বিগত দুই দশকের যাত্রা

#image_title

সাঈদ আল ফাতিহ

 

বিশ বছর আগে ইসলামি ইমারাত পুরো আফগানিস্তানে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠার পর যখন পাঞ্জেশির জেলা দখলের কাছাকাছি চলে আসে, ঠিক তখন মাসঊদ রব্বানীসহ অন্যান্য ডলার পূজারী আলেমরা তাদের সাহায্যের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোকে আহ্বান জানায়।

আমেরিকার মূল লক্ষ্য ছিল ইসলামি ব্যবস্থার ধ্বংস, কারণ এটি উম্মাহকে তাওহীদের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল এবং ভবিষ্যতে ইয়াহুদি শাসনের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। মুজাহিদীনগণ সেসময় কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। আমেরিকা নিরপরাধ বেসামরিক জনসাধারণের স্থানসমূহে বোম্বিং করে অসংখ্য নিরীহ মানুষকে শহীদ করে।

বোমা হামলার সময় Bonn Conference–এ নির্বাচিত পশ্চিমা স্বার্থরক্ষী  মন্ত্রিসভা কাবুলে পৌঁছে। এ মন্ত্রিসভার বেশিরভাগ সদস্যই ছিল তারা— যাদের গণতান্ত্রিক প্রশাসনে দুর্নীতি ও বিশ্বাসঘাতকতা করার জন্য বছরের পর বছর পশ্চিমাদের দ্বারা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল।

অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণার নামে এই মন্ত্রিসভা ক্ষমতায় চেপে বসে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এই প্রশাসন যুলুমের বাজার গরম করে রেখেছিল। জনগণ তো স্বস্তি চেয়েছিল, কিন্তু মানুষ হয় গুম হচ্ছিল নাহয় নির্মমভাবে শহীদ হচ্ছিল।

এই পরিস্থিতি ইসলামি ইমারাতের জোয়ানদের পবিত্র জিহাদের অনুভূতিকে পুনরায় আবার জাগ্রত ও সতেজ করে তোলে। শাহী কোটের ময়দানে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে দেশের ধর্মপ্রাণ শ্রেণী যারা সকল বিপ্লবে আত্মত্যাগের সারিতে অগ্রণী ছিলেন, ফের আরেকবার রণাঙ্গনে ঝাপিয়ে পড়েন। সর্বত্র যুদ্ধের তীব্রতা বাড়তে থাকার কারণে দিনদিন হতাহতের পরিমাণও বাড়তে থাকে, কিন্তু সমগ্র জাতি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদিকে স্বাধীনতাকামী জণগণ, অন্যদিকে সরকারের নামে ঔপনিবেশবাদী ও তাদের অভ্যন্তরীণ অনুসারীরা।

তালেবান শান্তি চেয়েছিল। শরিয়াহ বাস্তবায়ন ছিল তাঁদের মূলমন্ত্র। তাঁরা কোনোভাবেই পরিবর্তন মেনে নেননি। এমনকি কখনো কখনো তাঁদের নিজের পরিবারও তাঁদেরকে এ পথে তেমনভাবে সহযোগিতা করেনি। তবে জনগণ তাঁদেরকে সম্ভাব্য সব উপায়ে সাহায্য করেছিল, সমগ্র বিপ্লবের আর্থিক সহায়তা জনগণই দিয়েছিল। আঘাত, কারাবাসের কষ্ট, যন্ত্রণা ও শাহাদাত তাদের দৃঢ় সংকল্পকে আরও শক্তপোক্ত করে তোলে।

ঔপনিবেশবাদীরা ইসলামকে নির্মূলের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল, তাদের কাছে ছিল ভারী ও আধুনিক অস্ত্রসহ ৫২টি দেশের সমর্থন, তবুও তাদের মনোবল দিন দিন দুর্বল হতে থাকে। ঔপনিবেশিকদের দাসরা জনগণকে আতঙ্কিত করার জন্য ইয়াহুদিদের কাছ থেকে আলাদা পদকও পেয়েছে। তাদের মৃত্যু শাহাদাত ও জান্নাতের জন্য নয়, বরং তাদের জন্য যারা পশ্চিম থেকে এসেছে। তারা বস্তুগত প্রেমে এতটাই নিমগ্ন ছিল যে, বিশ বছর ধরে হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেনি।

হক-বাতিলের লড়াই বিশ বছর ধরে চলতে থাকে। অবশেষে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত, সংখ্যায় অসীম ও শক্তিশালী বাতিল দল পরাজিত হয়। অপরদিকে অস্ত্রের দিক থেকে দুর্বল, সংখ্যায় অল্প হলেও ঈমানের অস্ত্রে সজ্জিত ও এর শক্তিতে শক্তিশালী দল ক্ষমতা লাভ করে। ক্ষমতা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা প্রতিশোধের পরিবর্তে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন, খুনিদের ক্ষমা করেন এবং দেশের সমৃদ্ধির জন্য কাজ শুরু করেন। এখন আলহামদুলিল্লাহ তিন বছর পর তাঁরা এই পর্যায়ে পৌঁছেছেন যে, উম্মাহর মৃত আশা পুনরুজ্জীবিত করার সামর্থ্য রাখেন।

Exit mobile version