✍🏻 উসামা হুম্মাম
গত দুই পর্বে আমরা সিরিয়ায় সালিম ছদ্মনামধারী এক দাঈশ সদস্যের সাক্ষাৎকারের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরেছিলাম। জার্গেন টোডেনহোফার এবং সালিমের মধ্যকার যোগাযোগ একসময় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এরপর আবু ক্বাতাদা নামে পরিচিত এক জার্মান নাগরিক, যিনি ২০১৪ সালে দাঈশ গোষ্ঠীর একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন, তার সাথে টোডেনহোফার নতুন করে সংযুক্ত হন।
আবু ক্বাতাদার প্রকৃত নাম ক্রিস্টিয়ান এমদে। তিনি পূর্বে প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টধর্মের অনুসারী ছিলেন। টোডেনহোফারের সাথে তার সংযোগ স্থাপন হয় এবং তাকে দাঈশের মিডিয়া শাখার একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
আবু ক্বাতাদা ছিলেন মিডিয়া বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষ এবং সচেতন দাঈশ সদস্য। যিনি দাঈশ নেতৃত্ব সম্পর্কে কোনো তথ্য ফাঁস করতে চাননি। তার সাক্ষাৎকারের মূল লক্ষ্য ছিল এই গোষ্ঠীর প্রকৃত বিষয়বস্তু গোপন রাখা। অধিকাংশ বিষয়ে তিনি নীরব থেকে গেছেন এবং অনেক বিষয়ে এমন উত্তর প্রদান করেছেন— যা ছিল সাবধানী এবং কৌশলী। তিনি জানতেন যে তার সাক্ষাৎকারের প্রতিটি শব্দ প্রকাশিত হবে, তথাপি তিনি নিজের আদর্শের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে কোনো কার্পণ্য করেননি।
দাঈশের আদর্শ এবং তাদের কার্যপদ্ধতির মূলনীতি হলো, যারা তাদের মতাদর্শের সামান্যতম বিরোধিতা করে— এমন মুসলিম ও জিহাদি গোষ্ঠীগুলোকে তাকফির করে তাদের ইসলাম থেকে বের করে দেওয়া এবং নিজেদের প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা।
আবু ক্বাতাদাকে যখন হামাস আন্দোলন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়, তখন তিনি নির্দ্বিধায় বলেন:
“হামাস এবং হিজবুল্লাহ একই প্রকারের গোষ্ঠী। হামাস আসলে ইসলামের আবরণে আবৃত এক গণতান্ত্রিক দল। আপনার মনের বিভ্রান্তি দূর করতে বলছি, আমাদের গাযযার সঙ্গীরা জানিয়েছে যে হামাস আমাদের জন্য ইসরায়েলের চেয়েও ভয়ঙ্কর শত্রু।”
মধ্যপ্রাচ্যে দাঈশ সন্ত্রাসীদের সংখ্যা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে আবু ক্বাতাদা উত্তর দেন:
“আমি সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান জানি না। তবে এটুকু বলতে পারি, প্রতিদিন পঞ্চাশজন রুশভাষী ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। বলা হয়, প্রতি মাসে প্রায় ছয় হাজার যোদ্ধা আমাদের কাতারে যোগ দিচ্ছে। মসুল শহর দখলের পর ইরাকে আমাদের মিলিশিয়াদের সংখ্যা দশগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।”
মধ্যপ্রাচ্যে দাঈশের সদস্যপদে রুশ ভাষাভাষী দেশগুলোর (যেগুলো একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল) নাগরিকদের যোগদান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই দেশগুলোর, বিশেষত তাজিকিস্তানের নাগরিকরা গত এক দশক ধরে দাঈশ গোষ্ঠীতে সক্রিয়ভাবে যোগ দিয়ে আসছে।
তাজিকিস্তান এবং বৃহত্তর উত্তর ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর নাগরিকরা শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যে নয়, বরং গত তিন বছরে আফগানিস্তানেও আত্মঘাতী হামলার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।
উত্তর ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে ইসলামের অধিকাংশ বিধানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো এতটাই কঠোর যে, সেগুলো ধর্মীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রকে প্রায় শূন্যে পরিণত করেছে। এই অঞ্চলের মুসলিমদের ওপর এমনভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে যে, তারা নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনেও শরিয়াহ্ মেনে চলার সুযোগ পায় না।
এই বিধিনিষেধগুলো তথাকথিত সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের নামে আরোপিত হলেও প্রকৃতপক্ষে এগুলো মুসলিমদের মনে চরম হতাশা এবং অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে। এর ফলস্বরূপ, দাঈশের মতো উগ্রবাদী ও তাকফিরি গোষ্ঠীগুলো তাদের সহজ শিকারে পরিণত হয়েছে।