রামাদি শহরের না বলা কাহিনি
ইসলামি দেশগুলোতে এবং সুন্নিদের বিরুদ্ধে দাইশের অপরাধ এত ব্যাপক যে তা বর্ণনা করা মানুষের ক্ষমতার বাইরে। ইরাকে এই গোষ্ঠীর নৃশংসতার সময়কালে, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালের মধ্যে, রামাদি শহরে ব্যাপক এবং নির্মম অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। এই অপরাধগুলোর লক্ষ্য ছিল শহরের সামাজিক-নাগরিক কাঠামো ধ্বংস করা এবং ভয় ছড়িয়ে দেওয়া।
আগের পর্বে আমরা উল্লেখ করেছি যে রামাদি ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত আনবার প্রদেশের কেন্দ্র। এটি ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম, যা বাগদাদ ও সিরিয়া মহাসড়কে অবস্থিত এবং সবসময়ই সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু ছিল।
২০১৫ সালের ১৭ই মে দাইশ গোষ্ঠী ইরাকি সৈন্যদের সাথে কয়েক সপ্তাহের যুদ্ধের পর রামাদি শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়। সম্পূর্ণ পতনের আগে, শহরটি কয়েক মাস ধরে দাইশের অবরোধের মধ্যে ছিল এবং যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের শেষের দিকে।
রামাদিতে দাইশের অত্যাচার ও অপরাধ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত ছিল:
১. গণ-ফাঁসি এবং প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ড
রামাদি শহর দখলের পর, দাইশ সরকার, সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর সাথে সহযোগিতার অভিযোগে কয়েক ডজন বেসামরিক নাগরিক, সরকারি কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়। কিছু ফাঁসি শহরের প্রধান চত্বরে এবং কিছু রামাদির আশেপাশের মরুভূমিতে কার্যকর করা হয়। ইরাকি সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের জুন মাসে, একটি ঘটনায় দাইশ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা অভিযোগে শতাধিক বেসামরিক নাগরিক এবং সুন্নি যুবককে হত্যা করে, যা এই ট্র্যাজেডির ভয়াবহতা তুলে ধরে।
২. বেসামরিক নাগরিকদের মানব-ঢাল হিসেবে ব্যবহার
দাইশ গোষ্ঠী অনেক এলাকায় পরিবার এবং সাধারণ মানুষকে মানব-ঢাল হিসেবে ব্যবহার করত, যাতে তারা বিমান হামলা থেকে রক্ষা পেতে পারে। ২০১৫ সালের শেষের দিকে, সংবাদমাধ্যম জানায় যে ১৫০০-এরও বেশি বেসামরিক নাগরিককে ইচ্ছাকৃতভাবে এমন ভবনে রাখা হয়েছিল, যা দাইশ তাদের কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করত।
৩. সরকারি সম্পত্তি ও অবকাঠামোর ব্যাপক ধ্বংস:
দখলদারিত্বের পর, দাঈশ স্কুল, হাসপাতাল, মসজিদ, সেতু এবং অন্যান্য স্থাপনা ধ্বংস করতে শুরু করে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রামাদির ৮০% এরও বেশি নগর-অবকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছিল।
৪. নির্যাতন এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন করা:
দাইশের আদেশ অমান্য করা বা কোনো কারণ ছাড়াই সরকারের সাথে সহযোগিতা করার অভিযোগে অভিযুক্ত অনেক ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন করা হতো। ২০১৫ সালের ২৮শে ডিসেম্বর, তৎকালীন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদী ঘোষণা করেন যে রামাদি শহর সম্পূর্ণভাবে দাইশের দখলমুক্ত হয়েছে এবং রাফেজি বাহিনী এর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
রামাদির দখলদারিত্ব শেষ হওয়ার পর, রাফেযি হাশদ বাহিনী এবং ইরানি ‘সিপাহে পাসদারান’ যে অনুরূপ বর্বরতা ও নির্যাতনের অধ্যায় রচনা করে, তা ছিল আহলুস সুন্নাহর নিরপরাধ শিশু ও নারীদের ওপর এক সীমাহীন প্রতিশোধপরায়ণ অত্যাচার। কর্তিত মস্তক, রক্তশূন্য মৃতদেহ, এবং মরুভূমিতে সারিবদ্ধ গণকবর—এই ট্র্যাজেডির নীরব সাক্ষীস্বরূপ ভবিষ্যতের ইতিহাসে রক্তাক্ষরে লিখিত থাকবে।