ট্রাম্প: ঘূর্ণিঝড় আর তপ্ত লাভার মধ্যস্থানে

✍🏻 আহমাদ মানসূর

#image_title

ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেছে এমন এক সময়ে যখন যুক্তরাষ্ট্র উল্লেখযোগ্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। এবার বিশ্বের নয় বরং আমেরিকার উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত এজন্য যে— আমরা কী করতে যাচ্ছি? যেহেতু তারা প্রাচ্যের সাথে প্রকৃত প্রতিযোগিতায় জড়িত।

বিশদ আলোচনায় ঢোকার আগে সাম্প্রতিক মার্কিন নির্বাচন পর্যালোচনা করা যাক। এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, বিশ্বে জনপ্রিয় নির্বাচনগুলি কেবল লোক দেখানোর জন্য অনুষ্ঠিত হয়। উন্নত সকল দেশ গণতন্ত্রের প্রতি তাদের নিবেদন প্রদর্শনের জন্য গণমাধ্যম ও মাঠপর্যায়ের কার্যক্রমকে গুরুত্ব সহকারে নেয় এটা দেখাতে যে, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং জনগণের পছন্দের সরকার ব্যবস্থাকেই প্রয়োগ করা হয়েছে।

যদিও প্রেসিডেন্ট আগ থেকেই নির্বাচিত থাকে, কিন্তু জনগণের চোখে ধুলো দেয়ার জন্যই শুধুমাত্র এসব পদক্ষেপ নেয়া হয়। সাম্প্রতিক মার্কিন নির্বাচন প্রমাণ করেছে যে, যারা নিজেদেরকে নারীবাদের উস্তাদ দাবি করে এবং পুরুষ ও নারীর মধ্যে সমতার জিগির তোলে খোদ তাদের কর্মকাণ্ডেই নারীর প্রতি বৈষম্য ফুটে উঠেছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে প্রার্থী কামালা হ্যারিস কেন বিজয়ী হলো না? যেহেতু অতীত ইতিহাস জুড়ে পুরুষ প্রেসিডেন্টদের আধিপত্য ছিল, তাই এখন একজন মহিলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া উচিত ছিল। বেশিরভাগ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শাসনে নারীরা যোগ্য নয়। অর্থাৎ নারীদের সেই অবস্থান সম্পর্কে তারা বিশ্বাসী নয় যা তারা মিডিয়ায় সময়ে সময়ে বিবৃতির মাধ্যমে প্রচার করে।

আচ্ছা, এবার প্রসঙ্গে আসি। কীভাবে ঘূর্ণিঝড় আর তপ্ত লাভার মধ্যস্থানে আটকে গিয়েছে ট্রাম্প? নির্বাচনে জয়ের আগে এবং পরে ট্রাম্প এমন বিবৃতি দিয়েছে যে, পদক্ষেপ এবং নীরবতা উভয়টির জন্যই তাকে চরম মূল্য দিতে হবে। যেমন ফিলিস্তিন, লেবানন ও ইউক্রেনের যুদ্ধের অবসান এবং বাগরাম পুনর্দখল।

ট্রাম্প যদি মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের অবসান ঘটাতে চেষ্টা করে তাহলে এটা স্পষ্ট যে, সেখানে বল প্রয়োগে অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। তাই সে শান্তিপূর্ণ উপায়ে যুদ্ধ শেষ করার চেষ্টা করছে। এটা খুব কঠিন হবে কারণ হামাস তার দাবি ছাড়তে প্রস্তুত নয়, একইভাবে নেতানিয়াহুও হামাসের দাবি মেনে নেয়াকে নিজের পরাজয় বলে মনে করবে।

