রক্তসিক্ত জমিন, বীরত্বের মহাসাগর!

✍🏻 আসাদ আফগান

হে ইতিহাসের সোনালি পাতা! এ ভূমির প্রতিটি পাথর শহীদদের রক্তে সিঞ্চিত, প্রতিটি তরঙ্গ বীরদের কাহিনি আওড়ায়। এখানে অস্ত্রের শব্দ স্বাধীনতার গান, আর গাজীদের কণ্ঠস্বর আজও পর্বতমালার উপত্যকায় প্রতিধ্বনিত।

মিরওয়াইস খান নিকা থেকে আহমাদ শাহ বাবা পর্যন্ত—এই ভূমি সেই সব বীরের আবাসস্থল, যাদের কণ্ঠস্বরকে পরদেশি কামান নিশ্চুপ করতে পারেনি। তারা দীন, সম্মান, সংস্কৃতি ও নামুস রক্ষার জন্য বিশ্বের বৃহৎ সাম্রাজ্যগুলোকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিল। বাবরের কামান, মুঘলদের গর্ব আর ইংরেজদের কালো ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল—সবই আফগানদের ঈমানের তলোয়ারের সামনে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। এ জাতি কোনোদিন দাসত্বের শেকল গ্রহণ করেনি।

যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের লৌহবর্মিত ট্যাঙ্ক পর্বতশৃঙ্গে গর্জে উঠেছিল, তখন এ পর্বতের তরুণেরা ক্ষুদ্র অস্ত্র আর দগ্ধ হৃদয়ের শিখা নিয়ে বিশ্বের শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাভূত করেছিল। শহীদদের রক্ত স্বাধীনতার ফুলকে সেচন করেছিল। আর যখন আমেরিকা ও ন্যাটোর মতো শক্তিমান বাহিনী এ ভূমিতে অবতরণ করল, তখন আফগান গাজীদের ঈমান আর ফিদায়িদের আত্মোৎসর্গ তাদের অহংকারকে মাটিতে মিশিয়ে দিল। তাদের কোটি কোটি ডলার, আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও প্রযুক্তি আফগান মুজাহিদের তাকবিরের সামনে ভেঙে পড়ল; আর এই ভূমি আবারো স্বাধীনতার রক্তে রঞ্জিত হলো।

মোল্লা মুহাম্মাদ উমার মুজাহিদ রহিমাহুল্লাহ—সেই যাহিদ ও সাহসী নেতা, যিনি ঈমানের শক্তি দিয়ে বিশ্বের পরাশক্তির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গৌরবের পতাকা উঁচু করেছিলেন। তিনি জাতিসমূহের দৃষ্টি জাগ্রত করেছিলেন, গাজীদের হৃদয়ে বিজয়ের আলো জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। আর শহীদ মোল্লা আখতার মুহাম্মাদ মানসুর রহিমাহুল্লাহ তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজের উষ্ণ রক্তে জাতিকে পথ দেখিয়েছিলেন, স্বাধীনতার শিখাকে আরও প্রজ্বলিত করেছিলেন, এবং দীন ও সম্মানের রক্ষায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

এই ভূমি শহীদদের রক্তে সিঞ্চিত। মিরওয়াইস নিকার গৌরবগাথা ঘোর থেকে আসা বাতাসের ঝঙ্কারে গীত হয়ে বাজে, আহমাদ শাহ বাবার তলোয়ারের ঝংকার কন্দাহারের মরুভূমির বায়ুতরঙ্গে আজও অনুরণিত, আর সমসাময়িক মুজাহিদদের নাম ইতিহাসের চিরন্তন সোনালি অক্ষরে উৎকীর্ণ হয়ে গেছে।

হে তরুণ প্রজন্ম! তোমরা সেই বীরদের উত্তরাধিকারী, যারা বিশ্ব পরাশক্তিদের হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেছিল। তোমাদের রক্তধারায় গাজীদের রক্ত প্রবাহিত, তোমাদের অন্তরে বীরত্বের শিখা জ্বলজ্বল করছে। আজ প্রয়োজন কলম, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অঙ্গনে সেই একই গৌরবধ্বজা উঁচু রাখার।

গতকাল পর্যন্তও বন্দুকের নল কথা বলত, তবে আজ তোমাদের অস্ত্র হলো বইয়ের পৃষ্ঠা। গতকাল অবধিও পাহাড়চূড়ায় মোর্চা বাঁধা হতো, তবে আজ তোমাদের মোর্চা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ। কিন্তু গৌরব ও সম্মানের বার্তা কোনোদিন নিঃশেষ হওয়া উচিত নয়। এসো, আমাদের ঐতিহাসিক বীরদের তারকার মতো পথপ্রদর্শক বানাই, ঈমানের আলোয় পদক্ষেপ রাখি, আর দীন ও মাতৃভূমির সম্মানকে চিরকাল অক্ষুণ্ণ রাখি। কেননা এ ভূমি আত্মোৎসর্গকারীদের মাতৃভূমি, আর এর প্রতিটি তরঙ্গ বীরত্বের সাগর।

Exit mobile version