ইসলামের ইতিহাসে খাওয়ারিজদের কার্যক্রম সবসময়ই একটি আলোচিত ও বিতর্কিত অধ্যায়। তাদের বিশৃঙ্খলা এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে বারবার বিদ্রোহের প্রেক্ষাপট একদিকে ইসলামের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ইতিহাসকে গভীর করে তুলেছে, অন্যদিকে খেলাফতের স্থিতিশীলতা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জকে স্পষ্ট করেছে।
উমাইয়াহ খেলাফতের সময়, বিশেষত আবদুল মালিক ইবন মারওয়ানের শাসনামলে (৬৫-৮৬ হিজরি), মুসলিমদের অভ্যন্তরীণ সংঘাত চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। এই সময়ের প্রধান ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি ছিল ইবনুল আশ’আসের বিদ্রোহ। এটি শুধু একটি সামরিক সংঘাত নয়; বরং এটি ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক বিভাজন এবং খেলাফতের বিরুদ্ধে সংগঠিত আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি।
বিদ্রোহের পটভূমি
আবদুল্লাহ ইবন যুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের পর মুসলিম উম্মাহ অভ্যন্তরীণ অশান্তিতে নিমজ্জিত হয়। ইরাকে খাওয়ারিজরা তাদের পুরোনো প্রথা অনুযায়ী আবার বিদ্রোহ শুরু করে। প্রথমদিকে হাজ্জাজ ইবন ইউসুফ তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। তবে যখন ইবনুল আশ’আসকে কাবুলে পাঠানো হয় স্থানীয় শাসক রুতবিলকে তার শাসন এবং জিজিয়া পরিশোধের দায়িত্ব পালনে বাধ্য করতে, তখন ইবনুল আশ’আস তার মিশনে ব্যর্থ হয়। এরপর ফিরে এসে সে বসরা ও কুফায় আক্রমণ চালায় এবং খাওয়ারিজ ও অন্যান্য কিছু দলের সমর্থন নিয়ে সেখানকার জনগণকে তার প্রতি বাইআতবদ্ধ হতে বাধ্য করে।
দায়রুল জামাজিমের যুদ্ধ
৮৩ হিজরিতে হাজ্জাজ এবং ইবনুল আশ’আসের বাহিনী দায়রুল জামাজিম নামক স্থানে মুখোমুখি হয়। প্রায় একশ দিন ধরে চলা এই যুদ্ধ উমাইয়াহ খেলাফতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে আছে। হাজ্জাজের দৃঢ় নেতৃত্বে উমাইয়াহ বাহিনী বিজয় অর্জন করে, আর ইবনুল আশ’আস পরাজিত হয়ে কাবুলে পালিয়ে যায়।
বিদ্রোহের সমাপ্তি
কাবুলে পালিয়ে গিয়ে ইবনুল আশ’আস রুতবিলের আশ্রয়ে যায়। কিন্তু হাজ্জাজের কূটনৈতিক তৎপরতা এবং তার শক্তির খ্যাতি রুতবিলকে বাধ্য করে ইবনুল আশ’আসকে হত্যা করতে। রুতবিল ইবনুল আশ’আসের মাথা হাজ্জাজের কাছে প্রেরণ করে, যার মাধ্যমে এই বিদ্রোহের অবসান ঘটে।
প্রভাব ও শিক্ষা
ইবনুল আশ’আসের বিদ্রোহ ইসলামের ইতিহাসে কেবল একটি সামরিক সংঘাত নয়; এটি ছিল খলিফার কর্তৃত্ব এবং ইসলামের স্থিতিশীলতা রক্ষার এক চ্যালেঞ্জ। খেলাফতের অভ্যন্তরীণ বিভাজন কীভাবে বহিরাগত বিদ্রোহকে উৎসাহিত করতে পারে, তার একটি স্পষ্ট উদাহরণ এই বিদ্রোহ।
এই ঘটনাটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ঐক্য এবং নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য ইসলামের স্থায়িত্বের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসের এই অধ্যায় থেকে আমরা আজকের সময়েও অনেক শিক্ষা নিতে পারি।