পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ইসলামী ইমারাতের সরল, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও কার্যকর পদক্ষেপসমূহ

✍🏻 মুহাম্মাদ ইউসুফ বদরী

ইসলামী ইমারাত আফগানিস্তান তার পররাষ্ট্রনীতিকে এক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করিয়েছে। এক এমন ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছে, যা কেবল আঞ্চলিক কূটনৈতিক পরিবেশের পরিধি সম্প্রসারিত করেনি; বরং আফগানিস্তানের বৈধতা, অর্থনৈতিক বিকাশ, এবং বৈশ্বিক সম্পৃক্ততার নতুন দিগন্তও উন্মোচন করেছে। এই নীতি ইমারাতের নেতৃত্বের প্রজ্ঞাময়, ভারসাম্যপূর্ণ ও সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন; যার কল্যাণে বৈশ্বিক নিঃসঙ্গতা থেকে উত্তরণ এবং বিশ্বের সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক স্থাপনের বাস্তব পথ প্রশস্ত হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী ইমারাত আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক এমনভাবে সম্প্রসারিত করেছে যে, এখন এর কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন সরকারের নয়, বরং এক সক্রিয়, স্বাধীন ও মর্যাদাসম্পন্ন রাষ্ট্রের রূপ ধারণ করেছে। বহু দেশ আফগানিস্তানে তাদের দূতাবাস পুনরায় চালু করেছে; কিছু দেশে আফগান দূতাবাসসমূহ আবার কার্যকর হয়েছে; পাশাপাশি আফগান নাগরিকদের জন্য ভিসা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয়তার ক্ষেত্রে যে সুবিধাসমূহ প্রদান করা হচ্ছে, তা ইসলামী ইমারাতের সফল পররাষ্ট্রনীতি এবং দেশের অভ্যন্তরে সরকার ও জনগণের পারস্পরিক আস্থারই ফল।

একটি বড় সাফল্য হলো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা। ইসলামী ইমারাত বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করেছে, তাদের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করেছে, এবং বিনিয়োগের জন্য আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তুলেছে। এর ফলেই চীন, রাশিয়া, কাতার, তুরস্কসহ আরও অনেক দেশের বিনিয়োগকারীরা আফগানিস্তানের জ্বালানি, সড়ক, খনিজ, কৃষি ও নির্মাণ খাতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আফগানিস্তানের স্থানীয় পণ্য ও উৎপাদনকে বৈশ্বিক বাজারে পৌঁছে দেওয়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। বর্তমানে আফগানিস্তানের শুকনো ফল, চিলগোজা, কার্পেট, ভেষজ ওষুধ এবং অন্যান্য পণ্য মধ্য এশিয়া, চীন ও উপসাগরীয় দেশগুলোর বাজারে সুসংগঠিতভাবে রপ্তানি করা হচ্ছে। এটি শুধু জাতীয় অর্থনীতিকে মজবুত করছে না; বরং জনগণের দৈনন্দিন জীবনে স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির বার্তাও বয়ে আনছে।

ইমারাতের পক্ষ থেকে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সম্মেলনগুলোতে সক্রিয় অংশগ্রহণও এক ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। রাশিয়ার “মস্কো ফরম্যাট” বৈঠকে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মৌলভী আমির খান মুতাক্কির আনুষ্ঠানিক অংশগ্রহণ ছিল এক তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ। এ বৈঠক আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক আস্থার পরিসর আরও প্রসারিত করেছে এবং প্রমাণ করেছে যে ইসলামী ইমারাত শান্তি, সহযোগিতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

একইভাবে, ভারত সফর—যা ভারত সরকারের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণে সম্পন্ন হয়েছিল, এটি ছিল ইমারাতের কূটনৈতিক শক্তির স্পষ্ট নিদর্শন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুধু মৌলভী মুতাক্কিকে উচ্চ মর্যাদায় অভ্যর্থনাই জানায়নি; বরং কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা, চিকিৎসা সহায়তা, ট্রানজিট করিডর উন্নয়ন এবং দুই দেশের জনগণের চলাচলে সুবিধা বৃদ্ধির নিশ্চয়তাও দিয়েছে। এই বৈঠকটি এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হয় যখন কিছু প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তানকে আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টা করছিল, কিন্তু ইসলামী ইমারাত তার ভারসাম্যপূর্ণ নীতির মাধ্যমে সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়।

ইমারাতের পররাষ্ট্রনীতি এখন এক সক্রিয় যোগাযোগনির্ভর নীতি, যা “সম্পর্কের মাধ্যমে বৈধতা” (legitimacy through engagement)-এর মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই নীতি শুধু জাতির প্রকৃত আকাঙ্ক্ষাকেই পূরণ করে না; বরং এমন এক আফগানিস্তানের প্রতিশ্রুতি দেয়, যা তার পরিচয়, ধর্ম, রাজনীতি ও অর্থনীতিকে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে সম্মান ও স্থিতিশীলতার সঙ্গে উপস্থাপন করে।

ইসলামী ইমারাত কেবল সম্পৃক্ততার ভিত্তি স্থাপনেই থেমে থাকেনি; বরং এমন বাস্তব পদক্ষেপ নিয়েছে, যার ফলে পারস্পরিক আস্থার পরিবেশ সুদৃঢ় হয়েছে। সবকিছুই এই বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে যে, আফগানিস্তান এখন আর কোনো বিচ্ছিন্ন দেশ নয়, বরং অঞ্চল ও বিশ্বের সহযোগিতায় এক গুরুত্বপূর্ণ, মূল্যবান ও দৃঢ় অংশীদার।

Exit mobile version