টিটিপি ইস্যুতে পাকিস্তানের ব্যর্থতা; আফগানিস্তানকে দোষারোপ করা কি তাদের রাজনৈতিক স্বভাবে পরিণত হয়েছে?

✍🏻 আবদান সাফী

জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রতিনিধি উসমান জাদুন আবারও তার দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতার দায়ভার আফগানিস্তানের উপর চাপানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, ইসলামী ইমারাত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-কে সুযোগ-সুবিধা ও আধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করছে। তার ভাষ্যমতে, বর্তমানে ৬,০০০ টিটিপি সদস্য আফগানিস্তানে অবস্থান করছে।

পাকিস্তানের সরকার ও তাদের মন্ত্রীরা নিয়মিত এমন এমন ভিত্তিহীন বক্তব্য দিয়ে থাকেন, যা তাদের অভ্যন্তরীণ সংকটগুলো থেকে জনগণের দৃষ্টি সরানোর একটি কৌশল বৈ আর কিছু নয়।

আফগানিস্তান একটি স্বাধিকারসম্পন্ন রাষ্ট্র, যা সবসময় অন্য দেশগুলোর সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে এবং তার ভূখণ্ডকে কোনো তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেয় না। পাকিস্তান টিটিপির আফগানিস্তানে উপস্থিতির দাবি করলেও এখন পর্যন্ত তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাস্তবতা হলো, টিটিপি আফগানিস্তানে নয়, বরং পাকিস্তানের অভ্যন্তরেই সক্রিয় এবং সেখান থেকেই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

টিটিপির পুরো নেতৃত্ব ওয়ারজিস্তান থেকে সোয়াত পর্যন্ত তাদের শক্ত ঘাঁটিতে অবস্থান করছে। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের বেশ কয়েকজন কমান্ডার পাকিস্তানের বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিজ নিজ এলাকায় শহীদ হয়েছেন।

পাকিস্তানের প্রতিনিধি যে দাবি করেছেন, আফগান সরকার টিটিপিকে আধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করেছে, সেটি পুরোপুরি ভিত্তিহীন। আধুনিক আমেরিকান অস্ত্র আজকাল বিশ্বের কালোবাজারে সহজলভ্য, এবং যে কেউ সেগুলো সংগ্রহ করতে পারে।

এমনকি এই অস্ত্রগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ করাচি বন্দরে আমদানি হওয়া মার্কিন কন্টেইনার থেকে চুরি করা হয় এবং পাকিস্তানের সামরিক জেনারেলদের সহায়তায় কালোবাজারে বিক্রি করা হয়।

পাকিস্তানের উচিত তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতার জন্য আফগানিস্তানকে দায়ী করা থেকে বিরত থাকা। টিটিপি তাদের নিজস্ব সমস্যা, যা তাদের ভুল নীতিমালার ফল। আফগানিস্তানকে দোষারোপ করার পরিবর্তে পাকিস্তানের উচিত নিজেদের দায়-দায়িত্বের মুখোমুখি হওয়া।

আপনারা আফগানিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অন্যান্য সমস্যার দিক নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু ওয়াজিরিস্তান থেকে বেলুচিস্তান পর্যন্ত নিজের দেশে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যায়গুলো আপনাদের চোখে পড়ে না। নিজেদের আচরণ পর্যালোচনা করুন। আমরা যদি আর কিছু বলি, সেটি হয়তো অভিযোগ হিসেবে ধরা হবে।

Exit mobile version