ফুআদ আমিরী
একটি গোষ্ঠীতে অনুপ্রবেশ করা ও প্রভাব অর্জন করা প্রায়শই শারীরিক উপস্থিতির চেয়ে বেশি শক্তিশালী এবং এই সমস্যাটি সমস্ত যুদ্ধে ভালভাবে প্রদর্শিত হয়েছে। মুনাফিকদের দু’টি দল হযরত আলীর বাহিনীতে প্রবেশ করেছিল:
১. রাওয়াফিজ: আব্দুল্লাহ বিন সাবা ইয়াহুদীর নেতৃত্বে
২. খাওয়ারিজ: আবদুল্লাহ ইবনু ওয়াহহাব রাসবির নেতৃত্বে
তারা হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহুর সেনাবাহিনীর সীমিত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিল, যারা হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহুর সেনাবাহিনীতে আত্মগোপন করে ছিল।
খাওয়ারিজরা মূলত হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহুর বাহিনীতে মুসলিম, বিশ্বস্ত ও অনুগত লোকদের মধ্য হতে ছিল, কিন্তু মুনাফিক গোষ্ঠীর প্রভাব এবং তাদের প্রতারণা ও প্ররোচনার কারণে তারা দলে দলে বিভক্ত হয়ে ইসলামী খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে।
হযরত ইবনু আব্বাস রদিয়াল্লাহু আনহু খাওয়ারিজদেরকে কুরআন ও সুন্নাহ থেকে যুক্তির ভিত্তিতে একমত হতে বলার পর একটি দল সত্যকে মেনে নিয়ে বিদ্রোহ ত্যাগ করে, অপরদিকে আবদুল্লাহ ইবনু ওয়াহহাব রাসবির নেতৃত্বে দ্বিতীয় দলটি আরও হিংস্র হয়ে ওঠে এবং দিন দিন বিদ্রোহের পরিধি বৃদ্ধি করতে থাকে।
যেহেতু হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহুহু সিফ্ফিনের যুদ্ধে ‘ভাই-ভাইকে হত্যা’র অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন, তাই তিনি চাননি যে একজন মুসলিমের রক্ত অন্য মুসলিমের দ্বারা প্রবাহিত হোক, এজন্য তিনি সম্ভাব্য সব উপায়ে পুনর্মিলনের চেষ্টা করেছিলেন।
তিনি হযরত আবু আইয়ুব আনসারী এবং তারপর হযরত হারব ইবনু মারাহ আল আবদি রদিয়াল্লাহু আনহুমাকে আলোচনার জন্য পাঠান, কিন্তু সেসব লোকেরা তাদের কথা আমলে না নিয়ে অহংকারের এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, তাদের বর্বর কর্মকাণ্ডে হযরত হারব ইবনু মারাহ রদিয়াল্লাহু আনহু শহীদ হন। আর হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু যখন সিরিয়া যাওয়ার পথে, তখন খাওয়ারিজরা আবদুল্লাহ ইবনু খাব্বাব ইবনু আরাত রদিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁর গর্ভবতী স্ত্রীকেও শহীদ করে ফেলে।
হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু তাদের তাকফিরি আকিদা প্রত্যাখ্যান করেন এবং শেষ পর্যন্ত বিষয়টা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। তাদের নির্মূল করার জন্য বিশাল বাহিনী গড়ে তোলেন, যার ফলস্বরূপ নাহরাওয়ানে দুই পক্ষের মাঝে যুদ্ধ হয়।
এই যুদ্ধে হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহুর সেনাবাহিনীতে প্রায় ৬৮ হাজার সঙ্গী ছিলেন। বিশেষ এক কৌশলের মাধ্যমে খাওয়ারিজদের ধ্বংস করা হয়েছিল সেই যুদ্ধে, যার মধ্যে খুব কমই বেঁচে ছিল যারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। অন্যদিকে হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহুর সেনাবাহিনীর মাত্র ৭ জন আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হন।