✍🏻 জুনাইদ যাহিদ
একজন মুসলিমের জন্য আবশ্যক যে, সে সকল বিষয়ে তার ধর্মীয় মূল্যবোধ ও মূলনীতি থেকে নির্দেশনা অর্জন করবে। তদনুসারে আমি বিবেচনাধীন বিষয়ে কুরআনের দিকে রুজু করছি যাতে উপনিবেশবাদের বাস্তব ও সঠিক ব্যাখ্যা ও সংজ্ঞা উল্লেখ করতে পারি।
কুরআনুল কারীম ঔপনিবেশিকতাকে বুঝাতে একটি নির্দিষ্ট শব্দ ব্যবহার করেছে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত উপনিবেশবাদের বিভিন্ন ক্ষেত্র ও উপাদান।
কুরআনে “استضعاف” শব্দটি ব্যবহার করে সামরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং রাজনৈতিক উপনিবেশবাদের ব্যাপক অর্থ দেয়া হয়েছে। যার অর্থ কোনো ব্যক্তি বা সমাজকে দূর্বল বা কোণঠাসা করে দেয়া।
অন্যদিকে, কুরআন মাজিদ “مستضعفین”–দের সাফল্য ও সমৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কারণ এই লোকেরা মূলত শক্তিশালী হলেও তারা সাময়িকভাবে শত্রুর চাপ ও কৌশলের ফাঁদে ফেঁসে আছে। এই মানুষগুলো কোনো না কোনোভাবে উপনিবেশবাদ থেকে মুক্তির চেষ্টা করছে। তাই তাদের সম্পর্কে কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:
আর আমি দুর্বল করে রাখা লোকেদেরকে সেই যমীনের পূর্বের আর পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিলাম যাতে আমি কল্যাণ নিহিত রেখেছি।
অভিধানে উপনিবেশবাদের একটি অর্থ দ্বারা মীমাংসা বুঝালেও আজকের বিশ্বে একটি সমাজের যৌথ ঐতিহ্যবাদ, তাদের মূল্যবোধ ও অভ্যাসকে বিকৃত করা, একটি রাষ্ট্রের উপর একটি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ, শোষণ এবং সার্বভৌমত্ব আরোপ করা সহ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তার করার নাম উপনিবেশবাদ।
ঔপনিবেশিক চিন্তাধারার একটি অবিচ্ছেদ্য নীতি হচ্ছে অন্য মানুষের থেকে নিজের অবৈধ ফায়দা অর্জন করা।
ঔপনিবেশিক দেশগুলো তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য গরীব-দরিদ্রদের সামনে উন্নয়নের স্লোগান ও প্রকল্প উপস্থাপন করে, কিন্তু পর্দার আড়ালে তাদের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র দুর্বল জাতিগুলোকে শোষণ করা এবং শক্তিশালী জাতিগুলোকে আরও শক্তি প্রদান করা।
ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে থাকা প্রতিটি জাতি কখনই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে বিকশিত হতে পারে না কারণ তারা কোনো বিষয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তদুপরি, ঔপনিবেশিকতাও এসব দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের দখল নেয় এবং তার প্রভাবাধীন দেশগুলোতে নিজের সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে চাপিয়ে দেয়।
ফলে আধিপত্যের স্বীকার দেশ ও তাদের জনগণ প্রতি পদে পদে উপনিবেশবাদী সংস্কৃতি, বাচনভঙ্গি, ভাষা ও অভিব্যক্তিকে অন্ধ অনুকরণ করে।
আজও এই ধরণের ঔপনিবেশিকতা বিশ্বে বিদ্যমান এবং অনেক দেশ তাদের মন্ত্রের অধীনে রয়েছে।
ঔপনিবেশিকতার বৈশিষ্ট্য
আসলে উপনিবেশবাদ তিনটি পর্দার আড়াল থেকে আঘাত হানে। তাই এব্যাপারে জানা খুবই জরুরী যাতে এর মাধ্যমে আদি ঔপনিবেশিক চিন্তা ও বাস্তবতা জানা যায়।
উপনিবেশবাদকে তিনটি উপায়ে আলাদা করা যায়:
১. জাতির চিন্তাচেতনাকে ধ্বংস করা: ঔপনিবেশিক প্রকল্পের প্রথম নীতি হলো জাতির মন থেকে স্বাধীন চিন্তা ও ধারণা দূর করা। এই কারণেই ঔপনিবেশিক সমাজে জাতির চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিমানদের স্থান নেই।
২. শিল্প, কৃষি, অস্ত্র ও অন্যান্য সকল খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা শেষ করা।
৩. বিভাজন, মতানৈক্য এবং বর্ণবাদ প্রথার প্রচার করা।
চলবে….