অন্যদিকে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার ইস্যুটি ফিলিস্তিন ইস্যু থেকে কোনো অংশে কম নয়। রাশিয়া কোনো অর্থেই ইউক্রেন থেকে সরে আসতে প্রস্তুত নয়, কারণ রাশিয়া ইউক্রেন থেকে সরে গেলে সেই অঞ্চলে তার প্রভাব শেষ হয়ে যাবে। আবার ইউক্রেনও তার প্রতিরক্ষা মর্যাদা হারাতে চাইবে না। তবে হ্যাঁ, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যকার যুদ্ধ বন্ধ করার একটি উপায় আছে, তা হলো যদি মার্কিন ইউক্রেনকে সমস্ত সহায়তা বন্ধ করে দেয়।

সংক্ষেপে উপরের সমস্যা দুটো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত জটিল, এর একটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যর্থ হলে অন্যটিতে ব্যর্থ হওয়া নিশ্চিত।

বাগরাম দখলের দাবি:
এই বিষয়টি পর্যালোচনা করার আগে একটা বিষয় আমাদের লক্ষ্য করতে হবে, তা হলো ইসলামী ইমারাত সামরিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অতীতের তুলনায় আরও শক্তিশালী এবং সংগঠিতভাবে প্রবেশ করেছে। ইমারাত সমগ্র বিশ্বকে বুঝিয়েছে যে, উন্নয়ন ও সফলতা নির্ভর করে বিশ্বের সাথে ভালো সম্পর্ক এবং শক্তিশালী অর্থনৈতিক নীতির উপর। যাইহোক, ট্রাম্প তার প্রচারণার সময় যেসব দাবি ও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেগুলো বাস্তবায়ন করতে চাইলে তাকে অবশ্যই দু’টি প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হবে।

১. এটি হবে দোহা চুক্তি লঙ্ঘন, যা শুধু বিশ্বে আমেরিকার অবস্থানকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না বরং এই প্রক্রিয়া নিশ্চিত করবে যে আমেরিকা বিশ্বস্ত নয়।
২. এতে করে ট্রাম্প প্রাচ্য ব্লককে শক্তিশালী করবে।

আফগানিস্তানের গণতান্ত্রিক শরণার্থীরা বলছে যে, ট্রাম্প তার দাবি বাস্তবায়নের জন্য মাসে ৪০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য আটকে রাখতে পারে এবং যদি সে তা-ই করে, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখানেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ এই সাহায্য যদি আফগান জনগণের জন্য হয়, এবং যদি তা বন্ধ করা হয়, তাহলে আমেরিকার মানবাধিকার প্রদর্শন নিয়ে বিশ্বের যে সন্দেহ-সংশয় রয়েছে তা বৈধ প্রমাণিত হবে, পাশাপাশি আমেরিকার মানবিক ঘোষণাগুলিও যে নিছক প্রতীকী, সেটাও পরিষ্কার হয়ে যাবে।

এই পলাতকদের মতে, যদি উল্লিখিত সাহায্য তালেবানের কাছে যায়, তখন আমেরিকান সরকার তার নিজের জনগণের কাছ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হবে। কিন্তু বাস্তবে তারা উল্লিখিত সাহায্য বন্ধ করলে যেমনটা এই বিষয়ে বিরোধীরা ধারণা করে, ইসলামী ইমারাতের উপর তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না ইনশাআল্লাহ। হ্যাঁ, এই সিদ্ধান্তে আমেরিকা তার বিরোধী ব্লক বাড়াবে।

উপসংহারে ইসলামী ইমারাত অতীত থেকে অনেক কিছু শিখেছে, তার ভারসাম্যপূর্ণ নীতি, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং সংলাপের ক্ষমতা তার বিরোধীদের সকল কৌশলকে নস্যাৎ করেছে। উল্টো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার যুদ্ধনীতির কারণে নিজেকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। ট্রাম্প/ইউএসএ নিজেদেরকে ঘূর্ণিঝড় আর তপ্ত লাভার মধ্যস্থানে আবিষ্কার করেছে। এমন একটি দুর্দশা যা তাদের পতনের চূড়ান্ত পরিণতি হতে পারে।

Abu Jundab Abdullah
Exit mobile version