা নিজে কিছু হয়ে উঠতে পারে না, নীতিপূর্ণ চেষ্টাও করে না; বরং অপরের আলোয় নিজেদের ছায়াকেও পর্বত প্রতিপন্ন করার নিরন্তর প্রয়াসে মগ্ন থাকে। এই শ্রেণির মানুষ শ্রম, নিষ্ঠা ও ধারাবাহিকতার প্রকৃত সোপান থেকে বঞ্চিত, তবুও “কিছু একটা” হয়ে ওঠার অস্থির বাসনায় এমন পথ বেছে নেয় যা সত্য ও মর্যাদার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
এরা প্রায়শই নিজেদের ব্যর্থতার দায় অন্যের সাফল্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে আত্মপ্রবঞ্চনায় লিপ্ত হয়। তাদের অন্তরে এমন এক শূন্যতা বিরাজমান, যা হিংসা, বঞ্চনাবোধ এবং হীনম্মন্যতার জটিল অনুভূতিতে পূর্ণ। যখন তারা নিজেরা কোনো উল্লেখযোগ্য কর্ম সম্পাদনে সক্ষম হয় না, তখন অপরের কৃতিত্বকে বিতর্কিত করে তোলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারা মিথ্যার জাল বুনে, গুজব রটায় এবং এইভাবে নিজের আত্মাকে প্রবোধ দেওয়ার ব্যর্থ প্রয়াস চালায়—“আমিও তো কিছু একটা!”
এই চরিত্রপ্রবণতা যারা ধারণ করে, তাদেরই একজন সিআইএর এক প্রাক্তন গোয়েন্দা, সারা অ্যাডামস। যার সমগ্র কর্মজীবনে এমন কোনো কৃতিত্ব নেই, যা সে গর্বভরে উপস্থাপন করতে পারে। তবুও নির্লজ্জভাবে সামাজিক মাধ্যমে বসে, এক বিভ্রান্ত মূর্খের মতো, সে ইসলামী ইমারাতে আফগানিস্তানের দাঈশ-বিরোধী সাফল্যমণ্ডিত অভিযানের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে চলেছে।
ইসলামী ইমারাত আফগানিস্তান সম্পর্কিত সারা অ্যাডামস নামক এই মিথ্যাবাদিনী নারীর প্রায় প্রতিটি বক্তব্য ও তথ্যানুসন্ধান বারংবার মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু মিথ্যাচারের জন্য সে কখনো অনুতপ্ত হয়নি, বরং পরদিন পুনরায় নতুন মিথ্যার পসরা সাজিয়ে হাজির হয়।
গত সপ্তাহে কাবুলে ইসলামী ইমারাত আফগানিস্তানের গোয়েন্দা বাহিনী দাঈশের বিরুদ্ধে এক সাফল্যমণ্ডিত অভিযান পরিচালনা করে, যার ফলে তাদের এক বিস্ফোরক কারখানা ধ্বংস করা হয় এবং দুইজন গুরুত্বপূর্ণ সন্ত্রাসী নিহত হয়। এই প্রসঙ্গে ঐ নারীমহোদয়া দাবি করে যে, এটি একটি মনগড়া অভিযান ছিল এবং এক কল্পিত কাহিনি নির্মাণ করে বলে— যে কম্পাউন্ডে অভিযান চালানো হয়েছে, সেটি তালিবানের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা।
সাম্প্রতিক কালের মধ্যেই ঐ নারী ধারাবাহিকভাবে “Day 1”, “Day 2”, “Day 3”, “Day 4” শিরোনামে বহু ভিত্তিহীন অভিযোগ উপস্থাপন করেছে, যা প্রত্যেকটিই নিরেট মিথ্যা। সে এমন ঘটনাসমূহকে দাঈশের সঙ্গে যুক্ত করে উপস্থাপন করেছেন, যেগুলোর কিছু ছিল ব্যক্তিগত শত্রুতা ও অপরাধমূলক প্রকৃতির।
এই অবিবেচনাপ্রসূত দাবিগুলো থেকেই তার চিন্তাধারার অন্তঃস্থল স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং প্রতীয়মান হয় যে, তার সমগ্র পেশাগত জীবন মিথ্যা অভিযান ও জাল সাফল্যের ভিত্তিতে গঠিত।
আজকের এই জ্ঞানতরঙ্গিত যুগে কি কেউ নিজের বাসভবন, কম্পাউন্ড বা দপ্তরকে দাঈশের ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত করার মতো বালসুলভ দুঃসাহস প্রদর্শন করতে পারে? এই দাবিই কি তাঁর হীনম্মন্যতাজনিত মানসিক স্থিতির পরিচয় বহন করে না?
