পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ পতন ও দুর্বল পররাষ্ট্রনীতি!

✍🏻 খুশহাল

ইসলামি ইমারাত আফগানিস্তানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ কাবুলে তার সাম্প্রতিক সংবাদ সম্মেলনের সময় প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানের বর্তমান ব্যবস্থার ব্যাপারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, যা পাকিস্তানি জনগণের মধ্যে গভীর বিভেদ ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু যেহেতু সেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেবল নামেই আছে এবং সরকারী নীতি ও ব্যর্থতার সমালোচনা করলে তার ফল হয় ‘মাথার দাম’, তাই কেউ এই তিক্ত বাস্তবতাগুলো বলার সাহস করে না।

সম্ভবত পাকিস্তানের তথাকথিত বেসামরিক সরকার এবং সামরিক কর্মকর্তারাও বুঝতে পেরেছে যে তাদের গোপন ষড়যন্ত্র এবং আর্থিক সম্পদের অবৈধ উৎসগুলো আর লুকানো যাবে না, পররাষ্ট্রনীতির আবরণও তাদের আড়াল করতে পারবে না এবং আফগানিস্তানের বর্তমান ব্যবস্থার সমালোচনা বা ডুরান্ড সীমান্তের ওপারে আক্রমণ করেও এই সমস্যাগুলি দমন করা যাবে না।

মুজাহিদ সাহেব স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, পাকিস্তানের সাধারণ নাগরিক এবং সরকারের কিছু বেসামরিক সমর্থক কর্মকর্তা কখনোই আফগানিস্তানের ক্ষতি চান না, কিন্তু সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী দল তাদের ব্যক্তিগত লক্ষ্য ও স্বার্থের জন্য পাকিস্তানের নামকে বদনাম ও বলি দিতে চায়। এসব বাস্তবতার ছাপ এখন আর কারো কাছে গোপন নেই, বিশেষ করে কাল্পনিক লাইনের (ডুরান্ড লাইন) আশেপাশে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর পাল্টা এবং প্রতিরক্ষামূলক আক্রমণের ফলে সেনাবাহিনীর দুষ্ট প্রকৃতি আরও উন্মোচিত হয়েছে।

আসিম মুনিরের স্বৈরাচার
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রধান আসিম মুনির, যে নিজের জন্য ক্বারী, হাফেয এবং তথাকথিত সাইয়্যিদ মিথ্যা উপাধিও গ্রহণ করেছে, তার নির্দিষ্ট সামরিক সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তানকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। সে তার জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও ইচ্ছা, প্রতিবেশীত্বের নীতি এবং তাদের মতে একটি গণতান্ত্রিক সরকার ও গণতন্ত্রের জন্য তৈরি করা সমস্ত বিধি-বিধান ভুলে গেছে।

মুনিরের সামরিক ও গোয়েন্দা দল দেশের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফকেও নিজেদের কব্জায় নিয়েছে এবং জোর করে আসিমকে খ্যাতি দেওয়ার জন্য ভারত থেকে হারা যুদ্ধে ফিল্ড মার্শালের খেতাবও এনে দিয়েছে, যা হাস্যকর। এছাড়াও, আমেরিকায় লবিং এবং তারপর মিশরের সম্মেলনে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর তোষামোদ করার ধরন জনসাধারণের মনে পাকিস্তানকে আরও বিচ্ছিন্ন ও কলঙ্কিত করেছে।

জনগণের অসন্তোষ
এই মুহূর্তে পাকিস্তানে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। আফগান ভূখণ্ড এবং সাধারণ নাগরিকদের উপর পাকিস্তানি দুষ্ট সেনাবাহিনীর হামলার নিন্দা করা হয়েছে এবং বারবার দাবি করা হয়েছে যে, তারা যেন আফগানিস্তানের সাথে ঝগড়া থেকে সরে এসে তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলির সমাধান করে। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এই দাবিকে পদদলিত করেছে এবং জনগণের কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। আফগান বাহিনীর পাল্টা এবং প্রতিরক্ষামূলক হামলায় নিহত সৈন্যদের লাশ এবং ধ্বংসযজ্ঞের বিষয়েও তারা কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারছে না।

আইএসআইএসের পরিকল্পনা
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, যারা সর্বদা গোষ্ঠীর প্রশিক্ষণ ও সুরক্ষার মাধ্যমে তাদের কৌশলগত লক্ষ্য পূরণ করে, তারা এখন আবারও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখে ধুলো দিচ্ছে এবং ওরকজাই ও অন্যান্য অঞ্চলে আইএসআইএসের খারিজিদের আশ্রয় দিচ্ছে। তারা মনে করে যে তারা আবারও আন্তর্জাতিক স্তরে লেনদেন করবে এবং তাদের হাতে প্রশিক্ষিত খারিজিদেরকে বিশ্বব্যাপী বিপদ হিসাবে উপস্থাপন করবে। এমনকি অনেকবার এই দাবিও করা হয় যে এই খারিজিরা আফগানিস্তান থেকে আসছে, যদিও আফগানিস্তানে আইএসআইএসের খারিজিসহ কোনো বিদেশী গোয়েন্দা গোষ্ঠীর পা রাখার জায়গা নেই। বরং এটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীই যারা এই ধরনের বিপজ্জনক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।

