শান্তির মুখোশে যুদ্ধের বাণিজ্য: ট্রাম্প ও আমেরিকার দ্বিচারিতা

✍🏻 নু‘মান সাঈদ

নিম্নলিখিত বিষয়গুলো লক্ষ্য করুন:
১. যতদিন পশ্চিমা শক্তি অস্ত্র তৈরি করবে, ততদিন পৃথিবীতে যুদ্ধ চলতেই থাকবে।
২. যতদিন পশ্চিমা কোম্পানিগুলো তেলের ওপর আধিপত্য বজায় রাখবে, ততদিন পৃথিবীতে যুদ্ধ চলতেই থাকবে।
৩. যতদিন পশ্চিমা অর্থনীতি যুদ্ধকেন্দ্রিক কাঠামোয় টিকে থাকবে, ততদিন পৃথিবীতে যুদ্ধ চলতেই থাকবে।
৪. যতদিন বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির জন্য যুদ্ধকে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করা হবে, ততদিন পৃথিবীতে যুদ্ধ চলতেই থাকবে।
৫. যতদিন যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠনকে অর্থনৈতিক উপাদান হিসেবে কাজে লাগানো হবে, ততদিন পৃথিবীতে যুদ্ধ চলতেই থাকবে।

আমেরিকার খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ হাওয়ার্ড জিন বলেছেন:
যুদ্ধ আমেরিকার অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রতিটি আমেরিকানের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছিল, এবং আমেরিকার অর্থনীতি বৈশ্বিক যুদ্ধকালীন ও যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল, অথচ ইউরোপ ও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল যুদ্ধের কারণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল।

১৯৪৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বে ২৪৮টিরও বেশি বড় বা ছোট যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, যেখানে লক্ষ নয়, কোটি কোটি মানুষ নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে এবং ঘরবাড়ি হারিয়েছে। এই যুদ্ধগুলো শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার পর, যে যুদ্ধ কোটি মানুষের মৃত্যু, নিখোঁজ, আহত ও গৃহহীনতার কারণ হয়েছিল এবং বিশ্বজুড়ে ব্যাপক ধ্বংস ডেকে এনেছিল। এই সমগ্র প্রক্রিয়ায় পশ্চিমা ও অবিশ্বাসী শক্তিগুলো যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রগুলিকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে এবং তাদের অস্ত্রশিল্পের বাজার টিকিয়ে রাখার জন্য অধিকাংশ যুদ্ধকে নিজেদের শয়তানি ষড়যন্ত্রের ফল বানিয়েছে।

অন্যদিকে, একটি যুদ্ধবিমান এক ঘণ্টায় যত তেল পোড়ায়, একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি তা ব্যবহার করে পুরো এক বছরে। আজ বিশ্বের সেনাবাহিনী ও পেন্টাগনই তেলের সবচেয়ে বড় ভোক্তা।

যখন তিন লাখ মার্কিন সেনা কোনো এলাকায় যায়, তারা সঙ্গে নিয়ে যায় ৯ লাখ বার্গার, ৯ লাখ সফট ড্রিঙ্কসের বোতল এবং শত শত প্রকারের আরও পণ্য, যার পরিমাণ লক্ষাধিক।

এখন পর্যন্ত ইউক্রেন যুদ্ধেই ব্যয় হয়েছে ৫০০ বিলিয়ন ডলার, এবং সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে ব্যয় হয়েছে ১৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এসব যুদ্ধ-ব্যয় ভয়াবহ ধ্বংস ডেকে আনে, আর যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠনে পশ্চিমা কোম্পানিগুলো বহুগুণ মুনাফা করে, যেমন ইরাক যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে মার্কিন ও পশ্চিমা কোম্পানিগুলো করেছিল।

যদি সত্যিই আমেরিকানরা বিশ্বে স্থায়ী শান্তি চায়, তবে ট্রাম্পকে পশ্চিমা অস্ত্রশিল্প কোম্পানিগুলোর সঙ্গে মিলে এমন নীতি প্রণয়ন করতে হবে, যার আওতায় তাদের প্রযুক্তি, প্রয়োজনে নাগরিক ব্যবহার করা হবে। আর সেই ট্রিলিয়ন ডলার, যা বিভিন্ন রাষ্ট্র অস্ত্র ও যুদ্ধের পেছনে ব্যয় করছে, তা ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণে এবং সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ব্যবহার করতে হবে।

কিন্তু না! ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তির স্লোগান কেবল প্রতারণা ও ফাঁপা দাবি ছাড়া আর কিছু নয়। শান্তি মানে আমেরিকার জন্য মৃত্যু। কারণ একদিকে ট্রাম্প শান্তির কথা বলে, আর অন্যদিকে অস্ত্র ও তেল কোম্পানিগুলোর প্রসারের পক্ষে অবস্থান নেয়। তাহলে কিভাবে যুদ্ধের অবসান হবে? আর কিভাবে বিশ্বব্যাপী স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে?

Exit mobile version