দাঈশের কয়েকজন কুখ্যাত কমান্ডার ও সদস্যের সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড পুনরায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর লুকায়িত মুখাবয়ব উন্মোচিত করেছে। এসব ঘটনা স্পষ্ট করে দিয়েছে পাকিস্তান কেবল দাঈশবিরোধী যুদ্ধে অকৃত্রিম নয়, বরং এই গোষ্ঠীর জন্য এক নিরাপদ আশ্রয়স্থল এবং প্রকৃত সহযোগীতে পরিণত হয়েছে।
এমন এক সময়ে, যখন আফগানিস্তানে ইসলামী ইমারাতের নিরাপত্তা বাহিনী দাঈশকে সম্পূর্ণভাবে নিঃশেষ করে দিয়েছে এবং তাদের অধিকাংশ নেতা নিহত হয়েছে; বিভিন্ন প্রতিবেদন ইঙ্গিত করছে যে গোষ্ঠীটির অবশিষ্ট সদস্যরা এখন পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছে। তারা ওয়াজিরিস্তান, বেলুচিস্তানসহ দেশের আরও নানা অঞ্চলে নিরাপদ ঘাঁটি বানিয়ে নিজেদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে এবং এমনকি আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সহিংস অভিযানের পরিকল্পনাও করছে।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে দাঈশের মতো নৃশংস গোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে দ্বিমুখী নীতি অনুসরণ করে আসছে। একদিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের সন্ত্রাসবাদবিরোধী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচয় করায়, অন্যদিকে কার্যক্ষেত্রে এদের কর্মকাণ্ডের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং তাদের সদস্যদের আশ্রয় দেয়। বহু গোয়েন্দা ও ক্ষেত্রসমীক্ষা প্রতিবেদনে প্রতীয়মান যে দাঈশের জন্য অর্থায়ন, অস্ত্র সহযোগিতা এবং গোয়েন্দা সহায়তা পাকিস্তানের ভূখণ্ডেই সম্পন্ন হয়, অথচ রাষ্ট্রের সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ এ ব্যাপারে চোখ বুজে থাকে।
ইসলামাবাদ এই প্রতারণামূলক কৌশলের মাধ্যমে দাঈশকে রাজনৈতিক স্বার্থে, বিশেষত আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু এই বিপজ্জনক খেলা অগ্নিশিখার সঙ্গে বন্ধুত্ব করার সামিল, যা শিগগিরই কিংবা পরে পাকিস্তানকেও গ্রাস করবে। অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে—দাঈশকে আশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে কোনো রাষ্ট্র নিরাপদ থাকতে পারে না। যে গোষ্ঠী আজ অন্যের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে, আগামীকাল সে-ই তার পৃষ্ঠপোষককে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে।
অপরদিকে, ইসলামী ইমারাত আফগানিস্তান দৃঢ় ও প্রজ্ঞাময় অবস্থানের ফলে দাঈশের শেকড় নিজেদের ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ উপড়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। ইমারাতের নিরাপত্তা বাহিনী সারাদেশ জুড়ে সুনির্দিষ্ট ও লক্ষ্যভেদী অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে এ গোষ্ঠীর কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করে সাফল্য অর্জন করেছে। এই সফল অভিজ্ঞতা পাকিস্তান ও অঞ্চলটির অন্যান্য রাষ্ট্রের জন্যও একটি বাস্তবসম্মত মডেল হতে পারে।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অনুধাবন করা উচিত—দাঈশকে সহযোগিতা ও সুরক্ষা প্রদান অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা এবং আঞ্চলিক অবিশ্বাস ছাড়া আর কিছুই বয়ে আনবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও স্বীকার করা প্রয়োজন—দাঈশের কার্যক্রমের উৎস আফগানিস্তানে নয়; বরং পাকিস্তানের ভূমিতেই এর মূল নিহিত।
যদি ইসলামাবাদ সত্যিই শান্তি ও স্থিতিশীলতা কামনা করে, তবে তাদের জন্য আবশ্যক দ্বিমুখী নীতি ত্যাগ করে আঞ্চলিক রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে মিলিত হয়ে দাঈশের পূর্ণ বিনাশ সাধনে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। দাঈশকে সমর্থন করা মানে সেই অগ্নিকুণ্ডের জ্বালানি সংরক্ষণ করা, যার শিখা দেরি বা শিগগির পাকিস্তানের অভ্যন্তরেও পৌঁছে যাবে।




