সারা অ্যাডামস তাঁর একটি পোস্টে দাবি করেছে যে, যে স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে, তা নাকি “যুলফিকার” নামক কোনো প্রতিষ্ঠানের দপ্তর ছিল— যা সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত।
ইসলামী ইমারাত আফগানিস্তান দাঈশকে আফগান জনগণ ও ইসলামের শত্রু মনে করে। সে কারণেই দাঈশের বিরুদ্ধে ব্যাপক কৌশল ও দৃঢ়তার সাথে অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছে। ইসলামী ইমারাতের পুনঃপ্রতিষ্ঠার বহু আগেই দাঈশ-বিরোধী সংগ্রাম শুরু হয়েছিল, এবং তারাই ছিল— যাঁরা এই ফিতনার ভয়াল বিস্তার রুখে দিয়ে আফগান ভূমিকে তা থেকে মুক্ত করেছিলেন। আর যখনই দাঈশ আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, ইসলামী ইমারাত তাদের সেই মাথা চূর্ণ করে দেয়।
ইসলামী ইমারাত আফগানিস্তানের সফল অভিযানের ফলে এখন পর্যন্ত শত শত দাঈশি খারিজি নিহত হয়েছে, বহুজন আটক এবং হাজারো লোক আফগানিস্তান ছেড়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহে পালিয়ে গিয়েছে।
দাঈশবিরোধী এসব কার্যক্রমের কার্যকারিতা স্বীকার করেছে শুধু প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহই নয়, এমনকি ইসলামী ইমারাতের বিরোধীরাও; এর মধ্যে সেই সিআইএও রয়েছে, যেখানে সারা অ্যাডামস একদা কর্মরত ছিল। এখন প্রশ্ন হলো, সে কি তার সংস্থার চেয়েও বড় হয়ে গেছে —যা নিজেই তার বক্তব্যকে অসার বলে প্রত্যাখ্যান করেছে?
ইসলামী ইমারাত আফগানিস্তান কারো নির্দেশে নয়, বরং জাতি, দেশ ও ধর্মের বৃহত্তর কল্যাণকে সামনে রেখে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তাদের দাঈশবিরোধী সংগ্রাম এই ফিতনার বিলুপ্তি এবং জনগণের নিরাপত্তার লক্ষ্যে পরিচালিত।
হাজারো সফল অভিযানের মতো, গত সপ্তাহর অপারেশনটিও তাদের নিজস্ব নাগরিকদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি সাহসিকতাপূর্ণ, যথাযথ এবং সুনিপুণ পদক্ষেপ ছিল, যার সত্যতা প্রমাণে আমাদের কোনো মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার প্রয়োজন নেই; বরং এ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রমাণ ও তথ্য আমাদের হাতে সংরক্ষিত রয়েছে।
সারা অ্যাডামস নামধারী এই নারীর ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত অভিযোগসমূহ থেকে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়— এই ধরণের চরিত্রাবলী প্রকৃতপক্ষে দাঈশের নেপথ্য-সমর্থক। তারা সংবাদমাধ্যমে দাঈশকে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করে, যাতে তাদের স্বার্থ রক্ষা হয়। যদি তারা দাঈশকে সংবাদমাধ্যমে মহিমান্বিত না করে অথবা দাঈশবিরোধী অভিযানে প্রশ্ন না তোলে, তবে তাদের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যাবে এবং কর্মসংস্থানও সমাপ্ত হবে।
আমরা এই শ্রেণির মানুষকে স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই— তোমরা আফগান জাতির ঈমান, দৃঢ়তা ও সংকল্পের সম্মুখে ইতোমধ্যে পরাজয় স্বীকার করে ফেলেছ। এখন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রচারণা দিয়ে আর কিছুই অর্জন করা সম্ভব নয়। সত্যের আলো নিয়ে এই প্রান্তরেও আমরা তোমাদের পরাজিত করবো, ইন শা আল্লাহ।