দাঈশ হলো একটি সন্ত্রাসী সংগঠন, যার হুমকি আগে মূলত মধ্যপ্রাচ্য (মিডল ইস্ট) পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। তবে, এখন এটি তার রক্তক্ষয়ী হামলার মাধ্যমে আবারও বৈশ্বিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এবার তারা কেবল যুদ্ধের মানচিত্রই পরিবর্তন করেনি, বরং তাদের কৌশল ও গোপন কার্যক্রমেরও বিস্তৃতি ঘটিয়েছে।
বর্তমান সময়ের দাঈশকে আগের তুলনায় অনেক বেশি বিপজ্জনক, চতুর এবং লক্ষ্যভিত্তিক মনে হচ্ছে। তারা এখন সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রের পরিবর্তে নরম ও অসামরিক লক্ষ্যবস্তুর দিকে ঝুঁকছে। স্কুল, মসজিদ, ধর্মীয় সমাবেশ, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং সংখ্যালঘুরা তাদের নতুন লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে রয়েছে।
এর পাশাপাশি, দাঈশ মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধকেও জোরদার করেছে; তারা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ, প্রচারণা (প্রোপাগান্ডা) ও বিস্তারের ব্যাপক অভিযান চালাচ্ছে। গোপন কৌশল, অনুপ্রবেশমূলক হামলা এবং জনমনে আতঙ্ক ছড়ানো তাদের মৌলিক হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। এখন আর দাঈশ কেবলই একটি সশস্ত্র হুমকি নয়; এটি একটি চিন্তাগত, গোপন এবং সামাজিক চ্যালেঞ্জ। তারা বিশ্বকে এই বার্তা দিচ্ছে যে, এই দলটি কেবল রণাঙ্গনেই নয়, বরং মন ও বিশ্বাসের ময়দানেও লড়ছে। এই উন্নত কৌশলের মানে কেবল যুদ্ধের পরিবর্তন নয়, বরং দাঈশের টিকে থাকা ও বিস্তারের নতুন পরিকল্পনাও।
এই গোষ্ঠীটি সামাজিক শূন্যতা, দারিদ্র্য, কুসংস্কার এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে, যাতে দুর্বল শ্রেণীকে নিজেদের সাথে মিশিয়ে তাদের লক্ষ্য পূরণের জন্য ব্যবহার করা যায়।
এই গোষ্ঠী সেসব অঞ্চলের ফায়দা তোলে যেখানে সরকারগুলো অভ্যন্তরীণ সংকটের সম্মুখীন; যেমন কিছু এশীয় দেশ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং এমনকি কিছু ইউরোপীয় দেশেও, সেখানে দাঈশ তাদের প্রভাব বাড়ায়, জাতিগত বা ধর্মীয় বিদ্বেষকে উসকে দেয় এবং মানুষের মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টি করে।
আফগানিস্তানেও মসজিদ, ধর্মীয় সমাবেশ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের সাম্প্রতিক হামলাগুলো প্রমাণ করে যে, তাদের উদ্দেশ্য শুধু শারীরিক ক্ষতি নয়, বরং মানুষের মনস্তত্ত্ব, সামাজিক আস্থা এবং ধর্মীয় সম্প্রীতিকেও ধ্বংস করা।
এই হামলাগুলো এই অঞ্চলের গোপন সংস্থাগুলোর (গোয়েন্দা সংস্থা) জন্যেও একটি গুরুত্বপূর্ণ হুঁশিয়ারি যে, এই গোষ্ঠীকে এখন কেবল সশস্ত্র কার্যক্রম দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না, বরং এর প্রভাবকে মতবাদ, অর্থনীতি এবং আঞ্চলিক সম্পর্কের মাধ্যমেও সীমিত করা জরুরি। যদি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শক্তিগুলো দাঈশের এই নতুন হুমকির বিরুদ্ধে সমন্বিত, সুসংগঠিত এবং বিচক্ষণ প্রতিক্রিয়া না দেখায়, তবে এই গোষ্ঠীটি প্রতিটি দুর্বল সমাজ থেকে তাদের বিস্তারের জন্য সুবিধা নেবে।
সুতরাং বলা যায়, দাঈশ সন্ত্রাসের এক নতুন ঢেউ শুরু করেছে, যা কেবল বোমা ও হামলাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এবার যুদ্ধের রূপ মনস্তাত্ত্বিক, চিন্তাগত, প্রচারণামূলক ও গোপন প্রকৃতির। এই গোষ্ঠীটি দুর্বল জাতি, সংখ্যালঘু এবং অস্থিতিশীল সমাজগুলোকে তাদের ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। এই হুমকিকে নিয়ন্ত্রণের একমাত্র পথ হলো, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তিগুলোর যৌথ, সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে এই দুর্যোগকে থামানো যায়, এর আগে যে আরও এলাকা, চিন্তা ও মন তাদের দখলে চলে যায়।




















