খাওয়ারিজদের প্রতিহত করার পদ্ধতি!

✍🏻 আহমাদ হিশাম আল কুর্দি

#image_title

আলিমগণ হাদিস ও ইসলামী ইতিহাস অনুসারে খাওয়ারিজ সম্পর্কে বিস্তারিত বহু গ্রন্থ লিখেছেন। যারা মুসলিম উম্মাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চরমপন্থা ও কট্টর পথ অবলম্বন করেছে, তারাই খাওয়ারিজ।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে খাওয়ারিজদের বিপথগামীতা সম্পর্কে অবহিত করেছেন এবং যুদ্ধ করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন। একটি প্রসিদ্ধ হাদীসে খাওয়ারিজদের কথা উল্লেখ করে বলেছেন:

يَخْرُجُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ قَوْمٌ حُدَثَاءُ الْأَسْنَانِ، سُفَهَاءُ الْأَحْلَامِ، يَقُولُونَ مِنْ خَيْرِ قَوْلِ الْبَرِيَّةِ، يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لَا يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ، يَمْرُقُونَ مِنَ الدِّينِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ، فَإِذَا لَقِيتُمُوهُمْ فَاقْتُلُوهُمْ، فَإِنَّ فِي قَتْلِهِمْ أَجْرًا لِمَنْ قَتَلَهُمْ عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ. (بخاري و مسلم)
শেষ যামানায় এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে, যাদের বয়স হবে কম, বুদ্ধিতে হবে নির্বোধ। (বাহ্যত) সৃষ্টি জগতের শ্রেষ্ঠ বাণী তারা বলবে, (বস্তুত) শিকারের দেহ ভেদ করে নিক্ষিপ্ত তীর যেমন বেরিয়ে যায়, তেমনি তারা ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাবে। তাদের ঈমান তাদের গলদেশ পেরিয়ে নিচে নামবে না। যেখানেই পাবে, তাদেরকে হত্যা করবে। তাদের হত্যা করাটা কিয়ামত দিবসে হত্যাকারীর জন্য প্রতিদানের কারণ হবে।

এছাড়াও খাওয়ারিজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সাওয়াবের ঘোষণা করা হয়েছে কারণ তারা মুসলিম উম্মাহর মাঝে ভীতি ও আতঙ্ক ছড়ায়, মানুষকে বিভ্রান্ত করে এবং ইসলামের মূল বাণীকে বিকৃত করে। মুসলিমদের ঐক্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় খাওয়ারিজদের চরমপন্থী ধ্যান-ধারণা ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোকে অপরিহার্য বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

এই হাদিস অনুসারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাওয়ারিজদেরকে হত্যা করা সাওয়াবের কাজ বলে উল্লেখ করেছেন। এতে খাওয়ারিজ হুমকির গুরুত্ব বোঝা যায়। আলিমগণের মতে এই সাওয়াবের উদ্দেশ্য হলো ইসলাম ও মুসলিমদের রক্ষার জন্য খাওয়ারিজদের বিরুদ্ধে লড়াই করা, কারণ খাওয়ারিজরা মুসলিম উম্মাহ এবং তাদের ঐক্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।

বর্তমান সময়ে ইসলামী মূলনীতির বিরুদ্ধে চরমপন্থা, সহিংসতা এবং নিরপরাধ মানুষ হত্যাকারী দলগুলোকে আলিমগণ খারিজি মনে করেন। আলিমগণ বিশ্বাস করেন যে, দাঈশ এবং অন্যান্য অনুরূপ গোষ্ঠীগুলির মধ্যে খাওয়ারিজদের বৈশিষ্ট্য রয়েছে, কারণ তারা তাদের চরমপন্থী মতাদর্শের স্বার্থে ইসলামের অপব্যবহার করে এবং উম্মাহর মধ্যে ভয় ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে দেয়।

ইসলামী আইনশাস্ত্র ও ইতিহাসের অনেক আলিমের খাওয়ারিজদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম সম্পর্কে ইতিবাচক মতামত রয়েছে। তাঁরা বলেছেন যে, এই ধরনের সংগ্রাম শুধুমাত্র মুসলিম সরকার এবং আলিমগণের নির্দেশে করা যেতে পারে, যাতে খাওয়ারিজদের চরমপন্থা ও রাষ্ট্রদ্রোহের অবসান ঘটানো যায় এবং তাদের অত্যাচার থেকে নিরীহ মুসলিমরা নিরাপদ থাকতে পারে।

তাদের মতে খারিজি হলো তারা— যারা ইসলামী শরীয়তের পরিবর্তে স্বেচ্ছাচারী ও উগ্র ব্যাখ্যা অনুসরণ করে এবং যদি মুসলিমরা তাদের মতের সাথে একমত না হয়, তবে তারা তাদের “কাফির” বলে সম্বোধন করে।

হানাফী ফকীহগণ জোর দিয়ে বলেন যে, খারিজিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ মুসলিম সরকার বা সরকারী প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনায় হওয়া উচিত এবং শুধুমাত্র ব্যক্তি বা ভিত্তিহীন যুদ্ধ ইসলামী নীতি অনুযায়ী উপযুক্ত নয়। হানাফী ফিকহ অনুসারে, শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং ফিতনা প্রতিরোধ করা ইসলামী সরকার এবং উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।

সংক্ষেপে খাওয়ারিজদেরকে হত্যা করার হুকুম জায়েয এবং সওয়াবের যোগ্য বলে বিবেচিত হয় তখন, যখন তারা মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও দুর্নীতিতে লিপ্ত হয় এবং মুসলিমদের রক্তপাতের কারণ হয়।

Abu Jundab Abdullah
Exit mobile version