দাঈশ খাওয়ারিজ: ইসরাইলের মিত্র ও উম্মাহর শত্রু

✍🏻 খলিল আবিদ

খারিজিদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসংখ্য হাদীস আমাদের মাঝে সংরক্ষিত আছে, যেখানে তিনি উম্মাহকে এ দুর্বিনাশী ফিতনার ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন এবং তাদের চরিত্র ও ধারা সম্পর্কে পূর্বাভাস প্রদান করেছেন। এসব নববী বাণীর মাঝে এমন সব ভবিষ্যদ্বাণীও অন্তর্ভুক্ত, যেগুলো কালক্রমে একে একে বাস্তবের দর্পণে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই মহান বাণীসমূহ, তাঁর অমিয় আগাম বার্তা ও সনাক্তকারী নিদর্শনসমূহ বর্তমান যুগের দাঈশ নামক খারিজি গোষ্ঠীতেও হুবহু প্রতিফলিত হচ্ছে। যেমন একটি বিশুদ্ধ হাদীসে তিনি ইরশাদ করেন—

হাদীস:
আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমরা একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপবিষ্ট ছিলাম, তিনি তখন গনিমতের সম্পদ বণ্টন করছিলেন। এমন সময় ‘যুল খুয়াইসারা’ নামক এক ব্যক্তি, যিনি ছিলেন বনি তামীম গোত্রভুক্ত, এসে বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি সুবিচার করুন।
নবীজী বললেন: ধ্বংস হোক তোমার! আমি যদি ন্যায়ের সিঁড়ি না হই, তবে আর কে হবে?
হযরত উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু আরয করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার শিরচ্ছেদ করি।
তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাকে ছেড়ে দাও। কেননা তার এমন কিছু অনুসারী থাকবে, তোমরা তাদের নামাযের তুলনায় নিজেদের নামাযকে তুচ্ছ ভাববে, তাদের রোযার তুলনায় নিজেদের রোযাকে ক্ষুদ্র মনে করবে। তারা কুরআন তিলাওয়াত করবে, কিন্তু কুরআনের নূর তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দীন থেকে এমন ছিন্ন হয়ে বেরিয়ে যাবে, যেমন তীর ধনুক থেকে ছুটে যায়। তারা মুসলিমদেরকে হত্যা করবে অথচ মূর্তিপূজকদের (অবিশ্বাসীদের) ছেড়ে দেবে। যদি আমি তাদেরকে পাই, তবে আমি তাদেরকে ‘আদ জাতির মতো ধ্বংস করব।
(সহীহ বুখারী: ৩৬১০, সহীহ মুসলিম: ১০৬৪)

এই হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব বৈশিষ্ট্যের আলোকপাত করেছেন, আজকের দাঈশ-খারিজিরা তার প্রতিটি বৈশিষ্ট্যে নিখুঁতভাবে মিলে যায়। এবং এদের উদ্ভবই উম্মাহর শরীরে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে।

যদি আমরা গভীর দৃষ্টিতে অনুধাবন করি, তবে এই হাদীসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে— “তারা মুসলমানদের হত্যা করবে অথচ মূর্তিপূজকদের ছেড়ে দেবে।” বাস্তবেও দেখা গেছে, এই দাঈশ-খারিজিরা যেখানে-যেখানে আবির্ভূত হয়েছে, সেখানে তারা সর্বাগ্রে মুসলিমদের রক্ত ঝরিয়েছে, অথচ কাফিরদের নিরাপদ রেখেছে। তারা ইসলামী ঐক্য ও সংহতির শেকড় কেটে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে।

তাদের প্রত্যেক পদক্ষেপেই স্পষ্ট হয়েছে, তারা আগে মুসলিম ও মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। ইরাক ও শামে ‘আল কায়েদা’ তথা ‘তানযীম কায়েদাতুল জিহাদ’-এর বিরুদ্ধে, আফগানিস্তানে ইসলামী ইমারতের বিরুদ্ধে, আফ্রিকার মাটিতে আল কায়েদার বিভিন্ন শাখার বিরুদ্ধে, এমনকি এমন সব জিহাদি নেতাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলেছে, যাদের সন্ধানে তাগুত শক্তি দীর্ঘকাল তল্লাশিতে লিপ্ত ছিল।

এই দাঈশ-খারিজিরা এমনকি তাদের বিরুদ্ধেও ফাতাওয়া জারি করেছে, যারা কেবলমাত্র তাদের সংগঠনের অনুসারী হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। অন্যদিকে কাফিরদের বিরুদ্ধে তারা কখনো কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেয়নি। কেননা, তারা কাফিরদের দালাল, তাদেরই লেজুড়বৃত্তি করে চলে।

দাঈশ-খারিজিরা এমনকি কুফরী শক্তিগুলোর উপনিবেশিক স্বার্থ, বিশেষত ইসরাইলের ভূরাজনৈতিক প্রাধান্য রক্ষা করাকেই যেন নিজের ‘জিহাদ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। তারা এমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি, যা ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ বলে বিবেচিত হয়। বরং যারা ইসরাইলের হীন স্বার্থের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তারাই হয়েছে দাঈশের হিংস্রতার শিকার।

তারা অঞ্চলের সেই সকল জিহাদি সংগঠনকে ধ্বংস করেছে, যারা বাস্তবিক অর্থে ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি ছিল। অথচ এই দাঈশ নামধারী সংগঠন কখনো ইসরাইলের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলেনি, এমনকি প্রতীকী প্রতিবাদ পর্যন্ত করেনি। আজ তারা এতদূর এগিয়েছে যে, ইসরাইলের পক্ষে সরাসরি প্রচারণা চালাচ্ছে।

এ সবই প্রমাণ করে তারা কাফিরদের মিত্র এবং মুসলিমদের শত্রু। এরা এই যুগের সেই খারিজির দল, যাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, এবং ইসলামী শরীয়াহ এদের বিষয়ে আমাদের অবস্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে। অস্পষ্টতার কোনো অবকাশ সেখানে অবশিষ্ট নেই।

Exit mobile version