উমার ইবন আবদুল আযীয (আল্লাহ তাঁর ওপর রহম করুন), যাকে উমাইয়া খিলাফতের একজন সৎ ও ন্যায়পরায়ণ খলিফা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি তাঁর সমস্ত প্রচেষ্টা এবং মনোযোগ ন্যায়বিচার, ইসলামের প্রকৃত নীতি বাস্তবায়ন আর উম্মাহকে সব ধরনের দুঃখ-দুর্দশা থেকে রক্ষা করার দিকে নিবদ্ধ করেছিলেন। তিনি মুসলিমদের মধ্যে ঐক্যের জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। এমনকি খারিজীদের ক্ষেত্রেও তিনি নরম নীতি গ্রহণ করেছিলেন।
শুরাত ছিল খাওয়ারিজদের একটি গোত্র, যারা উমার ইবন আবদুল আযীয রহ.–এর খিলাফতকালে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্রোহ করেছিল। এই লোকেরা সিজিস্তান (বর্তমান সিস্তান), হেরাত ও খোরাসানের কিছু এলাকায় বসবাস করতো। তারা উম্মাতে মুহাম্মাদিকে (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাফের মনে করতো।
তারা হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ঘৃণা করতো, কিন্তু তারা ছিল হযরত আবু বকর এবং হযরত উমার ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহুমার মহান প্রেমিক ও চরম ভক্ত।
শুরাত খাওয়ারিজরা মাহরামদেরক (যাদের সাথে বিয়ে হারাম এবং ফুকাহাগণের মতে পর্দার বিধান প্রযোজ্য নয়) হালাল মনে করতো। তারা এব্যাপারে কুরআনের আয়াত থেকে দলিলও পেশ করতো। তারা সুন্নাহ পালনে ছিল একেবারেই অমনোযোগী। তারা ছিল অত্যন্ত বাজে এবং কর্কশ ভাষার অধিকারী।
একদিন তাদের প্রধান গিলানকে উমার ইবন আবদুল আযীয রহ.–এর সামনে হাজির করা হলে তার সাথে ইসলামী আকিদা এবং শরীয়াহ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
উমার ইবন আবদুল আযীয রহ. যখন সকল বিষয়ে তাকে বাতিল প্রমাণ করেন, তখন সে অত্যন্ত ধূর্ততার সাথে বলে— হে আমীরুল মুমিনীন! আমি পথভ্রষ্ট হয়ে এখানে এসেছিলাম, কিন্তু আপনি আমাকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। আমি অন্ধ ছিলাম, আপনি আমার চোখ খুলে দিয়েছেন। আমি অজ্ঞ ছিলাম, আপনি আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। আল্লাহর কসম! আমি আজকের পর থেকে আর কখনো তাকদীরের ব্যাপারে কোনো কথা বলবো না।
উমার ইবন আবদুল আযীয রহ. গিলানের ধৃষ্টতা ও চতুরতা উপলব্ধি করতে পেরে তাকে কঠোর ভাষায় সতর্ক করে বলেন যে, তুমি তাকদীরের ব্যাপারে মুখ খুলেছো মর্মে যদি আমি আবারও তথ্য পাই, তাহলে আল্লাহর কসম সেই মুহূর্তেই তোমাকে কঠোর শাস্তি দেব।
এরপরে উমার ইবন আবদুল আযীয রহ.–এর ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত গিলান নীরব ছিল, কিন্তু যখনই সে আমীরুল মুমিনীন উমার ইবন আবদুল আযীয রহ.–এর ওয়াফাতের খবর শুনল, আবারও তাকদীর নিয়ে উল্টোপাল্টা বকাবকি শুরু করল।