রামাদি নগরী দখল
পূর্ববর্তী পর্বগুলোতে আমরা দাঈশের কৌশলকে বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছি। তারা কোনো দিনও প্রকাশ্যে শিয়া জনপদে আক্রমণ করার সাহস দেখায়নি; তাদের বিশ্বাসঘাতকতার তরবারি সর্বদা আহলে সুন্নতের সত্তাকেই আঘাত করেছে। দাঈশ গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে রামাদি নগরী (ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ আনবারের রাজধানী) দখল করা ছিল এমনই এক ঐতিহাসিক বিশ্বাসঘাতকতা, এবং ইরাকের ভেতরে তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও রক্তাক্ত অভিযান।
রামাদি ইরাকের বৃহত্তম সুন্নি অধ্যুষিত নগরীগুলোর একটি, এবং বাগদাদের নিকটবর্তী ও শাম সীমান্তসংলগ্ন কৌশলগত অবস্থানের কারণে যুগে যুগে যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। ২০১৪ সালে দাঈশের উত্থান ও মসুল পতনের পর রামাদি হয়ে ওঠে এই গোষ্ঠীর পরবর্তী লক্ষ্য।
রামাদি দখলের অগ্রগতি:
সংঘর্ষের সূচনা
২০১৪ সালের শেষ দিক থেকে দাঈশ রামাদির উপর মৃদু আক্রমণ শুরু করে এবং শহরের কয়েকটি প্রান্তিক এলাকায় দখল প্রতিষ্ঠা করে।
শহরের প্রতিরক্ষা ভাঙন
২০১৫ সালের মে মাসে দাঈশ একটি বৃহৎ আক্রমণ চালায় এবং বারুদি গাড়ি ও বিশাল বিস্ফোরক ব্যবহারের মাধ্যমে রামাদি শহর দখলে নিয়ে আসে, আর সেই সঙ্গে ছড়িয়ে দেয় নির্যাতনের কালো মেঘ।
রামাদির পতন
২০১৫ সালের ১৭ মে দাঈশ রামাদি শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দখল করে নেয় এবং শহরের সঙ্গে সঙ্গে আনবার প্রদেশের প্রাদেশিক দপ্তরসহ বহু সরকারি স্থাপনায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে।
দাঈশের অপরাধসমূহ
যদি দাঈশের অপরাধকে সংক্ষেপে বলা হয়, তবে এ কথাই ফুটে ওঠে যে—সুন্নি অধ্যুষিত রামাদি নগরী দাঈশের অপরাধের কারণে প্রায় নিঃবাসী হয়ে পড়ে। সুন্নিদেরকে নিজ গৃহ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। এই গণ-নির্বাসনের কারণ ছিল, দখলের পর দাঈশ ভিত্তিহীন ও অন্যায্য অভিযোগে বহু সাধারণ মানুষের গণ-ফাঁসির সূচনা করে।
রামাদির কৌশলগত গুরুত্ব
রামাদি বাগদাদ–জর্দান মহাসড়কের উপর অবস্থিত এবং মধ্য ও পশ্চিম ইরাকের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগসেতু। এই শহরের নিয়ন্ত্রণ দাঈশের জন্য বাগদাদের প্রতি প্রত্যক্ষ হুমকি এবং আনবার প্রদেশে তাদের শক্তি সুদৃঢ় করার এক প্রধান উপায় হয়ে ওঠে।