টিটিপির বিরুদ্ধে অসহায়ত্ব
এটি একটি বাস্তবতা যে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) বর্তমানে পাকিস্তানি সামরিক সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা হয়ে উঠেছে এবং এর অস্তিত্বের কারণ পাখতুনখোয়া এবং উপজাতীয় অঞ্চলে সেনাবাহিনীর নজিরবিহীন অত্যাচার ও অবিচার থেকে জন্ম নেয়। টিটিপির যোদ্ধারা উপজাতীয় অঞ্চলে প্রকাশ্যে কার্যকলাপ চালাচ্ছে, প্রতিদিন সামরিক কেন্দ্র এবং লক্ষ্যবস্তুতে সফল আক্রমণ করছে, এমনকি অন্যান্য পাকিস্তানি মিলিশিয়া তাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষমতা রাখে না এবং একরকমভাবে তাদের সামরিক ক্ষমতা আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সামনে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এই কারণেই বারবার এই অজুহাত দেওয়া হয় যে টিটিপি আফগানিস্তান থেকে তাদের উপর আক্রমণ করছে এবং সেখানে ইসলামি ইমারাতের সমর্থন পাচ্ছে। কিন্তু পাকিস্তান এখন পর্যন্ত এর কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দিতে পারেনি। তাদের উচিত তাদের অসহায়ত্ব স্বীকার করা এবং টিটিপিকে আফগানিস্তানের বাইরে একটি স্থানীয় বাস্তবতা হিসাবে গ্রহণ করা।

মাদকদ্রব্য ও অবৈধ ব্যবসা
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দুষ্ট ও শক্তিশালী গোষ্ঠী তাদের নিজস্ব ব্যবসাও চালায়। তারা প্রায়শই ইউরোপীয় দেশ এবং আমেরিকার নাগরিকত্বও অর্জন করেছে যাতে কঠিন সময় বা অবসর গ্রহণের পরে সেখানে গিয়ে থাকতে পারে। খারিজি গোষ্ঠীগুলির সুরক্ষা এবং প্রশিক্ষণের পাশাপাশি, তারা তাদের জমিতে মাদকদ্রব্য, চোরাচালান এবং অপহরণের একটি জালও ছড়িয়ে রেখেছে, যেখান থেকে তারা লক্ষ লক্ষ ডলার উপার্জন করে এবং তারপর কালো টাকা হিসাবে তাদের ব্যবসায় বিনিয়োগ করে।

উপরোক্ত সমস্যাগুলির পরিপ্রেক্ষিতে এটা সম্ভব নয় যে এই সামরিক গোষ্ঠী বর্তমান বিশ্বব্যাপী বৈধ রাজনীতি এবং পদ্ধতিতে প্রতিবেশীদের সাথে নীতিগত সম্পর্ক রাখতে পারবে। তারা আলোচনার এবং রাজনীতির ভাষাও বোঝে না, এবং তাদের দেশকে অঞ্চল এবং বিশ্ব পর্যায়ে একটি নির্ভরযোগ্য দেশ হিসাবেও প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। পাকিস্তানের এই ধরনের রাজনীতির বৈধতা দিনের পর দিন প্রশ্নের মুখে পড়ছে।

দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক বিরোধ স্পষ্ট করেছে যে আফগানিস্তানকে সামরিক শক্তি বা হুমকির ভাষা দিয়ে বশীভূত করা যাবে না। শক্তির জবাব শক্তি দিয়ে দেওয়া হবে এবং ইসলামি ইমারাত এমন জনসমর্থন এবং বৈধতা অর্জন করেছে যে, প্রতিটি নাগরিক স্বেচ্ছায় এই সংগ্রামে অংশ নেয় এবং তাদের প্রতি ইঞ্চি জমি এবং স্বদেশীদের রক্ষা করে।

আফগানিস্তান ভালো প্রতিবেশী হিসেবে পাকিস্তানের বৈধতা ও মর্যাদার বিষয়টি উত্থাপন করে এবং সর্বদা এই প্রস্তাব দিয়েছে যে প্রতারণা এবং হুমকির যুগ শেষ হয়ে গেছে। আফগানদের কাছে একটি শক্তিশালী এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ব্যবস্থা রয়েছে এবং তারা প্রথমবারের মতো এমন একটি নীতির সাথে এগিয়ে চলেছে যা কোনো মূল্যেই তাদের অগ্রাধিকারগুলিকে বিসর্জন দেয় না।

উত্তম হবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এই নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কর্তাব্যক্তিরা তাদের দেশকে আর কলঙ্কিত না করে এবং তাদের জনগণের জন্য প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক দেশগুলির শত্রুতাকে ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার হিসাবে না রাখে। বরং ভালো হবে যে তারা তাদের মর্যাদা এবং বিশ্ব ভূগোলে তাদের ভবিষ্যতের অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তা করে। এছাড়াও, তাদের সেনাবাহিনীকে সত্যিকারের জাতীয় সেনাবাহিনীতে পরিণত করুক, জনগণ এবং ভূমিকে রক্ষা করুক, এবং এটিকে বিশ্ব পর্যায়ে ভাড়াটে খুনি বা একচেটিয়া অধিকার ভোগকারী হিসাবে উপস্থাপন না করুক। অন্যথায় ভারত এবং বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অতীতের অভিজ্ঞতা আবারও পুনরাবৃত্তি হতে পারে।

Exit mobile version