রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি খাওয়ারিজদের প্রাথমিক শত্রুতা

✍🏻 আবু জাভেদ

ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়ে স্পষ্টভাবে চিত্রিত হয়েছে যে, পূর্ব ও পশ্চিমের কুফফার অপশক্তিগুলো প্রতিনিয়ত ইসলামের ভিত্তিকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থেকেছে। তাদের অন্যতম একটি কৌশল হলো এমন গোষ্ঠী সৃষ্টি করা, যারা ইসলামের নামে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও প্রকৃতপক্ষে ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শকে বিকৃত করে। এসব গোষ্ঠীর কাজ বিকৃত মতবাদ প্রচার করা এবং নিজেদের কার্যক্রমকে ইসলামের ছদ্মাবরণে উপস্থাপন করা।

এই ষড়যন্ত্রের সবচেয়ে কুখ্যাত উদাহরণ হলো দাঈশ (আইএসআইএস)। ইসলামের ভবিষ্যদ্বাণী এবং সতর্কবাণীর আলোকে এই গোষ্ঠীকে খাওয়ারিজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা মুসলিম নেতার আনুগত্য ও ইসলামী সেনাবাহিনীর প্রতি সমর্থন প্রত্যাখ্যান করে মুসলিমদের ঐক্যের ভিত্তিকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে এবং ইসলামের শত্রুদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করছে।

খাওয়ারিজরা ইসলামের জন্য বহুমুখী ক্ষতির কারণ। তারা ইসলামী আদর্শের নামে বিভ্রান্তিকর কর্মকাণ্ড চালিয়ে সরলমনা ও অজ্ঞ যুবকদের ভুল পথে প্ররোচিত করছে। এভাবে তারা নিজেরা ইসলামের মুখোশ পরে থেকে অন্যদের সত্য থেকে বিচ্যুত করে।

তারা আদর্শিক ও পদ্ধতিগত দিক থেকে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের বিদ্রোহীদের অনুসরণ করে। এক্ষেত্রে যুল-খুওয়াইসিরাহ আত-তামীমির ঘটনা উল্লেখযোগ্য। সে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছিল:
“হে মুহাম্মাদ! আপনি ন্যায়পরায়ণ হন।”

নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তর ছিল:
“আমি যদি ন্যায়পরায়ণ না হই, তবে আর কে হবে? যদি আমি ন্যায়পরায়ণ না হই, তবে আমি নিঃসন্দেহে ব্যর্থ এবং ক্ষতিগ্রস্ত হব।”
(সহীহ মুসলিম)

এই হাদিস নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ন্যায়পরায়ণতার মূর্তপ্রতীক। কোনো খারিজী বা বিদ্রোহী এই সত্যকে অস্বীকার করতে পারে না। তা সত্ত্বেও খাওয়ারিজরা ইসলামের পবিত্রতার প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করে এবং নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এমন মন্তব্য করতে সাহস পায়।

আধুনিক যুগের খাওয়ারিজরা যুল-খুওয়াইসিরাহর আদর্শিক উত্তরসূরি। তাদের চিন্তা ও কর্মপদ্ধতির মূল উৎস তার মধ্যেই নিহিত। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদের সম্পর্কে ১৪০০ বছর পূর্বে ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছিলেন:
“তারা ইসলাম থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে, যেমন তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়। তারা মুসলিমদের হত্যা করবে এবং মুশরিকদের রেহাই দেবে। যদি আমি তাদের সম্মুখীন হতাম, তবে আমি তাদের আদ সম্প্রদায়ের মতো ধ্বংস করতাম।”
(সহীহ বুখারী ও মুসনাদ আহমাদ)

উম্মাহর যুবকদের প্রতি আহ্বান
প্রিয় মুসলিম যুবকগণ, তাকফিরি গোষ্ঠীগুলোর ফাঁদে পড়া থেকে সর্বদা সতর্ক থাকুন। এই গোষ্ঠীগুলো ইসলামের মৌলিক কাঠামোর বিরুদ্ধে কাজ করে। সচেতন হোন এবং এদের সমর্থন বা প্রচারে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকুন, তা জেনে-বুঝে হোক বা অজান্তে।

এদের বিকৃত মতাদর্শ সহীহ হাদিসের আলোকে যাচাই করুন। তাদের প্রতিষ্ঠার পেছনে থাকা উদ্দেশ্য ও মতাদর্শ গভীরভাবে অন্বেষণ করুন। এদের কার্যক্রমের প্রকৃত উৎস ও লক্ষ্য আবিষ্কার করুন। এই গবেষণা ও চিন্তার মাধ্যমে আপনি নিজেকে এবং সমগ্র উম্মাহকে তাদের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারবেন।

আপনার আত্মসচেতনতা এবং বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি উম্মাহর ঐক্য ও অগ্রগতির পথকে মসৃণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Exit mobile version