ইসলামের ওপর আঘাত: জায়নবাদী ও খারিজীদের যৌথ ষড়যন্ত্র

✍🏻 ইহসান আরব

যদিও দাঈশ নামক ঘৃণ্য সংগঠন ও ইয়াহুদী জায়নবাদী ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে দৃশ্যত কোনো আনুষ্ঠানিক বা স্পষ্ট সম্পর্ক নেই, তথাপি বিগত কয়েক বছরে বহু প্রমাণ ও গভীর বিশ্লেষণ এ সত্যকে উন্মোচন করেছে যে— এই দুইয়ের স্বার্থে রয়েছে এক অভিন্নতা, লক্ষ্যেও রয়েছে একরূপতা। বিশেষত ইসলামি দেশগুলোতে সংকট সৃষ্টি করা এবং প্রকৃত জিহাদি আন্দোলনগুলোকে দুর্বল করে ফেলাই যেন তাদের পরস্পরের নীরব সহযোগিতার বাস্তব নমুনা।

যদিও কাঠামো ও পরিচয়ের দিক থেকে তারা ভিন্ন, তথাপি সমসাময়িক খারিজী, অর্থাৎ দাঈশ ও ইয়াহুদীবাদী ইসরাইল উভয়ই কিছু বিষয়ে অভিন্ন স্বার্থ বহন করে। তারা পৃথকভাবে কাজ করলেও বাস্তবে এগিয়ে যাচ্ছে একক অভিমুখে। এই লেখায় আমরা তাদের অশুভ তৎপরতার কিছু উল্লেখযোগ্য দিক সংক্ষেপে উপস্থাপন করছি—

১. ইসলামের প্রকৃত রূহের ওপর আঘাত
আধুনিক যুগের খারিজী দাঈশ অন্ধ সহিংসতা, তাকফির এবং অমানবিক কার্যকলাপের মাধ্যমে ইসলামের এক বিকৃত, মিথ্যা ও নৃশংস চেহারা বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করেছে। অথচ এটাই সেই ছবি, যা পশ্চিমা বিশ্ব ও ইয়াহুদীবাদী ষড়যন্ত্রকারীদের দীর্ঘমেয়াদি ইসলামবিদ্বেষী প্রচারণার সঙ্গে শতভাগ সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ইসলামকে বর্বর ও হিংস্র ধর্মরূপে তুলে ধরাই হলো ইয়াহুদীবাদী আধিপত্যবাদীদের মূল উদ্দেশ্য। তারা সর্বদা চেষ্টা করে যাচ্ছে মুসলিম উম্মাহকে অবিশ্বাসীদের দৃষ্টিতে এক সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে তুলে ধরতে।

২. জিহাদি আন্দোলনবিরোধিতা
যে দাঈশ নিজেদের ইসলাম রক্ষাকারী বলে দাবি করে, তারাই বাস্তবে জিহাদি আন্দোলনগুলোর সবচেয়ে বড় শত্রু। বিশেষ করে যেসব আন্দোলন সরাসরি ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরোধিতা করছে, তাদের বিরুদ্ধেই দাঈশ সবচেয়ে বেশি আগ্রাসী হয়ে ওঠে।

যেখানেই কোনো ইসলামি সংগঠন বা আন্দোলন ইয়াহুদীবাদী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, সেখানেই এই খারিজীরা হঠাৎ করেই আবির্ভূত হয়ে সেই সংগঠনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে। যেন তারা ইসরাইলেরই প্রেরিত কোনও ক্রীড়নক।

৩. ইসলামি ভূখণ্ডের খণ্ড-বিখণ্ডকরণ
এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ইয়াহুদীবাদী রাষ্ট্রের অন্যতম কৌশলগত লক্ষ্য হলো “নিউ মিডল ইস্ট” বা বার্নার্ড লুইসের পরিকল্পনা অনুসারে বৃহৎ ইসলামি রাষ্ট্রগুলোকে ভেঙে ক্ষুদ্র, দুর্বল ও অসহায় উপ-রাষ্ট্রে পরিণত করা।

দাঈশও তাদের কথিত খিলাফতের নামে এ পরিকল্পনায় ইন্ধন জুগিয়েছে। ইরাক, সিরিয়া ও অন্যান্য রাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থাকে দুর্বল করতে তারা নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

যদি আমরা দাঈশ ও জায়নবাদী শাসকদের কর্মকাণ্ড ঘনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করি, তবে আমরা দেখতে পাব তাদের মধ্যে কিছু বিস্ময়কর মিল রয়েছে, যেমন:

১. নিরপরাধ মানুষ হত্যার প্রবণতা
ইসরাইলি বাহিনী এবং আধুনিক যুগের খারিজী দাঈশ, উভয়েই নিরস্ত্র, নিরপরাধ ও অসহায় জনগণের হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত। একাধিকবার তারা কাপুরুষোচিত হামলার মাধ্যমে বৃদ্ধ, নারী, শিশু, এমনকি দুগ্ধপোষ্য নবজাতক পর্যন্ত হত্যা করেছে এবং এসবকেই তারা নিজেদের “বিজয়” হিসেবে প্রচার করেছে।

২. ইসলামি পবিত্র স্থানের অবমাননা
দাঈশ মসজিদ, দরগাহ ও ধর্মীয় স্থান জ্বালিয়ে দেয়, সেখানে নিরাপরাধ মুসলিমদের হত্যা করে। অপরদিকে জায়নবাদীরা আল আকসা মসজিদে হামলা চালায়, গাযযায় মসজিদগুলোতে বোমাবর্ষণ করে— এই উভয়ের কার্যক্রম ইসলামি পবিত্রতা ও অনুভূতির চূড়ান্ত অপমান।

৩. গণমাধ্যম ও মানসিক যুদ্ধ
দাঈশ এবং ইসরাইল— উভয় ফিতনাই মিডিয়া ও ভার্চুয়াল জগতকে তাদের কৌশলের অংশ হিসেবে ব্যবহার করে। তারা মানুষের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেয়, ভীতি ছড়িয়ে দেয় এবং নিজেদের বিষাক্ত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে মিডিয়াকে এক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।

পরিশেষে বলা যায়, দাঈশ ও জায়নবাদী রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড ও উদ্দেশ্য আমাদের সামনে এক কঠিন অথচ অস্বীকারযোগ্য নয় এমন এক বাস্তবতা তুলে ধরে:

দাঈশ নামক খারিজী ফিতনা ও ইসরাইলি যালিম শাসনব্যবস্থা— দু’টি ভিন্ন রূপে আবির্ভূত হলেও, বাস্তবিক অর্থে এরা যেন এক কাঁচির দুই ধার, যা একত্র হয়ে ইসলামী উম্মাহকে খণ্ডিত ও ধ্বংস করে দিতে সচেষ্ট।

Exit mobile version