পাকিস্তান— সহিংস এবং অস্থিতিশীল দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হিসেবে বিশ্ব দরবারে চিহ্নিত। তবে সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা পরিস্থিতিকে আরও গভীর করেছে। দেশের প্রতিটি কোণ থেকে নিরাপত্তাহীনতার খবর এখন জনগণের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি এমন এক জায়গায় পৌঁছেছে যে, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিবর্তে সেনাবাহিনী এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলি নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত।
প্রথামতো, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ সচেতনভাবে বর্তমান অস্থিতিশীলতাকে, বিশেষত কুররম এজেন্সির সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কিত করার চেষ্টা করছে। এভাবে তারা নিজেদের ব্যর্থ নীতির ফলাফল থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে চায়।
গত চার দশকে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ সাম্প্রদায়িক বিভিন্ন গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেছে এবং তা কৌশলগত লাভের জন্য ব্যবহার করেছে। তারা এসব গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ এড়িয়েছে, কারণ তারা ভবিষ্যতে এই গোষ্ঠীগুলিকে নিজেদের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চেয়েছিল।
প্রথম দিকে এই গোষ্ঠীগুলি প্রধানত পাকিস্তানের বড় বড় শহর ও পাঞ্জাবে প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে সময়ের সাথে সাথে তাদের প্রভাব দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আজও পর্যন্ত এই গোষ্ঠীগুলো সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার ছত্রচ্ছায়ায় নানা রূপে সক্রিয়।
সম্প্রতি সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় সাম্প্রদায়িক উপাদানগুলিকে আবারও রসদ দেয়া হয়েছে, যাতে তাদের সহিংসতার মাধ্যমে সেনাবাহিনী তার ব্যর্থতাগুলোর পেছনে পর্দা টানতে পারে। অন্যথায় এটা কীভাবে সম্ভব যে, কোনো প্রক্সি গোষ্ঠী তাদের নিজস্ব পতাকা উঁচিয়ে ঘর-বাড়ি, গ্রাম, বাজার জ্বালিয়ে দিতে পারে, মানুষ হত্যা করতে পারে, সামরিক ঘাঁটি দখল করতে পারে এবং সেনাবাহিনী নিঃশব্দ দর্শকের মতো তাকিয়ে থাকবে?
এধরনের পদক্ষেপ স্পষ্টভাবে সেনাবাহিনীর জড়িত থাকার ইঙ্গিত দেয়, কখনো এক গোষ্ঠীর পক্ষে কাজ করে, আবার কখনো অন্য গোষ্ঠীকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়।
এখন প্রশ্ন উঠছে, ইসলামাবাদে চারজন নিরাপত্তা কর্মীর হত্যাকে যখন জরুরি অবস্থার ঘোষণা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট মনে করা হয়, তখন কুররম এজেন্সিতে এক সপ্তাহে ২০০-এর বেশি মানুষ নিহত হলেও কেন তার দিকে কোনো দৃষ্টি দেওয়া হয় না? এই নীরবতা সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার নীতি এবং উদ্দেশ্যগুলোকে উন্মোচন করে।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিবর্তে, সমস্ত মনোযোগ দিয়েছে দেশীয় রাজনৈতিক কৌশল কাজে লাগাতে। তারা রাজনৈতিক দলগুলিকে দুর্বল করে, নির্দিষ্ট সরকার প্রতিষ্ঠা করে এবং জনগণের মনোভাব নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে, কিন্তু জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা মাত্র কিছু প্রতীকী পদক্ষেপ নেয় বা প্রতিবেশী দেশগুলিকে দোষারোপ করে।
অন্যদিকে, আফগানিস্তান ইসলামী ইমারাত সম্প্রতি প্রমাণ করেছে যে, তারা দেশের অভ্যন্তরীণ ধর্মীয় সমস্যাগুলির সমাধানে যথেষ্ট প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তারা বারবার ঘোষণা করেছে যে, তারা মুসলিম উম্মাহর ঐক্যে বিশ্বাসী এবং সকল মুসলিমকে আফগান সমাজের অংশ হিসেবে গণ্য করে।
এটি সত্য যে, পাকিস্তান চেষ্টা করছে তার প্রক্সি গোষ্ঠী আইএসআইএসের মাধ্যমে আফগানিস্তানের শিয়া সংখ্যালঘু, বিশেষত হাজারা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালাতে। তবে ইসলামী ইমারাত তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে এসব অশুভ উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।
পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অভিযোগ যে ইসলামী ইমারাত পাকিস্তানে ধর্মীয় সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে— এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বাস্তবতা থেকে দূরে। ইসলামী ইমারাত বর্তমানে ধর্মীয় বিভেদ দূর করতে এবং মুসলিম সমাজে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
পাকিস্তানকে অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার পরিবর্তে তার নিজের ব্যর্থ নীতিগুলি থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত এবং ইসলামী ইমারাতের সফল পদক্ষেপ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।
পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের নীতি, সেগুলি অভ্যন্তরীণ হোক বা বৈদেশিক, বারবার দেশের অস্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছে। তাদের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে সম্পর্ক এবং অস্বচ্ছ নীতিগুলি দেশের জন্য বহু সমস্যার জন্ম দিচ্ছে।